মাইকেলসন - মোরলে পরীক্ষা

মাইকেলসন - মোরলি পরীক্ষা হলো আলোকবাহী ইথারের অস্তিত্ব নির্ণয়ের জন্য (মূলত ইথারের সাপেক্ষে পৃথিবীর গতি মাপার জন্য[১]) ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আলবার্ট মাইকেলসন ও এডওয়ার্ড উইলিয়ামস মোরলে কর্তৃক সম্পাদিত একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে মহাবিশ্বে ইথারের কোনো অস্তিত্ব নেই। ১৮৮০-৮১ সালে আলবার্ট মাইকেলসন কর্তৃক[১] জার্মানিতে এই পরীক্ষাটি প্রথম সম্পাদিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৮৮৭ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই এর মধ্যে ক্লিভল্যান্ড, ওহাইওর বর্তমান কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় আলবার্ট মাইকেলসন ও এডওয়ার্ড মোরলে কর্তৃক সম্পাদিত হয় এবং একই বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত হয়।[২] হাইগেনস কর্তৃক আলোর তরঙ্গ ধর্মের অনুমান ও থমাস ইয়ং, ফ্রেসনেল এবং ম্যাক্সওয়েলের আরো সূক্ষ্ম তত্ত্বের কারণে এটি ধারণা করা হয় যে অন্যান্য তরঙ্গের মত আলোক তরঙ্গের পরিবহনের জন্যও কোনো মাধ্যম দরকার হয়। এই মাধ্যমকেই বলা হয় ইথার বা আলোকবাহী ইথার।[৩][৪] বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে আমাদের চারিপাশ এমনকি মহাশূন্যও ইথার দ্বারা পূর্ণ। ইথারের অস্তিত্ব নির্ণয়ের জন্য মাইকেলসন ও মোরলে ইন্টারফেরোমিটার নামক যন্ত্র ব্যবহার করেন।
পরবর্তীতে ১৯০২, ১৯০৫, ১৯২০ এবং আরো সাম্প্রতিক ২০০৯ সালে আরো সূক্ষ্মতর পরীক্ষায়ও একই ফল পাওয়া যায়।[৫][৬] আবার, আইনস্টাইনের বিখ্যাত বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ীও ইথারের কোনো অস্তিত্ব নেই।[৪] আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সরাসরি ইথারের অস্তিত্বকে বাতিল করে দিয়েছিলো এবং মাইকেলসন - মোরলে পরীক্ষা ছিলো তার প্রমাণ।[৭][৮]
পরীক্ষা
পৃথিবী সূর্যের চারিপাশে অতি দ্রুত বেগে পরিক্রমণ করে (ঘণ্টায় ১০০,০০০ কিলোমিটারেরব বেশি বেগে)।[৯] যেহেতু, পৃথিবী গতিশীল তাই দুইটি প্রধান সম্ভবনা বিবেচিত হয়। একটি অগাস্টিন-জিন ফ্রেসনেল কর্তৃক প্রস্তাবিত এবং অন্যটি জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস কর্তৃক প্রস্তাবিত। ফ্রেসনেলের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ইথার হলো স্থীর এবং আংশিক ভাবে পৃথিবী একে টেনে নিয়ে যায়। অন্যটি হলো পৃথিবী একে সম্পূর্ণ ভাবে টেনে নিয়ে যায়। ফলে এর বেগ থাকে পৃথিবী পৃষ্ঠের বেগের সমান।[১০] উপরন্তু, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল আলোর তড়িচ্চুম্বকীয় প্রকৃতিকে স্বীকৃত করেন ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণসমূহকে বিকশিত করেন। কিন্তু তখনো মনেকরা হতো যে এই সমীকরণ গুলি একটি ইথারের মাঝ দিয়ে তরঙ্গের গতিকে বর্ণনা করছে যার গতির অবস্থা অজানা। অবশেষে, ফ্রেসনেলের প্রস্তাবনাই পেশ করা হয় যখন ফিজোর পরীক্ষা ও নাক্ষত্রিক আলোর অপেরণ দ্বারা এটি প্রতিপাদিত মনে হয়।[১০]

এখন ইথার যদি থেকেই থাকে তাহলে ইথারের মাঝ দিয়ে পৃথিবী এগিয়ে চলেছে। এর ফলে, ঠিক যেভাবে চলন্ত গাড়ির পেছন দিকে বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয় সেভাবেই পৃথিবীর গতির বিপরীত দিকে ইথারের প্রবাহ তৈরী হওয়ার কথা। যদিও তাত্ত্বিক এটিও সম্ভব যে কোনো এক মুহূর্তে ইথার ও পৃথিবীর গতি একই কিন্তু সব সময়ের জন্য এটি সত্য নয় কেননা পৃথিবীর গতির মান ও দিক পরিবর্তীত হতে থাকে। এখন নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত একটি আলোক তরঙ্গ বিভিন্ন দিকে যাওয়া আসা করার প্রয়োজনীয় সময়ের পার্থক্য থেকে ইথারের সাপেক্ষে পৃথিবীর গতি মাপা সম্ভব।

এই পরীক্ষায় একটি আলোক উৎস থেকে নির্গত আলোকে একটি অর্ধ রৌপায়িত দর্পনে তে ৪৫° কোণে আপতিত হয়। যখন কোনো আলো এই আয়না দিয়ে যায় তখন আলোর অর্ধেক অংশ আয়না ভেদ করে অপর পাশে চলে যায়, বাকি অর্ধেক অংশ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এসময় দূরত্বে থাকে একটি আয়না যা বেগে গতিশীল। রশ্মির অর্ধেক তীব্রতার একটি অংশ দূরত্বে থাকা আয়নায় সময়ে আঘাত করে। সুতরাং, এর অতিক্রান্ত দূরত্ব । এসময় আয়না কর্তৃক অতিক্রান্ত দূরত্ব । সুতরাং । আবার, ফিরে আসার ক্ষেত্রে, । সুতরাং, মোট সময়,
এখন দ্বিতীয় আয়না ও রশ্মির ক্ষেত্রে একই ভাবে হিসাব করে,
সুতরাং, সময়ের পার্থক্য[১১]:
দ্বারা গুণ করলে, পূর্বের দূরত্ব:
বিপরীত দিকের ক্ষেত্রে,
এবার তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা কে ভাগ করলে ডোরার সরণ n পাওয়া যায়।[১২]
যেহেতু L ≈ 11 মিটার ও λ≈500 ন্যানোমিটার, তাই, ব্যাতিচার ডোরার সরণ হয় n ≈ 0.44। কিন্তু, পরীক্ষায় মাইকেলসন ও মোরলে দেখলেন যে প্রকৃত পক্ষে কোনো সরণই ঘটে না যদিও তাদের যন্ত্র ০.০১ পরিমাণ সরণও সনাক্ত করতে পারত। তারাএই পরীক্ষা বার বার করেও একই ফলাফল পান। এ থেকে তারা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে ইথারের সাপেক্ষে পৃথিবীর বেগ শূন্য। অর্থাৎ ইথারের কোনো অস্তিত্বই নেই।[২][১৩]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- টেমপ্লেট:Wikiquote-inline
- টেমপ্লেট:Commons category-inline
- টেমপ্লেট:Wikibooks-inline
- টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ ১.০ ১.১ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ ২.০ ২.১ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ ৪.০ ৪.১ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:Citation
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ ১০.০ ১০.১ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি Extract of page 1117
- ↑ টেমপ্লেট:Citation