এক্স-রে পালসার

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
চন্দ্র এক্স-রশ্মি মানমন্দির কর্তৃক গৃহীত ভেলা পালসারের ছবি।

এক্স-রে পালসার বা বিবৃদ্ধি দ্বারা চালিত পালসারগুলি এমন এক শ্রেণীর জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যা এক্স-রের একটি উৎস এবং এরা উৎপন্ন এক্স-রের তীব্রতায় নিয়ন্ত্রিত পর্যাবৃত্ত বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে। এই এক্স-রের পর্যায়ক্রম, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ থেকে কয়েক মিনিট অবধি হতে পারে।

বৈশিষ্ট্য

একটি এক্স-রে পালসার, কক্ষপথে একটি চৌম্বকীয় নিউট্রন তারা এবং সাধারণ নাক্ষত্রিক সহচর নিয়ে গঠিত এক ধরনের যুগ্ম তারকা ব্যবস্থা। নিউট্রন তারাটির পৃষ্ঠের চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি সাধারণত প্রায়, 108 টেসলা হয় যা পৃথিবীর উপরিভাগের চৌম্বক ক্ষেত্রের (৬০ মাইক্রো টেসলা) চেয়ে এক ট্রিলিয়ন গুণ বেশি শক্তিশালী।

নাক্ষত্রিক সহচর থেকে গ্যাস উপলিপ্ত হয় এবং নিউট্রন তারার চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা চালিত হয়ে দুই বা ততোধিক স্থানীয় এক্স-রে হট স্পট তৈরি হয়, যা পৃথিবীর মেরুজ্যোতি অঞ্চল দ্বয়ের মত, তবে আরও বেশি উত্তপ্ত। নিউট্রন তারার পৃষ্ঠে সঙ্ঘর্ষের পূর্বে এই হটস্পটগুলিতে আগত এই গ্যাস আলোর গতির অর্ধেকও পৌঁছতে পারে। ফলে, পড়ন্ত গ্যাস কর্তৃক এত বেশি মহাকর্ষীয় বিভব শক্তি নির্গত হয় যে হটস্পটগুলি, যার আনুমানিক আয়তন প্রায় এক বর্গকিলোমিটার, সূর্যের চেয়ে দশ হাজার গুণ বা আরও বেশি উজ্জ্বল হতে পারে।[]

এর ফলে কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রা উৎপাদিত হওয়ায় হটস্পটগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক্স-রে নির্গত করে। নিউট্রন তারাটি আবর্তীত হলে, যদি চৌম্বকীয় অক্ষটি ঘূর্ণন অক্ষের সাথে হেলে তবে হটস্পটগুলি দৃষ্টি সীমার ভেতরে বাইরে যাওসা-আসা করার কারণে এক্স-রের স্পন্দন পর্যবেক্ষীত হয়।

গ্যাসের সরবরাহ

এক্স-রে পালসারে সরবরাহকৃত গ্যাস বিভিন্ন উপায়ে নিউট্রন তারার কাছে পৌঁছতে পারে যা নিউট্রন তারার আকার, কক্ষপথ এবং সহচর তারার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।

এক্স-রে পালসারেপর কিছু সহযোগী তারা খুব বিশাল নতুন তারকা, সাধারণত ওবি অতিদানব (নাক্ষত্রিক শ্রেণিবিন্যাস দেখুন), যা তাদের পৃষ্ঠ থেকে নাক্ষত্রিক বায়ু কর্তৃক চালিত হয়ে বিকিরণ নির্গত করে। নিউট্রন তারাটি বাতাসে অবগাঢ হয়ে যায় এবং অবিচ্ছিন্নভাবে কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়া এই গ্যাস গ্রহণ করে। ভেলা এক্স-১ এই ধরনের সিস্টেমের উদাহরণ।

শিল্পীর কল্পনায় বিবৃদ্ধি চাকতি গঠন প্রক্রিয়া

অন্যান্য সিস্টেমে নিউট্রন তারা তার সহচরের এত কাছে আবর্তীত হয় যে এর শক্তিশালী মহাকর্ষ শক্তি সহচরের বায়ুমণ্ডল থেকে গ্যাসগুলি নিজের চারপাশে একটি কক্ষপথে আকর্ষীত করতে পারে। এটি একটি ভর স্থানান্তর প্রক্রিয়া যা রোচে লোবে অতিপ্রাচুর্য নামে পরিচিত। আধৃত উপাদানগুলি একটি বায়বিয় বিবৃদ্ধি চাকতি গঠন করে এবং অবশেষে সর্পিল ভাবে নিউট্রন তারার অভ্যন্তরে পতিত হয় ঠিক যেমনটি ঘটে সেন এক্স-৩ যুগ্ম নাক্ষত্রিক ব্যাবস্থায়।

আবার, কিছু অন্য ধরনের এক্স-রে পালসাররের সহচর বি তারা, যা খুব দ্রুত ঘুরে এবং সম্ভবত তার নিরক্ষীয় অঞ্চলের চারপাশে একটি গ্যাসের চাকতি নির্গত করে। এই সহচরদের সাথে নিউট্রন তারার কক্ষপথ সাধারণত বড় এবং খুরই উপবৃত্তাকার আকারের হয়। নিউট্রন তারা যখন নক্ষত্র বেষ্টনী চাকতির কাছাকাছি বা মধ্য দিয়ে যায় তখন এটি চাকতির উপাদানগুলিকে গ্রহণ করে এবং একটি অস্থায়ী এক্স-রে পালসারে পরিণত হয়। বি তারাটিকে বেষ্টিত চাকতিটি কোনো অজানা কারণে প্রসারিত এবং সংকোচিত হয়। ফলে, এই অস্থায়ী এক্স-রে পালসারগুলি শুধুমাত্র থেমে থেমে পর্যবেক্ষণযোগ্য। প্রায়শই কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর পর এক্স-রের স্পন্দনের ঘটনা পর্যবেক্ষীত হয়।[]

ঘূর্ণন আচরণ

রেডিও পালসার (ঘূর্ণন চালিত পালসার) এবং এক্স-রে পালসার পরস্পর খুবই ভিন্ন ঘূর্ণন আচরণ প্রদর্শন করে এবং তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্পন্দন উৎপাদন করার ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে যদিও এটি স্বীকৃত যে উভয় প্রকার পালসারই একটি ঘূর্ণয়মান চৌম্বকীয় নিউট্রন তারার প্রকাশ। উভয় ক্ষেত্রে নিউট্রন তারাটির ঘূর্ণন চক্র স্পন্দন কালের মাধ্যমে শনাক্ত হয়।

এদের প্রধান পার্থক্য হলো, রেডিও পালসারগুলিতে কয়েক মিলিসেকেন্ড থেকে কয়েক সেকেন্ডের ক্রম অনুযায়ী পর্যায়কাল থাকে এবং সমস্ত রেডিও পালসার কৌণিক ভরবেগ হারিয়ে ধীর হতে থাকে। অন্যদিকে, এক্স-রে পালসার ভিন্ন ভিন্ন ঘূর্ণন আচরণ প্রদর্শন করে। কিছু এক্স-রে পালসারকে ধারাবাহিকভাবে দ্রুত থেকে দ্রুত বা ধীর থেকে ধীর গতিতে ঘুরতে দেখা যায় (মাঝে মধ্যে এই প্রবণতায় অনিয়মিত পরিবর্তন সহ) যেখানে অন্যরা স্পন্দন কালে সামান্য পরিবর্তন দেখায় বা অনিয়মিত ঘূর্ণন-হ্রাস এবং ঘূর্ণন-বৃদ্ধি মূলক আচরণ প্রদর্শন করে।

এই পার্থক্যের ব্যাখ্যা দুই শ্রেণীর পালসারের ভৌত প্রকৃতিতে পাওয়া যেতে পারে। ৯৯% এরও বেশি রেডিও পালসার হ'ল একক বস্তু যা তাদের আবর্তনীয় শক্তি আপেক্ষিক কণা এবং চৌম্বকীয় দ্বিপদী আকারে বিকিরীত করে এবং তাদের পরিবেষ্টন কৃত যে কোনও নীহারিকাকে আলোকিত করে তুলতে পারে। বিপরীতে, এক্স-রে পালসারগুলি যুগ্ম তারা ব্যাবস্থার সদস্য এবং নাক্ষত্রিক বায়ু বা বিবৃদ্ধি চাকতি থেকে এরা পদার্থ সঞ্চিত করে। সঞ্চিত পদার্থ, নিউট্রন তারায় কৌণিক ভরবেগ স্থানান্তরিত করে (বা গ্রহণ করে) যার ফলে আবর্তন হার বাড়তে বা হ্রাস পেতে পারে যা প্রায়শই রেডিও পালসারগুলিতে ঘূর্ণন হ্রাসের তুলনায় শতগুণ বেশি দ্রুত হয়। ঠিক কী কারণে এক্স-রে পালসারগুলি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ঘূর্ণন আচরণ প্রদর্শন করে তা এখনও স্পষ্টভাবে নয়।

পর্যবেক্ষণ

এক্স-রে পালসারগুলি এক্স-রে টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করা হয় যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথের স্যাটেলাইট। যদিও এদের দ্বারা কিছু পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, তবে বেশিরভাগ পর্যবেক্ষণ বেলুন বা বাদন রকেট দ্বারা চালিত ডিটেক্টর ব্যবহার করে এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যার শুরুর বছরে করা হয়। ১৯৭১ সালে উহুরু এক্স-রে স্যাটেলাইট, প্রথম এক্স-রে পালসার আবিষ্কার করে যার নাম সেন্টোরাস এক্স-৩

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা

  1. Exploring the X-ray Universe, Philip. A. Charles, Frederick D. Seward, Cambridge University Press, 1995, Chap. 7.
  2. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি