অভিকর্ষজ ত্বরণ
অভিকর্ষজ ত্বরণ ওপর থেকে পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হার। অভিকর্ষের কারণে ওপর থেকে ছেড়ে দেয়া বস্তু ভূপৃষ্ঠের দিকে ধাবিত হয় এবং যতই ভূপৃষ্ঠের (তথা ভূ-কেন্দ্রের) নিকটবর্তী হয় এর পতনের বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পতনকালে প্রতি সেকেণ্ডে বেগ যতটুকু বৃদ্ধি লাভ করে তা-ই ‘অভিকর্ষজ ত্বরণ’ হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞানে অভিহিত। অভিন্ন বস্তু তথা একই ভরের বস্তু পতনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ত্বরণ পরিলক্ষিত হয়। ভূ-কেন্দ্রের নৈকট্যের কারণে ত্বরণ বৃদ্ধি পায়।পৃথিবীতে অভিকর্ষ ত্বরনের মান ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড২।

পৃথিবী ও অন্য যে কোন বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল তাকে অভিকর্ষ বল বলা হয়। নিউটনের ২য় সূত্র অনুযায়ী বল প্রয়োগে বস্তুর ত্বরণ হয়। সুতরাং অভিকর্ষ বলের প্রভাবেও ত্বরণ হবে। সময়ের সাথে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ (টেমপ্লেট:Lang-en) বলে। একে g দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
সমীকরণ, মাত্রা ও একক
এখানে, G= মহাকর্ষ ধ্রুবক, M= পৃথিবীর ভর এবং d= পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর দুরত্ব
যেহেতু অভিকর্ষজ ত্বরণ এক ধরনের ত্বরণ, সুতরাং এর মাত্রা হবে LT−2 এবং একক হবে ms−2 ।
ভূপৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান
অভিকর্ষজ ত্বরণের সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, এর ডান পাশে বস্তুর ভর (m) অনুপস্থিত। সুতরাং, অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভরশীল নয়। যেহেতু, G এবং M ধ্রুবক, তাই, g এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর মধ্যবর্তী দুরত্বের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, বলা যায়, অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বস্তু নিরপেক্ষ হলেও স্থান নিরপেক্ষ নয়। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে,
যেখানে, r= পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য।
যেহেতু, পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয় অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য সব জায়গায় সমান নয় তাই ভূপৃষ্ঠে স্থানভেদে অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের পরিবর্তন দেখা যায় এবং এটি পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্যর বর্গের ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম বলে সেখানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান সবচেয়ে বেশি (৯.৮৩২১৭ ms−2) হয়। বিষুবীয় অঞ্চলে ব্যাসার্ধ্য অপেক্ষাকৃত বেশি বলে অভিকর্ষজ তরণের মান অপেক্ষাকৃত কম (৯.৭৮০৩৯ ms−2) হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে এর মান ৯.৭৮৯১৮ ms−2।
আদর্শ মান
ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বিভিন্ন বলে ৪৫° অক্ষাংশে সমুদ্র সমতলে এর মানকে আদর্শ মান ধরা হয়। এ মান হল ৯.৮০৬৬৫ ms−2। হিসাবের সুবিধার্থে একে ৯.৮ ms−2 বা ৯.৮১ ms−2 ধরা হয়।[১]