কঠিন দ্রবণ

testwiki থেকে
imported>AishikBot কর্তৃক ০৬:১০, ১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (বানান সংশোধন (সংশোধনের অনুরোধ সাপেক্ষে))
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

একটি কঠিন দ্রবণ দ্বারা এমন ধরনের পদার্থকে বোঝায় যাদের রাসায়নিক সংযুতি একটি নির্দিষ্ট পরিসরে থাকে যেমনঃ AxB1-x এবং একটিমাত্র ক্রিস্টাল গঠন থাকে। ধাতুবিদ্যা, ভূতত্ত্ব এবং কঠিন পদার্থের রসায়ন বিজ্ঞানে এর অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। "দ্রবণ" শব্দটি দ্বারা বিভিন্ন উপাদানের পারমাণবিক স্তরের প্রগাঢ় মিশ্রণকে বর্ণনা করা হয়। "দ্রবণ" নামক সমসত্ত্ব পদার্থ ও বিভিন্ন পদার্থের ভৌত মিশ্রণ সম্পূর্নরূপে পৃথক। টেমপ্লেট:উক্তির বাক্সসাধারণত, যদি দুইটি উপাদানের গঠন একই রকমের হয়, তাহলে উপাদান দুটির মধ্যে (প্যারেন্ট উপাদান হিসেবেও পরিচিত) একটি কঠিন দ্রবণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং পটাশিয়াম ক্লোরাইডের ক্রিস্টাল গঠন ঘনকাকৃতির এবং পরস্পর সদৃশ যার ফলে এদের মধ্যে একটি কঠিন দ্রবণ উৎপন্ন করা সম্ভব যেখানে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যেকোন অনুপাতে থাকতে পারে (Na1-xKx)Cl রূপে। এটি করা সম্ভব হবে যদি সেই অনুপাতের সোডিয়াম ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করে পরবর্তীতে দ্রবণটিকে বাষ্পীভূত করতে দেওয়া হয়। । এই কঠিন দ্রবণ গুলো বিভিন্ন অনুপাতেই থাকতে পারে এবং এমন একটি পদার্থ লো সল্ট নামে পরিচিত ( Na0.33K0.66)Cl এবং এই পদার্থটিতে সাধারণ খাবার লবণের তুলনায় ৬৬% কম সোডিয়াম থাকে। খাঁটি খনিজ পদার্থকে হ্যালাইট এবং সিলভাইট বলা হয় এবং এই দুটি পদার্থের ভৌত মিশ্রণকে সিলভিনাইট বলা হয়ে থাকে।

যেহেতু খনিজ পদার্থগুলো প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় সেহেতু এদের রাসায়নিক গঠনের অনেক ধরনের প্রকরণ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নমুনাগুলো একটি নির্দিষ্ট কঠিন দ্রবণ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে এবং এ কারণে ভূতাত্ত্বিকরা একটি আলাদা নমুনার চেয়ে, সেই গোষ্ঠীর গঠন কাঠামো নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। অলিভিন এমন একটি কঠিন দ্রবণ গোষ্ঠী যাকে (Mg, Fe)2SiO4 রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় যা (Mg1-xFex)2SiO4 এর সমতুল্য। এখানে ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের সংযোজন অনুপাতটি কঠিন দ্রবণ সিরিজটির দুইটি প্রান্তীয় উপাদানের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে থাকে এবং তারা হলঃ ফোরস্টেরাইট (Mg-প্রান্তীয় উপাদান: Mg2SiO4) এবং ফায়ালাইট (Fe-প্রান্তীয় উপাদান: Fe2SiO4) [] তবে সাধারণত, এই অনুপাতটি অলিভিনে সুসঙ্গায়িত করা হয়না। ক্রমাগত জটিল কাঠামো বৃদ্ধির সাথে সাথে রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেয়ে ভূতাত্ত্বিক সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করা সহজ হয়ে যায়।

চিত্রঃ 1 একটি বাইনারি ফেজ ডায়াগ্রাম দ্বারা একটি কঠিন দ্রবণের সকল পরিসরের রাসায়নিক সংযোজন দেখানো হচ্ছে।

একটি ফেজ ডায়াগ্রামে একটি কঠিন দ্রবণকে একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্র দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং রাসায়নিক সংযুতি ও তাপমাত্রা/চাপ এর পরিসরের উপর ভিত্তি করে এদের কাঠামোর ধরন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যেই কঠিন দ্রবণ পরিসরের প্রান্তীয় সদস্য গুলোর গাঠনিক কাঠামো একইরকম হয়না, সেখানে সাধারণত দুইটি ভিন্ন কাঠামোর কঠিন দ্রবণের পরিসর পাওয়া যায় যা এদের মূল কাঠামো দ্বারা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে দ্রবণ পরিসর গুলো পরস্পরের উপর সমাপতিত হতে পারে এবং এই অংশের যৌগ গুলো যেকোন একটি কাঠামোর হতে পারে অথবা কঠিন ভৌত অবস্থায় এদের কাঠামোতে মিশ্রণযোগ্যতার অনুপস্থিতি থাকতে পারে যা নির্দেশ করে যে ঐ রাসায়নিক কাঠামোর যৌগ তৈরি করতে হলে তা যৌগ না হয়ে মিশ্রণে পরিণত হবে। ফেজ ডায়াগ্রামের যেসব ক্ষেত্রে কঠিন দ্রবণ অনুপস্থিত, সেখানে রেখা দ্বারা একটি ফেজের উল্লেখ থাকতে পারে যাদের নির্দিষ্ট ক্রিস্টাল গঠন এবং রাসায়নিক সংযুতি রয়েছে। এমন কোন রৈখিক ফেজ যদি দুইটি চার্জবিহীন জৈব অণু দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে তবে তাকে সাধারণত সহ-ক্রিস্টাল বলা হয়। ধাতব কৌশল বিদ্যায় নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুতির সংকর কে ইন্টারমেটালিক যৌগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দুটি পদার্থের (সধারণত ধাতু) মধ্যে কঠিন দ্রবণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে যখন তারা পর্যায় সারণিতে কাছাকাছি অবস্থান করে এবং পর্যায় সারণিতে কাছাকাছি অবস্থান না করলে সাধারণত এদের ইন্টারমেটালিক যৌগ তৈরি হয়।[]

বিশদ

কঠিন দ্রবণ গঠিত দুভাবে গঠিত হতে পারে। দ্রবের অণু দ্রাবকের ক্রিস্টাল ল্যাটিসের কোন অণুকে প্রতিস্থাপন করতে পারে অথবা দ্রাবক অণুসমূহের মধ্যবর্তী কোন স্থানে অন্তবর্তী অণু হিসেবে বসতে পারে। উভয় ধরনের কঠিন দ্রবণ ক্রিস্টাল ল্যাটিস কে বিকৃত করে এবং দ্রাবক পদার্থের ভৌত ও তড়িৎ সমসত্ত্ব ধর্ম বিনষ্ট করার মাধ্যমে যৌগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর প্রভাব ফেলে। [] যখন দ্রবের পরমাণুর ব্যাসার্ধ দ্রাবকের পরমাণুর ব্যাসার্ধের চেয়ে বড় হয় তখন এটি ল্যাটিসে প্রতিস্থাপিত হওয়ায় ক্রিস্টাল গঠন (একক কোষ) প্রসারিত হয়ে যায়। সুতরাং, কঠিন দ্রবণের একটি যৌগের একক কোষের আয়তন গণনার মাধ্যমে এটির রাসায়নিক সংযুতি বের করা যায়। এই সম্পর্কটি জানা যায় ভেগার্ডের সূত্রের মাধ্যমে।

কিছু মিশ্রণ স্বতস্ফূর্তভাবে একটি রাসায়নিক সংযুতির পরিসরে কঠিন দ্রবণ তৈরি করে আবার অন্যান্য কিছু মিশ্রণ একদমই কঠিন দ্রবণে পরিণত হয়না। যেকোন দুইটি পদার্থের কঠিন দ্রবণ তৈরি করার প্রবণতা একটি জটিল ব্যাপার যা পদার্থের রাসায়নিক, ক্রিস্টালোগ্রাফিক, এবং কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। হিউম-রোথেরির নিয়ম অনুসারে, প্রতিস্থাপনীয় কঠিন দ্রবণ তৈরি হতে পারে যদি দ্রব এবং দ্রাবকের:

  • অনুরূপ পারমাণবিক ব্যাসার্ধ থাকে (15% বা তার চেয়ে কম পার্থক্য)
  • একই স্ফটিক কাঠামো থাকে
  • অনুরূপ তড়িৎ ঋণাত্মকতা থাকে
  • অনুরূপ যোজনী থাকে

একটি কঠিন দ্রবণ অন্যান্য যৌগের সাথে মিশ্রিত হয়ে নতুন দ্রবণ তৈরি করতে পারে।

চিত্রঃ১ এর ফেজ ডায়াগ্রামে দেখানো হয়েছে যে দুটি ধাতুর সংকর,তাদের সকল রাসায়নিক সংযুতিতে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে কঠিন দ্রবণ তৈরি করেছে। এখানে, প্রতিটি ধাতুর খাঁটি অবস্থার ক্রিস্টাল গঠন একই এবং তাদের কিছু অনুরূপ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ফলে এদের ল্যাটিসের মধ্যে নিরপেক্ষভাবে সকল রাসায়নিক সংযুতির পরিসরে প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে।

কঠিন দ্রবণের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এবং শিল্পজাত প্রয়োগ রয়েছে কারণ সাধারণত এমন যৌগসমূহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খাঁটি মৌলের চেয়েও উচ্চতর হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সংকর ধাতুই কঠিন দ্রবণ। এমনকি দ্রাবকের মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণে দ্রব উপস্থিত থাকলেও তা দ্রাবকের ভৌত ও বৈদ্যুতিক বৈশিষ্ট্য কে পরিবর্তন করতে পারে।

চিত্র ২ঃ এই বাইনারি ফেজ ডায়াগ্রামে দুটি কঠিন দ্রবণ দেখানো হয়েছে: α এবং β

চিত্র ২ এর বাইনারি ফেজ ডায়াগ্রামে দুটি পদার্থ A এবং B এর বিভিন্ন সংযুতিতে মিশ্রণের দশা দেখানো হয়েছে। α চিহ্নিত ক্ষেত্রটি কঠিন দ্রবণ যেখানে B দ্রবটি A দ্রাবকের মধ্যে উপস্থিত। অন্যদিকে রাসায়নিক ঘনত্বের স্কেলের অপরপাশে β দ্বারা চিহ্নিত ক্ষেত্রটি আরেকটি কঠিন দ্রবণ নির্দেশ করে যেখানে A দ্রবটি B দ্রাবকের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে। αβ কঠিন দ্রবণের মধ্যের বড় ক্ষেত্রটি " α + β " দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যা কোন কঠিন দ্রবণ নয় বরং দুইটি কঠিন দ্রবণের মিশ্রণ। এই পরিসরের মিশ্রণের আণুবীক্ষনিক কাঠামো নিরীক্ষণের মাধ্যমে দুইটি দশা পাওয়া যাবেঃ B এর মধ্যে A এর কঠিন দ্রবণ এবং A এর মধ্যে B এর কঠিন দ্রবণ যারা ল্যামেলা অথবা কণা আকারে আলাদা দশা তৈরি করবে।

প্রয়োগ

ফেজ ডায়াগ্রামে, তিনটি পৃথক রাসায়নিক সংযুতিতে পদার্থটি কঠিন অবস্থায় থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত তাকে তার গলনাংক পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে ফিউশনের এনথালপি (গলনের সুপ্ততাপ) যুক্ত করার পরে একই তাপমাত্রায় তরল হয়ে উঠবে। এই তিনটি বিন্দু হলঃ

  • অসংকরিত বাম পাশের বিন্দু
  • অসংকরিত ডান পাশের বিন্দু
  • কেন্দ্রীয় নিম্নমুখী ইউটেকটিক বিন্দু।

অন্যান্য রাসায়নিক অনুপাতসমূহে, পদার্থটি উত্তাপ পেলে নরম আঠালো দশায় চলে যাবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সম্পূর্নরূপে গলে না যায়।

চিত্রের নিম্ন বিন্দুতে থাকা মিশ্রণটিকে ইউটেকটিক সংকর ধাতু বলা হয়। সীসা ও টিনের ইউটেকটিক মিশ্রণ(৩৭/৬৩ অনুপাত) খুব দ্রুতই ঠান্ডা হলে কঠিন দশায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। এ কারণে এটি তড়িৎ যন্ত্রপাতি ঝালাই করার সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে বিশেষত যখন হাতে ঝালাই করা হয়। আবার যখন অটোমোবাইল এর কোন দুই প্রান্তের জোড়া লাগানোর প্রয়োজন হয় তখন সীসা-টিনের মিশ্রণকে নরম আঠালো লেইয়ের মত হতে হয় এবং তখন ৭০-৩০ অনুপাতে সীসা-টিনের সংকর করা হয়। ( এমন প্রয়োগ থেকে এখন সীসা কে সরিয়ে ফেলা হয়েছে যেহেতু এটি বিষাক্ত এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়)।

প্রাক্তন দ্রবণ

যখন একটি কঠিন দ্রবণ নিম্ন তাপমাত্রায় কারণে অস্থিতিশীল হয়ে যায় তখন প্রাক্তন দ্রবণের উৎপত্তি ঘটে এবং ফেজ দুইটি আনুবীক্ষণিক ও দৃশ্যমান ল্যামেলী রূপে আলাদা হয়ে যায়। এর পিছনে মূলত ক্যাটায়নের আকারের পার্থক্য দায়ী। যেসব ক্যাটায়নের ব্যাসার্ধের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে, তাদের মধ্যে সাধারণত প্রতিস্থাপন ঘটে না।[]

উদাহরণস্বরূপঃ ক্ষারীয় ফেল্ডস্পার খনিজের প্রান্তীয় সদস্যসমূহ হল এলবাইট-NaAlSi3O8 এবং মাইক্রোক্লাইন-KAlSi3O8। উচ্চ তাপমাত্রায় Na + এবং K + সহজেই একে অপরকে প্রতিস্থাপন করতে পারে এবং তার ফলে এই খনিজ গুলো কঠিন দ্রবণ তৈরি করতে পারে। তবুও, নিম্ন তাপমাত্রায় এলবাইট কেবলমাত্র অল্প পরিমাণে K + কে প্রতিস্থাপন করতে পারে এবং মাইক্রোক্লাইনে Na+ এর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এ কারণে এখানে প্রাক্তন দ্রবণের উৎপত্তি হবে যেখানে এরা দুইটি ভিন্ন দশায় আলাদা হয়ে যাবে। ক্ষারীয় ফেল্ডস্পার খনিজের ক্ষেত্রে পাতলা সাদা এলবাইট, গোলাপী মাইক্রোক্লাইনের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক স্তর তৈরি করবে [] যা পার্থাইট এর উৎপত্তি ঘটাবে।

সংকরায়ন পদ্ধতিতে ক্রমাগত বিভিন্ন রাসায়নিক সংযুতির কঠিন দ্রবণ তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন সংকর ধাতুতে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যগুলোর সূচনা হয় যখন দ্রাবকের ক্রিস্টালে দ্রবের পরমাণু প্রবেশের মাধ্যমে ল্যাটিসের বিকৃতি হয়। ধাতুর তড়িৎ রোধকত্ব নির্ভর করে ল্যাটিস কাঠামোর বিকৃতির পরিমাণের উপর। লঘু দ্রবণে খুব সামান্য পরিমাণে দ্রব যুক্ত করলেও রোধকত্বের অনেক বড় পরিবর্তন আসে যেখানে ঘন দ্রবণে এই পরিবর্তন খুব ধীরে আসে। []

আরো দেখুন

  • কঠিন দ্রবণের মাধ্যমে শক্তিশালীকরণ

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা