সোডিয়াম সায়ানাইড
সোডিয়াম সায়ানাইড (ইংরেজি: Sodium cyanide) একটি বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ, যার সংকেত
। এটি একটি সাদা বর্ণের, জলে দ্রবণীয় কঠিন পদার্থ। সায়ানাইড
উচ্চ ধাতব আসক্তিসম্পন্ন, যা এর লবণের অতিমাত্রায় বিষাক্ততার কারণ। এর মূল ব্যবহার খনি হতে স্বর্ণ উত্তোলনে; সেখানেও ধাতুর প্রতি এর উচ্চ আসক্তিকে কাজে লাগানো হয়। এটি মোটামুটি তীব্র একটি ক্ষারক। অম্লের সাথে বিক্রিয়া ঘটালে, এটি বিষাক্ত হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস গঠন করে।
প্রস্তুতি এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যাবলি
হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড এর বিক্রিয়ায় সোডিয়াম সায়ানাইড গঠিত হয়।[১]
২০০৬ সালে সারাবিশ্বে সোডিয়াম সায়ানাইডের এর আনুমানিক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ লক্ষ টন। আগে কাস্টনার প্রক্রিয়ায়, উচ্চ তাপমাত্রায় সোডিয়াম অ্যামাইড (বা সোডামাইড) এর সাথে কার্বনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে এটি তৈরি করা হত।
কঠিন
এর কাঠামো সোডিয়াম ক্লোরাইডের সাথে সম্পর্কিত।[২] এর অ্যানায়ন এবং ক্যাটায়ন উভয়ই ষড়-সন্নিবেশী। পটাশিয়াম সায়ানাইড (
) ও একই রকমের কাঠামো অনুসরণ করে। প্রতিটি
দুটি
আয়নের সাথে পাই-বন্ধন এবং সেই সাথে দুটি বাঁকানো
ও দুটি বাঁকানো
বন্ধন গঠন করে।[৩] যেহেতু
লবণটি একটি দুর্বল অম্ল হতে জাত, সেহেতু যৌগটি দ্রুত আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে পুনরায়
এ পরিণত হয়; সিক্ত কঠিন লবণ হতে সামান্য পরিমাণে হাইড্রোজেন সায়ানাইড নির্গত হয়, যা হতে তিতা কাঠবাদামের মতন একটি গন্ধ নির্গত হয় (সবাই এই গন্ধ টের পায় না- এ কারণে এই সামর্থ্য একটি জিনগত বৈশিষ্ট্য[৪])। সোডিয়াম সায়ানাইড তীব্র অম্লসমূহের সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন সায়ানাইড উৎপন্ন করে। এই বিপজ্জনক প্রক্রিয়াটি সায়ানাইড লবণ-সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য একটি ঝুঁকির প্রতিনিধিত্ব করে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (
) ব্যবহার করে সোডিয়াম সায়ানেট (
) এবং পানি তৈরির মাধ্যমে, সবচেয়ে কার্যকরভাবে একে বিষমুক্ত করা হয়।[১]
প্রয়োগ
সায়ানাইড খননবিদ্যা
সোডিয়াম গোল্ড সায়ানাইড
মূলত খনি থেকে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের কাজে খনি শিল্পে সোডিয়াম সায়ানাইড ব্যবহৃত হয়। এখানে সায়ানাইডের প্রতি সোনার (
) উচ্চ আসক্তিকে কাজে লাগানো হয়, যা ধাতব সোনাকে বায়ুর (অক্সিজেন) এবং পানির উপস্থিতিতে জারিত হয়ে দ্রবীভূত করে ফেলে। এই বিক্রিয়ার ফলে সোডিয়াম গোল্ড সায়ানাইড (বা গোল্ড সোডিয়াম সায়ানাইড) এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন হয়:
একই রকমের আরেকটি প্রক্রিয়ায় পটাশিয়াম সায়ানাইড (
;
এর নিকটাত্মীয়) ব্যবহার করে পটাশিয়াম গোল্ড সায়ানাইড
গঠিত হয়। এছাড়াও আরও কয়েক ধরনের নিষ্কাশন প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে।
রাসায়নিক কাঁচামাল
সায়ানাইড থেকে বাণিজ্যকভাবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগ পাওয়া যায়। যার মধ্যে সায়ানুরিক ক্লোরাইড, সায়ানোজেন ক্লোরাইড, অনেক নাইট্রাইল যৌগ অন্যতম। জৈব সংশ্লেষণে সায়ানাইড, যাকে শক্তিশালী কেন্দ্রাকর্ষী (নিউক্লিওফাইল) হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়, তা ব্যবহার করে নাইট্রাইল উৎপাদন করা হয়। ঔষধ উৎপাদনসহ অনেক রাসায়নিক পদার্থে তা ব্যাপকভাবে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, বেনজাইল ক্লোরাইড (; ইউপ্যাক নাম: (ক্লোরোমিথাইল বেনজিন)) এবং সোডিয়াম সায়ানাইড () এর বিক্রিয়ার মাধ্যমে বেনজাইল সায়ানাইড (; ইউপ্যাক নাম: ফিনাইল-অ্যাসিটোনাইট্রাইল) সংশ্লেষণের কথা উল্লেখ করা যায়।[৫]
অন্যান্য ব্যবহার
অতি বিষাক্ত হওয়ার কারণে, সোডিয়াম সায়ানাইড ব্যবহার করে হত্যা কিংবা দ্রুত অচেতন করে ফেলা যায়। যেমন- সায়ানাইড দ্বারা মৎস্য শিকার (সর্বজনীনভাবে বেআইনি) এবং কীটতত্ত্ববিদগণ কর্তৃক ব্যবহৃত সংগ্রাহক পাত্রে।
নরহত্যা
১৯৮৬ সালে, স্টেলা নিকেল নামক এক আমেরিকান মহিলা তার স্বামী ব্রুস নিকেলকে সোডিয়াম সায়ানাইড বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেন। হত্যার দায় এড়ানোর জন্য, তিনি কয়েক বোতল এক্সেড্রিন (প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের ব্র্যান্ড) এর সাথে সোডিয়াম সায়ানাইড মিশিয়ে, ওয়াশিংটনের টাকোমায় নিজের বাড়ির কাছের একটি দোকানের তাকে রেখে দেন। কয়েক দিন পর, সুজান স্নো নামক ঐ এলাকা নিবাসী এক ব্যাংক ব্যবস্থাপক, সেই বিষাক্ত এক্সেড্রিন খেয়ে মারা যান।
১৯৯১ সালে, টামওয়াটার, ওয়াশিংটন নিবাসী জোসেফ মেলিং, নিকেলের এই কূটবুদ্ধি ধার করে, নিজের স্ত্রীকে খুন করে তা গণহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে, সুডাফেড নামক ক্যাপসুলে বিষ মিশিয়ে নিজের বাড়ির কাছের দোকানের তাকে রাখেন। মেলিং তার স্ত্রীর নামে ৭ লক্ষ মার্কিন ডলারের ভুয়া জীবন বীমা তৈরি করেন। বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টা থেকে মেলিং এর স্ত্রী জেনিফার বেঁচে গেলেও টামওয়াটার এর অন্য দু'জন অধিবাসী বিষাক্ত সুডাফেড খেয়ে মৃত্যুবরণ করে।
বিষাক্ততা
টেমপ্লেট:মূল নিবন্ধঅন্যান্য দ্রবণীয় সায়ানাইড লবণসমূহের মত সোডিয়াম সায়ানাইড-ও জানা বিষগুলোর মধ্যে অন্যতম দ্রুত ক্রিয়াশীল একটি বিষ। একটি শক্তিশালী শ্বসনে বাধাদানকারী পদার্থ, যা মাইটোকন্ড্রীয় সাইটোক্রোম অক্সিডেজ উৎসেচকের ওপর ক্রিয়া করে এবং ইলেকট্রন পরিবহনে বাধাদান করে। এর ফলে অক্সিজেনঘটিত বিপাকক্রিয়া ও অক্সিজেন ব্যবহার হ্রাস পায়। অবাত বিপাকের কারণে ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিস দশার সৃষ্টি হয়। ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম এর মত স্বল্প মাত্রার মৌখিক ডোজও প্রাণঘাতী হতে পারে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- Institut national de recherche et de sécurité (INRS), "Cyanure de sodium. Cyanure de potassium", Fiche toxicologique n° 111, Paris, 2006, 6 pp. (PDF file, in French)
- International Chemical Safety Card 1118
- Hydrogen cyanide and cyanides (CICAD 61)
- National Pollutant Inventory - Cyanide compounds fact sheet
- NIOSH Pocket Guide to Chemical Hazards
- CSST (Canada) টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ
- Sodium cyanide hazards to fish and other wildlife from gold
- ↑ ১.০ ১.১ Andreas Rubo, Raf Kellens, Jay Reddy, Norbert Steier, Wolfgang Hasenpusch "Alkali Metal Cyanides" in Ullmann's Encyclopedia of Industrial Chemistry 2006 Wiley-VCH, Weinheim, Germany. টেমপ্লেট:DOI
- ↑ Wells, A.F. (1984) Structural Inorganic Chemistry, Oxford: Clarendon Press. টেমপ্লেট:ISBN.
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:OMIM
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি