সাধারণ আপেক্ষিকতার ইতিহাস

testwiki থেকে
imported>AdibHossain999 কর্তৃক ১০:৪৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (ট্যাগ যোগ)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

টেমপ্লেট:Copyedit টেমপ্লেট:ভাঁজযোগ্য তালিকার সাথে পার্শ্বদণ্ডটেমপ্লেট:রুক্ষ অনুবাদ সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব হলো আলবার্ট আইনস্টাইন এর দেয়া একটি মহাকর্ষের সূত্র যা ১৯০৭ থেকে ১৯১৫ এর মধ্যে এসেছিল, যদিও এর বেশিরভাগ এসেছিল ১৯১৫ এ। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, বস্তুদ্বয়ের মধ্যকার মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বস্তুদ্বয় কর্তৃক স্থান ও কালের বিকৃতির জন্য হয়।

আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আসার পূর্বে ২০০ বছর ধরে নিউটনের সার্বজনীন মহাকর্ষ সূত্রকে বস্তুদের মধ্যকার মহাকর্ষীয় সূত্রের সঠিক বর্ণনা মেনে আসছিল, যদিও স্বয়ং নিউটনও তার সূত্রকে পরিপূর্ণ মেনে নেননি। নিউটনের সূত্র দেয়ার এক শতাব্দীর মধ্যে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে এই দেখা যায়, নিউটনের সূত্র ও ঐ পর্যবেক্ষণের মধ্যে ব্যাখ্যাতীত পার্থক্য রয়েছে। নিউটনের সূত্রানুযায়ী দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণের ফল হল মহাকর্ষ বল। কিন্তু নিউটনও এই বলের ধরন নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন। যা-ই হোক, পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ দেখায় যে আইনস্টাইনের বর্ণনাটি আসে এমন কিছু ঘটনা থেকে যা নিউটনের সূত্র দিয়ে বর্ণনা করা যায়না, যেমন মঙ্গল ও বিভিন্ন গ্রহের গতিপথে যে সময়ের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব মহাকর্ষের কারণে ঘটা বিভিন্ন ঘটনা ব্যাখ্যা করে, যেমন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, মহাকর্ষীয় লেন্সিং এবং সময়ের উপর মহাকর্ষের প্রভাব যাকে মহাকর্ষীয় সময় প্রসারণ বলে। এদের মধ্যে কিছু প্রমাণিত, আর কিছু নিয়ে পরীক্ষণ চলছে। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব জ্যোতির্বিদ্যাকে একটি অতীব প্রয়োজনীয় যন্ত্র দিয়েছে, যা তাদের কৃষ্ণবিবর, মহাশুন্যের এমন একটি স্থান যেখানে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এতটাই বেশি যে সেখান থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারেনা। এই শক্তিশালী মহাকর্ষের কারণ ভাবা হত বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তু (যেমন সক্রিয় ছায়াপথ নিউক্লেই অথবা মাইক্রোকোয়াসার) থেকে নিঃসৃত তীব্র বিকিরণ কে।এই তত্ত্ব বিগ ব্যাঙের কাঠামোরও অংশ।

সাধারন আপেক্ষিকতার সৃষ্টি

প্রাথমিক তদন্ত

আইনস্টাইন পরবর্তীতে বললেন, সাধারণ আপেক্ষিকতা সূত্র প্রদানের কারণ ছিল তার দেয়া বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এর নিষ্ক্রিয় বেগের পক্ষপাতিত্ব।[] তাই,১৯০৭ সালে পেটেন্ট অফিসে কাজ করার সময়েই আইনস্টাইন তার "পছন্দসই চিন্তা" টা পেয়ে যান। তিনি দেখলেন, বাস্তবতার নীতিকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রেও ব্যাখ্যা করা যাবে। কাজেই ১৯০৭ সালে তিনি বিশেষ আপেক্ষিকতায় ত্বরনের বিষয়ে একটি আর্টিকেল লিখেন।[] তিনি বললেন, মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর বেগ সত্যিই নিষ্ক্রিয়, এবং সেখানে বিশেষ আপেক্ষিকতার সূত্রগুলো খাটবে। সেই যুক্তিকে সমতুল্যতার নীতি বলা হয়। একই আর্টিকেলে তিনি মহাকর্ষীয় কাল প্রসারণ এর কথাও বলেন। ১৯১১ সালে তিনি তার এই আর্টিকেলের সাথে আরেকটু যোগ করে আরেকটি আর্টিকেল লিখেন।[] তিনি ভাবলেন, সমভাবে ত্বরিত একটি বক্স মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে নেই, এবং দেখলেন বক্সটি অপরিবর্তনীয় মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রেও একই থাকে। তিনি সেখানে তার বিশেষ আপেক্ষিকতা ব্যবহার করে দেখলেন বক্সটি ত্বরিত অবস্থায় থাকলে বক্সের উপরে বক্সের নিচ অপেক্ষা সময় দ্রুত যাচ্ছে। তিনি বললেন কাল, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে বস্তুর অবস্থাননির্ভর হয়, এবং কালের পার্থক্য প্রথম অনুমানের মহাকর্ষীয় ক্ষমতার সমানুপাতিক। ভারী বস্তুর আলোর পথবিচ্যুতিরও পূর্বাভাষ পাওয়া যায়। যদিও পূর্বাভাষটি অশোধিত ছিল, তবুও সেটি দ্বারা মাপা যায় যে সেই পথবিচ্যুতি অশুন্য। জার্মান জ্যোতির্বিদ এরউইন ফিনলে-ফ্রেউনলিক পুরো পৃথিবীতে আইনস্টাইনের দাবী ছড়িয়ে দিলেন।[] এর ফলে জ্যোতির্বিদরা সূর্যগ্রহণ এর ফলে আলোর পথবিচ্যুতি পর্যবেক্ষণ করতে চাইলেন। এবং এটি আইনস্টাইনকে একটা সুযোগ দিল গানার নর্ডস্টোর্ম এর মহাকর্ষের স্কেলার তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করানোর। কিন্তু তিনি যে সত্যিকার মান দেন তা অনেক ক্ষুদ্র, ২ এর ফ্যাক্টর। কিন্তু তা আলোর প্রায় সমান বেগে চলমান বস্তুর ক্ষেত্রে ভালভাবে কাজ করেনি। যখন আইনস্টাইন তার সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব শেষ করলেন, তিনি সেই ভুল সংশোধন করলেন এবং সঠিক মান দিলেন। আইনস্টাইনের মহাকর্ষ নিয়ে আরেকটি চিন্তামূলক পরীক্ষণ ছিল ঘূর্ণায়মান চাকতির পরীক্ষা (এরেনফেস্ট প্যারাডক্স এর একটি বিকল্প)। তিনি ভাবলেন একজন দর্শক একটি টার্নটেবিলে পরীক্ষা করছে। তিনি বুঝলেন যে সেই দর্শক π এর মান ইউক্লিডীয় জ্যামিতির চেয়ে ভিন্ন মান পাবে। এর কারণ হল বৃত্তের ব্যাসার্ধ একটি অসংকুচিত রুলার দিয়ে মাপা হবে, কিন্তু বিশেষ আপেক্ষিকতা অনুযায়ী পরিধি একটু লম্বা মনে হবে কারণ রুলার টি সংকুচিত মনে হবে। যদিও আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন পদার্থবিদ্যার সকল সূত্র স্থান সংক্রান্ত, যা স্থান সংক্রান্ত ক্ষেত্র দ্বারা বর্ণিত। এ থেকে তিনি এ সিদ্ধান্তে আসলেন যে স্থানকাল আসলে স্থানের মধ্যে বাকানো। এর ফলে তিনি রিমেনীয় জ্যামিতি পড়া শুরু করলেন এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে এর মাধ্যমে প্রকাশ করলেন।

সাধারণ আপেক্ষিকতার উদ্ভব

Black circle covering the sun, rays visible around it, in a dark sky.
এডিংটনের সূর্যগ্রহণের ছবি, যা প্রমাণ করে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি সঠিক এবং নির্ভুল।

১৯১২ সালে আইনস্টাইন তার আলমা মেটের, ইটিএইচ এ অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করতে সুইজারল্যান্ড ফিরে আসেন।জুরিখে ফেরা মাত্র তিনি তার পুরনো ইটিএইচ ক্লাসমেট মার্সেল গ্রসম্যান এর সাথে দেখা করলেন, যিনি গণিতের অধ্যাপক ছিলেন, যিনি আইনস্টাইনকে রিমেনীয় জ্যামিতি, অর্থাৎ অন্তরীকৃত জ্যামিতির সাথে পরিচয় করান।ইটালীয় গণিতবিদ টোলিও লেভি-সিভিটার পরামর্শে আইনস্টাইন মহাকর্ষীয় তত্ত্বে সাধারন কোভ্যারিয়েন্স ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বোঝেন। প্রথমে আইনস্টাইন একে সমস্যা ভেবেছিলেন, কিন্তু পরে তিনি এটা আবার শুরু করেন এবং ১৯১৫ সালে তিনি তার সাধারণ আপেক্ষিকতার বর্তমান রূপটি প্রকাশ করেন। এ তত্ত্ব পদার্থের কারণে স্থানকালের গঠনের বিশৃঙ্খলা বর্ণনা করে, যা পদার্থের নিষ্ক্রিয় বেগ এর উপর প্রভাব ফেলে।[] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেন্ট্রাল পাওয়ার বিজ্ঞানীদের কাজ শুধুমাত্র সেন্ট্রাল পাওয়ার একাডেমীই দেখতে পারত। আইনস্টাইনের কিছু কাজ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিল অস্ট্রিয়ান পল এরেনফেস্ট এবং নেদারল্যান্ডের কিছু পদার্থবিদের কারণে, বিশেষ করে ১৯০২ সালের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী হেনড্রিক লরেঞ্জলেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় এর উইলিয়াম ডি সিটার এর মাধ্যমে। যুদ্ধের পর আইনস্টাইন লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখেন এবং সেখানকার বিশেষ অধ্যাপক এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১০ বছরের জন্য।[] ১৯১৭ সালে, বিজ্ঞানীরা আইনস্টাইনের প্রগ থেকে ছুড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দির একটি সূর্য বর্ণালীবীক্ষণ পরীক্ষার কথা প্রকাশ করেন যা কোন মহাকর্ষীয় রেডশিফট দেখায়নি। [] ১৯১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার লিক মানমন্দিরও এমন তথ্য প্রকাশ করে যা আইনস্টাইনের তত্ত্ববিরোধী, যদিও তার পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে।.[] যাই হোক, ১৯১৯ সালের মে মাসে ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ আর্থার স্টানলি এডিংটন এর নেতৃত্বে একটি দল দাবী করল যা তারা আইনস্টাইনের "সূর্যের পাশ দিয়ে আসার সময় তারার মহাকর্ষীয় দিকবিচ্যুতি" এর প্রমাণ পেয়েছেন সূর্যগ্রহণের ছবি তোলার সময়, এবং যৌথভাবে উত্তর ব্রাজিলের সোব্রাল ও ক্যারিবিয় প্রিন্সিপ দ্বীপ থেকেও এই পর্যবেক্ষণ করা হয় ও একই ফল পাওয়া যায়। [] নোবেলজয়ী ম্যাক্স বর্ণ সাধারণ আপেক্ষিকতাকে "প্রকৃতি নিয়ে মানুষের চিন্তার সর্বোত্তম কীর্তি" বলেন।[] আর পল ডিরাক একে "সম্ভবত মানুষের সর্বোত্তম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার" বলেন।[১০] এরপর এডিংটনের সেসব ছবিগুলো পুনর্তদন্তের দাবীও উঠে। সেখানে বলা হয়, তার প্রদর্শিত ছবিগুলো পরীক্ষণের অনিশ্চয়তাও হতে পারে, আর ১৯৬২ তে ব্রিটিশদের অভিযান বলে যে ঐ পদ্ধতি অবিশ্বাসযোগ্য।[১১] সূর্যগ্রহণের ফলে আলোর পথবিচ্যুতি পরে নিশ্চিত করা হয় আরো সঠিক পরীক্ষন দ্বারা। [১২] কিছু নতুন বিজ্ঞানীরা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে, যারা পরে জার্মান ফিজিক্স আন্দোলন শুরু করে।[১৩][১৪]

সাধারণ কোভ্যারিয়েন্স ও বিবর বিতর্ক

১৯১২ সালে আইনস্টাইন এমন একটি তত্ত্ব চেয়েছিলেন যেখানে মহাকর্ষকে জ্যামিতিক ঘটনা বলা হয়েছে। টোলিও লেভি-সিভিটার আহবানে আইনস্টাইন মহাকর্ষীয় তত্ত্ব তৈরির জন্যে সাধারণ কোভ্যারিয়েন্স ব্যবহার করেন। ১৯১৪ ও ১৯১৫ তে আইনস্টাইন অন্য পথে ক্ষেত্রতত্ত্ব তৈরির চেষ্টা করেন যখন সে পথ অসঙ্গত প্রমাণ হল, তখন আইনস্টাইন আবার সাধারণ কোভ্যারিয়েন্স পড়া শুরু করলেন এবং আবিষ্কার করলেন যে বিবর বিতর্ক আসলে ত্রুটিপূর্ণ।[১৫]

আইনস্টাইনের ক্ষেত্রতত্ত্ব গঠন

যখন আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন যে সাধারণ কোভ্যারিয়েন্ট যুক্তিসিদ্ধ, তিনি তৎক্ষণাৎ তার নামে ক্ষেত্রতত্ত্বটি দাড় করিয়ে ফেললেন। সেগুলো ১৯১৫ সালের অক্টোবরে বের হয়।

Rμν=Tμν,

যেখানে Rμν হল রিচির টেন্সর, এবপং Tμν হল শক্তি-ভরবেগ টেন্সর। এটি মঙ্গলের অ-নিউটনীয় অনুসূর ব্যবস্থা বর্ণনা করে, আর তাই আইনস্টাইন উত্তেজিত হয়ে পরেন।যাই হোক, এটা শীঘ্রই বোঝা যায় যে তারা স্থানীয় শক্তি-ভরবেগ সংরক্ষণশীলতার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হবে যদি মহাবিশ্বের ভর-শক্তি-ভরবেগ এর স্থায়ী ঘনত্ব থাকে। অন্য কথায় সবকিছুরই সমান ঘনত্ব থাকতে হবে।এই অসঙ্গতি আইনস্টাইনকে ড্রয়িং বোর্ডে পাঠিয়ে দেয়। যাই হোক, ১৯১৫ সালের ২৫ নভেম্বর তার আসল আইনস্টাইনীয় ক্ষেত্রতত্ত্ব প্রুশিয়ান বিজ্ঞান একাডেমীর কাছে তুলে ধরেনঃ [১৬]

Rμν12Rgμν=Tμν,

যেখানে R হল s the রিচির স্কেলার এবং gμν হল মেট্রিক টেন্সর। ক্ষেত্রতত্ত্ব বের হবার পর এদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু হল। এইসব পরীক্ষামূলক প্রমাণ সাধারণ আপেক্ষিকতার অধীনেই হয়েছিল।

আইনস্টাইন ও হিলবার্ট

যদিও আইনস্টাইনকে এই তত্ত্বের জনক বলা হয়, জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট আইনস্টাইনের আগে একটা আর্টিকেল প্রকাশ করেন। ফলে আইনস্টাইনের উপর রচনাচুরির অপবাদ আসে, এবং এটাকে আইনস্টাইন-হিলবার্ট ক্ষেত্রতত্ত্ব নাম দেয়ার কথা বলে। কেউ কেউ এটাও বলেছিলেন আইনস্টাইন আগেই সঠিক সমীকরণ বানান ও হিলবার্ট তার নিজের কাজ সংশোধন করেন তার নিজের নাম যুক্ত করতে। শেষে এটা বলা হয় যে, আইনস্টাইন প্রথমে সঠিক ক্ষেত্রতত্ত্ব আবিষ্কার করেন, যদিও হিলবার্ট পরে স্বাধীনভাবেই তা আবিষ্কার করেন।[১৭] যাই হোক, অন্যরা ঠিকই এ বিষয়ে সমালোচনা করেন।[১৮]

স্যার আর্থার এডিংটন

যখন আইনস্টাইনের তত্ত্ব প্রকাশিত হল, স্যার আর্থার এডিংটন তার ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে এই জার্মান বিজ্ঞানীকে সম্মানিত করেন। যেহেতু এই তত্ত্ব অত্যধিক জটিল ছিল (এখনও একে মানবচিন্তার চূড়া ধরা হয়); তাই বলা হত এটিকে কেবল পৃথিবীর ৩ জন লোকই জানত! এডিংটনের একটি লেকচারের সময় তার এক ছাত্র লুডউইক সিলবারস্টাইন[১৯] বললেন,"প্রফেসর এডিংটন, আপনি হয়ত পৃথিবীর সে ৩ জন বিজ্ঞানীদের একজন যিনি আপেক্ষিকতা বোঝেন।" তখন এডিংটন স্তব্ধ হয়ে যান। এ দেখে লুডউইক বলেন,"ভদ্রতার প্রয়োজন নেই, এডিংটন!" তখন এডিংটন বললেন, "উলটো। আমি ভাবছিলাম ৩য় ব্যক্তিটা কে।"

সমাধান

সোয়ার্জচাইল্ড সমাধান

যেহেতু ক্ষেত্রতত্ত্বগুলো অরৈখিক ছিল, আইনস্টাইন ভাবলেন ওগুলো সমাধান করা যাবেনা। যাই হোক, কার্ল সোয়ার্জচাইল্ড [২০] ১৯১৫ সালে গোলাকার স্থানাঙ্গ এর মধ্য ভারী বস্তুর চারপাশের গোলাকার সুষম স্থানকালের সঠিক সমীকরণ বের করেন ও তা ১৯১৬ সালে প্রকাশ করেন। ওগুলো সোয়ার্জচাইল্ড সমাধান নামে পরিচিত। এরপর, এমন আরো অনেক সঠিক সমাধান পাওয়া যায়।

প্রসারমাণ মহাবিশ্ব ও মহাজাগতিক ধ্রুবক

১৯২২ সালে আলেক্সান্ডার ফ্রিডম্যান এমন একটি সমীকরণ দিলেন যা থেকে দেখা যায় মহাবিশ্ব হয় প্রসারিত হচ্ছে অথবা সংকুচিত হচ্ছে, এবং পরে জর্জ লেমিত্রের সমীকরণ থেকে জানা যায় মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু আইনস্টাইন ভাবতেন মহাবিশ্ব স্থির, কারণ তা না হলে সেটা ক্ষেত্রতত্ত্বের বিরোধী হয়। ফলে আইনস্টাইন তার তত্ত্বে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক Λ ব্যবহার করলেন, যা ছিল এরকম:

Rμν12Rgμν+Λgμν=Tμν.

এর ফলে স্থির মহাবিশ্ব পাওয়া গেল ঠিকই, কিন্তু তা অস্থিতিশীল ছিল। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সক্রিয়তায়ই মহাবিশ্বের প্রসারণ ও সংকোচনের কারণ হতে পারত। ১৯২৯ সালে এডুইন হাবল প্রমাণ পেলেন যে।মহাবিশ্ব আসলেই প্রসারিত হচ্ছে। ফলে আইনস্টাইনের মহাজাগতিক ধ্রুবক মুখ থুবরে পরল। আইনস্টাইনের ভাষায়, "আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল এটি।" তখনকার সময়ে এটি একটি এড-হক এ পরিণত হয়, কারণ এর একটি মাত্র ফলাফল ই ছিল, আর তা হল স্থির মহাবিশ্ব।

আরো কিছু সঠিক সমাধান

ক্ষেত্রতত্ত্বের তখন উন্নয়ন ও সমাধান বুঝতে পারার ব্যাপারটা চলছিল। রেইজনার তখন চার্জিত সুষম গোলাকৃতির বস্তুর একটা সমাধান আবিষ্কার করলেন। পরবর্তীতে নর্ডস্টোর্ম এটা পুনরাবিষ্কার করেন এবং সেটাকে এখন রেইজনার-নর্ডস্টোর্ম সমাধান বলা হয়। সোয়ার্জচাইল্ড সমাধানের কৃষ্ণ বিবর অনেক বিতর্কিত ছিল, এবং আইনস্টাইনও সিঙ্গুলারিটিতে বিশ্বাস করতেন না। যাই হোক, ১৯৫৭ সালে (আইনস্টাইনের মৃত্যুর দুবছর পরে) মার্টিন ক্রুশকাল বললেন যে সোয়ার্জচাইল্ড সমীকরণ থেকে জানা যায় কৃষ্ণ বিবর আছে। তার সাথে ১৯৬০ সালে ঘূর্ণায়মান ভারী বস্তুর সমাধান দিয়ে দেন কের এবং তাকে কের সমাধান বলে। তার কিছু বছর পর চার্জিত ঘূর্ণায়মান ভারী বস্তুর সমাধান আবিষ্কৃত হয় যাকে কার-নিউম্যান সমাধান বলে।

তত্ত্ব পরীক্ষণ

বুধ গ্রহের পথবিচ্যুতির সঠিক পরিম্প ছিল আপেক্ষিকতা তত্ত্বের নির্ভুলতার প্রথম প্রমাণ। স্যার আর্থার এডিংটন ১৯১৯ সালের ২৯শে মে সূর্যগ্রহণ থেকে আইনস্টাইনের অনুমানের একটা বিরাট পদচিহ্ন একে দেন। তারপর থেকে বহুবার আপেক্ষিকতার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে, যেমন বাইনারী পালসার এর ক্ষেত্রে, সূর্যের প্রান্তের রেডিও সিগন্যাল, এমনকি জিপিএস সিস্টেমেও। স্থান-কাল এর বাকে যে তরঙ্গ থাকে তাকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বলে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৫ সালে লিগো এর কৃষ্ণবিবরের মিলিত হওয়ার পরীক্ষা থেকে।[২১][২২][২৩]

বিকল্প তত্ত্ব

সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের পরিবর্তনের অনেক চেষ্টা করা হয়। সবচেয়ে বিখ্যাতটি হল ব্রানস-ডিক তত্ত্ব (একে স্কেলার-টেনসর তত্ত্বও বলা হয়), এবং রোজেনের বাইমেট্রিক তত্ত্ব। দুটি তত্ত্বই আপেক্ষিকতার ক্ষেত্রতত্ত্ব বদলানোর কথা বলেছিল, এবং দুটি তত্ত্বই বাইপোলার মহাকর্ষীয় বিকিরণের কথা বলে। ফলে যখন বাইনারী পালসার পাওয়া গেল, রোজেনের তত্ত্ব খণ্ডিত হল। ব্রান্স-ডিকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। সাধারণ আপেক্ষিকতা আবার কোয়ান্টাম মেকানিক্স, যা পদার্থের কণা তরঙ্গ দৈত্বতার বর্ণনা দেয়,এবং ক্ষুদ্র বস্তুর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ মানেনা, এর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এখন বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন কীভাবে এই দুটি তত্ত্বকে একত্রিত করা যায়। আর সে তত্ত্বকে কোয়ান্টাম গ্রাভিটি বলে, উদাহরণস্বরুপ স্ট্রিং থিওরীলুপ কোয়ান্টাম গ্রাভিটি

সাধারণ আপেক্ষিকতার আরো ইতিহাস

কিপ থর্ন ১৯৬০-১৯৭৫ এই সময়কালকে সাধারণ আপেক্ষিকতার স্বর্ণযুগ বলেছেন[২৪], কারণ তখন তা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান এর স্রোতে মিলিত হয়। তখন অনেক বিজ্ঞানীদের মনেই আপেক্ষিকতা সংক্রান্ত বিভিন্ন চিন্তা জেগে উঠে, যেমন কৃষ্ণবিবরমহাকর্ষীয় সিঙ্গুলারিটি। প্রায় একই সময়ে তখন বাস্তবিক সৃষ্টিতত্ত্বও স্রোতে গা ভাসায় এবং বিগ ব্যাঙ প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও দেখুন

রেফারেন্স

  1. Albert Einstein, Nobel lecture in 1921
  2. টেমপ্লেট:Citation page 454 (Wir betrachen zwei Bewegung systeme ...)
  3. টেমপ্লেট:Citation (also in Collected Papers Vol. 3, document 23)
  4. ৪.০ ৪.১ Crelinsten, Jeffrey. "Einstein's Jury: The Race to Test Relativity টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ". Princeton University Press. 2006. Retrieved on 13 March 2007. টেমপ্লেট:আইএসবিএন
  5. O'Connor, J.J. and E.F. Robertson (1996), "General relativity". Mathematical Physics index, School of Mathematics and Statistics টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ, University of St. Andrews, Scotland, May, 1996. Retrieved 2015-02-04.
  6. টেমপ্লেট:Citation
  7. টেমপ্লেট:Citation
  8. টেমপ্লেট:Citation
  9. টেমপ্লেট:Citation
  10. Jürgen Schmidhuber. "Albert Einstein (1879–1955) and the 'Greatest Scientific Discovery Ever'". 2006. Retrieved on 4 October 2006.
  11. টেমপ্লেট:Citation
  12. See the table in MathPages Bending Light
  13. টেমপ্লেট:Citation
  14. For a discussion of astronomers' attitudes and debates about relativity, see টেমপ্লেট:Citation, especially chapters 6, 9, 10 and 11.
  15. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  16. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  17. Leo Corry, Jürgen Renn, John Stachel: "Belated Decision in the Hilbert-Einstein Priority Dispute", SCIENCE, Vol. 278, 14 November 1997 - article text
  18. Friedwart Winterberg's response to the Cory-Renn-Stachel paper টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ as printed in "Zeitschrift für Naturforschung" 59a টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ, 715-719.
  19. John Waller (2002), Einstein's Luck, Oxford University Press, টেমপ্লেট:আইএসবিএন
  20. টেমপ্লেট:Harvnb, টেমপ্লেট:Harvnb
  21. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  22. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  23. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  24. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি Extract of page 74