ফেহলিং দ্রবণ
ডান পাশে ধনাত্মক ফলাফল, বাম পাশে ঋণাত্মক
ফেহ্লিং দ্রবণ হচ্ছে একটি রাসায়নিক বিকারক যা জলেতে দ্রবণীয় শর্করা এবং কিটোন কার্যকরী মূলকের মধ্যে পার্থক্য শনাক্তকরণে, এবং টলেন বিকারক পরীক্ষার সম্পূরক হিসেবে বিজারক শর্করা ও অবিজারক শর্করা'র পরীক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। জার্মান রসায়নবিদ হ্যারমান ভন ফিলিং (Hermann von Fehling) কর্তৃক ১৮৪৯ সালে এই বিকারকটি আবিষ্কৃত হয়।[১]
গবেষণাগার প্রস্তুতি

ফেহ্লিং দ্রবণ দুটি পৃথক দ্রবণের সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়: ফেহ্লিং এ, যা কপার (II) সালফেট এর গাঢ় নীল বর্ণের জলীয় দ্রবণ, এবং ফেহ্লিং বি, যা পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড সহযোগে ক্ষারকৃত পটাশিয়াম সোডিয়াম টারটারেট (রশেল লবণ নামেও পরিচিত) এর বর্ণহীন জলীয় দ্রবণ। পৃথকভাবে সুস্থিত এই দ্রবণ দুটিকে পরীক্ষণের প্রয়োজনে একত্রে মেশানো হয় কেননা এদের সংযোগে সৃষ্ট কপার (II) জটিল যৌগটি সুস্থিত নয়। এখানে সক্রিয় বিকারকটি হচ্ছে
আয়নের বিস(টারটারেট) জটিল আয়ন, যা জারক পদার্থ হিসেবে কাজ করে। টারটারেট টেট্রা-অ্যানায়নসমূহ অ্যালকক্সাইড লিগ্যান্ড এর বাইডেন্টেট (দ্বি-দন্তক); লিগ্যান্ডের দুটি পরমাণু বন্ধনে আবদ্ধ) হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
বিকারকের ব্যবহার
অ্যালডিহাইড এবং কিটোন কার্যকরী মূলকের মধ্যে পার্থক্য শনাক্তকরণে ফেহ্লিং দ্রবণ ব্যবহার করা যায়। পরীক্ষণীয় যৌগকে ফেহ্লিং দ্রবণে যোগ করে মিশ্রণটিকে উত্তপ্ত করা হয়। যৌগটি অ্যালডিহাইড হলে তা জারিত হয়, ফলে পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হয়; অন্যদিকে যৌগটি কিটোন হলে তা বিক্রিয়া করে না (যদি না যৌগটি হাইড্রক্সি কিটোন হয়)। বিস্-টারট্রেটোকিউপ্রেট (II) জটিল আয়ন অ্যালডিহাইডকে জারিত করে কার্বক্সিলেট অ্যানায়নে পরিণত করে এবং যুগপৎভাবে, কপার (II) আয়ন বিজারিত হয়ে কপার (I) আয়নে পরিণত হয়। ফলে লাল কপার (I) অক্সাইড এর অধঃক্ষেপ পাওয়া যায়, যা ধনাত্মক বা ইতিবাচক ফলাফল নির্দেশ করে, অর্থাৎ জারণ-বিজারণ সম্পন্ন হয়েছে (বেনেডিক্ট দ্রবণ থেকেও একই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়)।
মনোস্যাকারাইড এবং অন্যান্য বিজারক শর্করাসমূহের (যেমন- মল্টোজ) জন্য ফেহ্লিং দ্রবণ পরীক্ষা একটি সাধারণ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আল্ডোজ মনোস্যাকারাইডসমূহের জন্য এটি ধনাত্মক ফলাফল প্রদর্শন করে (জারণযোগ্য অ্যালডিহাইড মূলকের উপস্থিতির কারণে); আবার কিটোজ মনোস্যাকারাইডসমূহের জন্যও তা ধনাত্মক ফলাফল দেয়, কেননা তা বিকারকে উপস্থিত ক্ষারক কর্তৃক আল্ডোজ-এ রূপান্তরিত হয় এবং এরপর ধনাত্মক ফলাফল প্রদর্শন করে।[২]
বহুমূত্ররোগ শনাক্তকরণে মূত্র নমুনায় গ্লুকোজ শনাক্ত করতে ফেহ্লিং বিকারক ব্যবহার করা যায়। বিজারক শর্করা'র পরিমাণ নির্ণয় করে শ্বেতসারের ডেক্সট্রোজ সমতুল্য বের করতে এটা ব্যবহৃত হয়; শ্বেতসারকে ভেঙে গ্লুকোজ সিরাপ ও মল্টোডেক্সট্রিন এ রূপান্তরিত করার উদ্দেশ্যে।
ফরমিক অ্যাসিড () এর ফেহ্লিং পরীক্ষা থেকে ধনাত্মক ফলাফল পাওয়া যায়, টলেন বিকারক পরীক্ষা এবং বেনেডিক্ট পরীক্ষার মতই। কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্বারা তৎক্ষণাৎ জারিত হওয়ার সাথে এই ধনাত্মক ফলাফলগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ফেহ্লিং দ্রবণ দ্বারা বেনজালডিহাইড () এবং অ্যাসিটোন () এর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা যায় না।
সার্বিক বিক্রিয়া
ফেহ্লিং দ্রবণে অ্যালডিহাইড এর সাথে কপার (II) জটিল আয়নের সার্বিক বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
।
অথবা টারটারেট সহযোগে বিক্রিয়াটি হচ্ছে:
।