আবেশ গুণাঙ্ক
টেমপ্লেট:Infobox physical quantity টেমপ্লেট:Electromagnetism
তড়িচ্চুম্বকত্ব এবং ইলেকট্রন বিজ্ঞানে, আবেশ গুণাঙ্ক হল কোনও তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনের বিরোধিতা করার প্রবণতা। তড়িৎ প্রবাহ পরিবাহীর চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। ক্ষেত্রের শক্তি তড়িৎ প্রবাহের মানের উপর নির্ভর করে, এবং প্রবাহের যে কোনও পরিবর্তনকে অনুসরণ করে। ফ্যারাডের আবেশ সূত্র থেকে, বর্তনীর মাধ্যমে চৌম্বক ক্ষেত্রের যে কোনও পরিবর্তন পরিবাহীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তি (ইএমএফ) (বিভব) আবিষ্ট করে। এই প্রক্রিয়াটির নাম তড়িচ্চুম্বকীয় আবেশ। পরিবর্তিত প্রবাহের দ্বারা তৈরি এই আবিষ্ট বিভব প্রবাহের পরিবর্তনের বিরোধিতা করে। লেন্জের সূত্রতে এটি বিবৃত হয়েছে, এবং বিভবটিকে বিপরীত তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়।
আবিষ্ট বিভব এবং তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনের হারের অনুপাতকে আবেশ গুণাঙ্ক বলা হয়। এটি একটি আনুপাতিক উৎপাদক যা বর্তনীর পরিবাহীর জ্যামিতি এবং নিকটবর্তী উপকরণগুলির চৌম্বক প্রবেশ্যতার উপর নির্ভর করে।[১] যে বৈদ্যুতিক উপাদানটি একটি বর্তনীতে আবেশ গুণাঙ্ক যোগ করার জন্য তৈরি করা হয়, তাকে বলা হয় আবেশক। এটি সাধারণত একটি কুণ্ডলী বা পেঁচানো তার নিয়ে গঠিত।
১৮৮৬ সালে অলিভার হেভিসাইড আবেশক বা টেমপ্লেট:Lang-en শব্দটির ধারণা দিয়েছিলেন।।[২] পদার্থবিদ হেনরিখ লেঞ্জের সম্মানে আবেশ গুণাঙ্কের জন্য চিহ্নটি ব্যবহার করা প্রথাগত।[৩][৪] এসআই পদ্ধতিতে, আবেশ গুণাঙ্কের একক হল হেনরি। যখন প্রতি সেকেন্ডে এক অ্যাম্পিয়ার হারে তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তিত হতে থাকে, তখন এক ভোল্ট বিভব সৃষ্টিকারী আবেশ গুণাঙ্ক হল এক হেনরি। এর নামকরণ করা হয়েছে জোসেফ হেনরির নামে, যিনি ফ্যারাডেকে ছাড়া স্বাধীনভাবে আবেশ গুণাঙ্ক আবিষ্কার করেছিলেন।[৫]
ইতিহাস
তড়িৎ চৌম্বক আবেশের ইতিহাস, যেটি তড়িচ্চুম্বকত্বের একটি দিক, পূর্ববর্তীদের পর্যবেক্ষণ দিয়ে শুরু হয়েছিল: বৈদ্যুতিক আধান বা স্থির তড়িৎ (অ্যাম্বারের উপর রেশম ঘষে), বৈদ্যুতিক তড়িৎ প্রবাহ (বজ্রপাত), এবং চৌম্বক আকর্ষণ (লোডস্টোন)। প্রকৃতির এই শক্তিগুলির একতা বোঝা, এবং বৈদ্যুতিক চৌম্বকত্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ১৮শ শতকের শেষদিকে শুরু হয়েছিল।
১৮৩১ সালে প্রথম মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ চৌম্বক আবেশটি ব্যাখ্যা করেছিলেন।[৬][৭] ফ্যারাডের পরীক্ষায়, তিনি একটি লোহার আংটির দুই বিপরীত দিকে দুটি তার জড়িয়েছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, যখন তড়িৎ একটি তারে প্রবাহিত হতে শুরু করুবে, তখন কোন এক ধরনের তরঙ্গ আংটির মধ্য দিয়ে গিয়ে বিপরীত দিকে কিছু বৈদ্যুতিক প্রভাব ফেলবে। একটি গ্যালভানোমিটার ব্যবহার করে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তারের প্রথম কুণ্ডলী থেকে যতবার একটি ব্যাটারি সংযোগ সংযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, ততবার দ্বিতীয় কুণ্ডলীতে একটি ক্ষণস্থায়ী প্রবাহের সৃষ্টি হয়েছিল।[৮] ব্যাটারি সংযোগ সংযুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে এই ক্ষণস্থায়ী প্রবাহটি চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের কারণে ঘটেছিল।[৯] ফ্যারাডে তড়িৎ চৌম্বক আবেশের আরও কয়েকটি অভিব্যক্তি পেয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি দেখেছিলেন একটি তারের কুণ্ডলীর মধ্যে একটি দণ্ড চুম্বককে দ্রুত ঢুকিয়ে বার করে আনলে, কুণ্ডলীতে তাৎক্ষণিক প্রবাহের সৃষ্টি হয়, এবং সামনের দিকে সংযুক্ত তড়িৎ সংযোগ সহ একটি দণ্ড চুম্বকের কাছে একটি তামার চাকতি ঘুরিয়ে স্থিতিশীল (ডিসি) তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন করেছিলেন ("ফ্যারাডের চাকতি")।[১০]
আবেশ গুণাঙ্কের উৎস
তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে পরিবাহীর চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন হয়, যেটি অ্যাম্পিয়ারের বর্তনী সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি বর্তনীর মাধ্যমে মোট চৌম্বক ফ্লাক্স , চৌম্বক ফ্লাক্স ঘনত্বের উল্লম্ব উপাংশ এবং তড়িৎ প্রবাহের পথের ক্ষেত্রফলের সমান। তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তিত হলে, বর্তনীর মধ্যের চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তিত হয়। ফ্যারাডের আবেশ সূত্র অনুযায়ী, বর্তনীর মধ্যে ফ্লাক্সের যে কোনও পরিবর্তনে বর্তনীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তি (ইএমএফ) বা বিভব আবিষ্ট হয়, যা ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হারের সাথে সমানুপাতিক
সমীকরণের ঋণাত্মক চিহ্নটি ইঙ্গিত দেয় যে আবিষ্ট বিভব, যে কারণে এটি তৈরি হয়েছে, সেই তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনের বিরোধিতা করে; একে লেন্জের সূত্র বলা হয়। এই বিভবকে তাই বিপরীত তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়। যদি তড়িৎ প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, পরিবাহীর যে বিন্দু দিয়ে তড়িৎ প্রবেশ করে সেই বিন্দুর বিভব ধনাত্মক এবং যে বিন্দু দিয়ে বেরিয়ে যায় সেই বিন্দুর বিভব ঋণাত্মক, অর্থাৎ প্রবণতা থাকে তড়িৎ প্রবাহকে কমানোর। যদি তড়িৎ প্রবাহ কমতে থাকে, পরিবাহীর যে বিন্দু দিয়ে তড়িৎ বেরিয়ে যায় সেই বিন্দুর বিভব ধনাত্মক হয়, অর্থাৎ প্রবাহ বজায় রাখার প্রবণতা। স্ব-আবেশ গুণাঙ্ক, বা শুধুই আবেশ গুণাঙ্ক হল আবিষ্ট বিভব এবং তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক
সুতরাং, আবেশ গুণাঙ্ক রাশিটি পরিবাহী বা বর্তনীর চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে তাদের নিজস্ব ধর্ম, যা বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহে পরিবর্তনের বিরোধিতা করে। এসআই পদ্ধতিতে, আবেশ গুণাঙ্কের একক হল হেনরি। এর নামকরণ করা হয়েছে জোসেফ হেনরির নামে। যখন প্রতি সেকেন্ডে এক অ্যাম্পিয়ার হারে তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তিত হতে থাকে, তখন এক ভোল্ট বিভব সৃষ্টিকারী আবেশ গুণাঙ্ক হল এক হেনরি।
সমস্ত পরিবাহীর কিছুটা আবেশ গুণাঙ্ক থাকে, ব্যবহারিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রে যার কাঙ্ক্ষিত বা ক্ষতিকারক প্রভাব থাকতে পারে। এটি বর্তনীর পরিবাহীর জ্যামিতি এবং নিকটবর্তী উপকরণগুলির চৌম্বক প্রবেশ্যতার উপর নির্ভর করে।; পরিবাহীর কাছে লোহার মতো উচ্চতর চৌম্বক প্রবেশ্যতা সহ ফেরোচৌম্বক উপকরণগুলি চৌম্বক ক্ষেত্র এবং আবেশ গুণাঙ্ককে বাড়িয়ে তোলে। একটি বর্তনীতে, প্রদত্ত তড়িৎ প্রবাহ দ্বারা উৎপাদিত যে কোনও পরিবর্তন, যা বর্তনীর ফ্লাক্সের (মোট চৌম্বক ক্ষেত্র) বৃদ্ধি করে, সেটি আবেশ গুণাঙ্ককে বাড়িয়ে দেয়। কারণ আবেশ গুণাঙ্ক রাশিটি চৌম্বক ফ্লাক্স ও তড়িৎ প্রবাহের অনুপাতের সমান[১১][১২][১৩][১৪]
একজন আবেশক হল একটি বৈদ্যুতিক উপাদান, যেটি চৌম্বক ফ্লাক্স বাড়ানোর জন্য পরিবাহীর সমন্বয়ে তৈরি, এটি একটি বর্তনীতে আবেশ গুণাঙ্ক যুক্ত করে। সাধারণত এটিতে একটি তারকে কুণ্ডলীর আকারে পাকানো থাকে। একটি কুণ্ডলীকৃত তারে সম দৈর্ঘ্যের সরল তারের চেয়ে বেশি আবেশ গুণাঙ্ক থাকে, কারণ চৌম্বক ক্ষেত্রের বলরেখাগুলি বর্তনীকে একাধিকবার অতিক্রম করার কারণে এটিতে একাধিক ফ্লাক্স সংযোগ থাকে। সম্পূর্ণ ফ্লাক্স সংযুক্ত হচ্ছে ধরে নিলে আবেশ গুণাঙ্ক কুণ্ডলীর আবর্তনের সংখ্যার বর্গের সমানুপাতিক।
চোঙাকৃতি আবেশকের কেন্দ্রে একটি ফেরোচৌম্বক চৌম্বক মজ্জা উপাদান রেখে কুণ্ডলীটির আবেশ গুণাঙ্ককে বাড়ানো যেতে পারে। কুণ্ডলীর চৌম্বক ক্ষেত্রটি মজ্জার উপাদানের চৌম্বক অঞ্চলকে প্রান্তিককরণ ক'রে চৌম্বকীয় করে, এবং মজ্জার চৌম্বক ক্ষেত্র কুণ্ডলীর ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত হয়ে যায়, এতে কুণ্ডলীর মধ্যে ফ্লাক্স বৃদ্ধি পায়। একে ফেরোচৌম্বক মজ্জা আবেশক বলা হয়। একটি চৌম্বক মজ্জা একটি কুণ্ডলীর আবেশ গুণাঙ্ক কয়েক গুণ বৃদ্ধি করতে পারে।
আরও দেখুন
- Electromagnetic induction
- Gyrator
- Hydraulic analogy
- Leakage inductance
- LC circuit, RLC circuit, RL circuit
- Kinetic inductance
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
সাধারণ তথ্যসূত্র
- টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- Küpfmüller K., Einführung in die theoretische Elektrotechnik, Springer-Verlag, 1959.
- Heaviside O., Electrical Papers. Vol.1. – L.; N.Y.: Macmillan, 1892, p. 429-560.
- Fritz Langford-Smith, editor (1953). Radiotron Designer's Handbook, 4th Edition, Amalgamated Wireless Valve Company Pty., Ltd. Chapter 10, "Calculation of Inductance" (pp. 429–448), includes a wealth of formulas and nomographs for coils, solenoids, and mutual inductance.
- F. W. Sears and M. W. Zemansky 1964 University Physics: Third Edition (Complete Volume), Addison-Wesley Publishing Company, Inc. Reading MA, LCCC 63-15265 (no ISBN).
বহিঃসংযোগ
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ Michael Faraday, by L. Pearce Williams, p. 182-3
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ Michael Faraday, by L. Pearce Williams, p. 191–5
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি