কারদাশেভ মাপনী

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

টেমপ্লেট:ভবিষ্যৎ বিদ্যা

তিনটি পরিকল্পনামূলক উপস্থাপনা: পৃথিবী, সৌরজগৎ এবং মিল্কিওয়ে
কারদাশেভ মাপনী অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত তিন ধরনের সভ্যতার শক্তি ব্যবহারের অনুমান

কারদাশেভ মাপনী হলো শক্তি ব্যবহারের সক্ষমতার ভিত্তিতে কোন সভ্যতার প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করার একটি মাপনী। ১৯৬৪ সালে সোভিয়েত জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাই কারদাশেভ এই মাপনী প্রবর্তন করেন।[]

প্রকারভেদ

মাপনীটির তিনটি মূল প্রকারভেদ রয়েছে।[]

  • প্রথম শ্রেণির সভ্যতা, বা গ্রহীয় সভ্যতা — যারা তাদের গ্রহে উপলব্ধ সমস্ত শক্তি ব্যবহার এবং সঞ্চয় করতে পারে।
  • দ্বিতীয় শ্রেণির সভ্যতা, বা নাক্ষত্রিক সভ্যতা — যারা তাদের গ্রহ ব্যবস্থার সমস্ত শক্তি ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • তৃতীয় শ্রেণির সভ্যতা, বা ছায়াপথীয় সভ্যতা — যারা তাদের ছায়াপথের সমস্ত শক্তি ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

এছাড়াও ২টি বর্ধিত প্রকারভেদ রয়েছে।

  • চতুর্থ শ্রেণির সভ্যতা, বা সার্বজনীন সভ্যতা — যারা তাদের মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।[]
  • Ω (ওমেগা) শ্রেণির বা পঞ্চম শ্রেণির সভ্যতা বা বহু-সর্বজনীন সভ্যতা একাধিক মহাবিশ্বের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সম্ভবত মহাবিশ্ব তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে।[]

ব্যাখ্যা

১৯৬৪ সালে কারদাশেভ উপলব্ধ শক্তির মাত্রার ক্রমের ভিত্তিতে সভ্যতার তিনটি স্তরকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।

প্রথম শ্রেণি
এই শ্রেণির সভ্যতার প্রযুক্তিগত স্তর বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষের অর্জিত অবস্থার কাছাকাছি। বর্তমানে মানুষের মোট শক্তি ব্যবহারের মাত্রা হলো ≈৪টেমপ্লেট:E আর্গ/সেকেন্ড" (৪টেমপ্লেট:E ওয়াট).[] বর্তমানে, প্রথম শ্রেণির সভ্যতা হিসেবে সাধারণত এমন সভ্যতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় যারা তাদের মূল তারা থেকে গ্রহের উপর বিচ্ছুরিত সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে পারে (পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই শক্তির পরিমাণ ১.৭৪টেমপ্লেট:E ওয়াট,) যা পৃথিবীতে বর্তমানে অর্জিত পরিমাণের (≈২টেমপ্লেট:E) চেয়ে প্রায় দশ হাজার গুন। জ্যোতির্বিদ গিলারমো লেমারচাঁদ এটিকে ১০১৬ থেকে ১০১৭ ওয়াটের মধ্যে পৃথিবীতে সৌর বিচ্ছুরণের সমান শক্তি সক্ষমতা সহ সমসাময়িক পার্থিব সভ্যতার নিকটবর্তী স্তর হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[]
দ্বিতীয় শ্রেণি
নিজস্ব তারার বিকিরিত শক্তিকে ব্যবহার করতে সক্ষম সভ্যতা। উদাহরণস্বরূপ, ডাইসন স্ফিয়ার বা ম্যাটরিওশকা মস্তিষ্কের সফল নির্মাণের মাধ্যমে শক্তি ব্যবহারের হার ≈৪টেমপ্লেট:E আর্গ/সেকেন্ড-এ পৌঁছানো সম্ভব।[] লেমারচাঁদ এধরনের সভ্যতাকে নিজস্ব তারার সম্পূর্ণ বিকিরণ শক্তি ব্যবহার এবং পরিবহন করতে সক্ষম সভ্যতা হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। শক্তির ব্যবহার তখন সূর্যের আলোকরশ্মির সাথে তুলনীয় হবে, যা প্রায় ৪টেমপ্লেট:E আর্গ/সেকেন্ড (৪×১০২৬ ওয়াট)।[]
তৃতীয় শ্রেণি
নিজস্ব ছায়াপথের শক্তি অধিকৃত সভ্যতা, যাদের শক্তি ব্যবহারের হার ≈৪টেমপ্লেট:E আর্গ/সেকেন্ড।[] লেমারচাঁদ এধরনের সভ্যতাকে পুরো আকাশগঙ্গা ছায়াপথের তুলনামূলক শক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম সভ্যতা হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন, যা প্রায় ৪টেমপ্লেট:E আর্গ/সেকেন্ড (৪×১০৩৭ ওয়াট).[]

কারদাশেভ মনে করেছিলেন যে চতুর্থ শ্রেণির সভ্যতার উপস্থিতি অসম্ভব, সুতরাং তিনি তৃতীয় শ্রেণির পর আর এগোন নি, তবে নতুন শ্রেণি (শূন্য, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ) প্রস্তাব করা হয়েছে।

মানব সভ্যতার বর্তমান অবস্থা

সমগ্র বিশ্বের বার্ষিক শক্তির ব্যবহার
Color photo. Man sitting wearing a suit and smiling.
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সেগানের মতে, মানব সভ্যতা বর্তমানে প্রযুক্তিগত কৈশোরের এক পর্যায়ে রয়েছে, যারা "কারদাশেভ মাপনীতে প্রথম শ্রেণির সভ্যতার পূর্বাবস্থায় রয়েছে"

বর্তমান সময়ে মানব সভ্যতা এখনও প্রথম শ্রেণির স্তরে পৌছাতে পারেনি। পদার্থবিজ্ঞানী এবং ভবিষ্যতদ্রষ্টা মিশিও কাকু অনুযায়ী, যদি মানুষ প্রতি বছর গড়ে ৩ শতাংশ হারে তাদের শক্তি ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি করে, তবে ১০০-২০০ বছরের মধ্যে মানুষ প্রথম শ্রেণির সভ্যতার মর্যাদা অর্জন করতে পারে। এরপর কয়েক হাজার বছরে দ্বিতীয় শ্রেণির অবস্থা এবং এক লক্ষ থেকে এক মিলিয়ন বছরের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির অবস্থা অর্জন করতে পারে।[]

কার্ল সেগান প্রথম (১০১৬ ওয়াট), দ্বিতীয় (১০২৬ ওয়াট) এবং তৃতীয় (১০৩৬ ওয়াট) শ্রেণির জন্য উল্লিখিত মানগুলিকে ইন্টারপোলেট এবং এক্সট্রাপোলেট করে মধ্যবর্তী মানগুলি (কারদাশেভের মূল মাপনী হিসাবে বিবেচিত নয়) সংজ্ঞায়নের পরামর্শ দিয়েছিলেন যার মাধ্যমে নিম্নোক্ত সূত্রটি পাওয়া যায়

K=log10P610,

যেখানে K হলো সভ্যতার কারদাশেভ মূল্যায়ন এবং P হলো ওয়াট এককে এটি কর্তৃক ব্যবহৃত শক্তি। এই এক্সট্রাপোলেশনটি ব্যবহার করে, কারদাশেভ দ্বারা নির্ধারিত নয় এমন "শূন্য শ্রেণির" সভ্যতা প্রায় ১ মেগাওয়াট শক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে, এবং ১৯৭৩ সাল নাগাদ মানব সভ্যতার শ্রেণি ছিল প্রায় ০.৭ (যেহেতু ১৯৭০ এর দশকে মানব সভ্যতার শক্তির ব্যবহার ছিল ১০ টেরাওয়াট)।[]

২০১৮ সালে, মোট বিশ্ব জ্বালানি খরচ ১,৬১,২৪৯ টেরাওয়াট-ঘণ্টা,[] যা ১৮.৪০ টেরাওয়াট গড় বিদ্যুৎ খরচ বা সেগানের আন্তঃবিবর্তিত কারদাশেভ মাপনীর ০.৭৩ এর সমান।

শক্তির বিকাশ

প্রথম শ্রেণির সভ্যতার পদ্ধতি

  • ফিউশন ক্ষমতার বৃহত আকারের প্রয়োগ। ভর-শক্তি সমতা অনুযায়ী, প্রথম শ্রেনির সভ্যতা সেকেন্ডে প্রায় ২ কেজি পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাত্ত্বিকভাবে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২৮০ কেজি বা ৮.৯×১০ কেজি/বছর হারে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে পরিণত করলে সমপরিমাণ শক্তি মুক্ত হতে পারে।[] এক ঘনকিমি পানিতে প্রায় ১০১১ কেজি হাইড্রোজেন রয়েছে এবং পৃথিবীর মহাসাগরগুলিতে প্রায় ১.৩×১০ ঘনকিমি পানি রয়েছে, অর্থাৎ পৃথিবীতে উপলব্ধ হাইড্রোজেনের ভিত্তিতে মানুষ এই হারে শক্তি উৎপাদন ভূতাত্ত্বিক সময়-মাপনীতে অব্যাহত রাখতে পারবে।
  • প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিমেটারের বর্তমান প্রযুক্তির বর্তমান স্তরের তুলনায় বহু মাত্রায় একটি আকারে শক্তি উৎপাদন করার একটি ব্যবস্থা থাকবে উদ্ধৃতি আবশ্যক অ্যান্টিমেটার-পদার্থের সংঘর্ষে, কণাগুলির পুরো বাকী ভরটি তেজস্ক্রিয় শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাদের শক্তি ঘনত্ব (ভর হিসাবে প্রকাশিত শক্তি) পারমাণবিক বিচ্ছেদ ব্যবহার করে তার চেয়ে চার মাত্রার পরিমাণের চেয়ে বেশি এবং ফিউশন থেকে সেরা ফলনের চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রার বৃহত্তর। [10] 1 কেজি পদার্থের সাথে 1 কেজি অ্যান্টি-ম্যাটারের প্রতিক্রিয়া 1.8 × 1017 জে (180 পেটাজোল) শক্তি উৎপাদন করে যদিও অ্যান্টিম্যাটার কখনও কখনও শক্তির উত্স হিসাবে প্রস্তাবিত হয়, এটি সম্ভব হয় না। কৃত্রিমভাবে অ্যান্টিমেটার উৎপাদন করা - পদার্থবিজ্ঞানের আইনগুলির বর্তমান বোঝাপড়া অনুসারে - প্রথমে ভরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা জড়িত, যা কোনও নেট শক্তি দেয় না। কৃত্রিমভাবে তৈরি অ্যান্টিমেটার কেবলমাত্র শক্তি সঞ্চয় হিসাবে নয়, শক্তি সঞ্চয় হিসাবে একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহারযোগ্য, যদি না ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত বিকাশ (ব্যারিওন সংখ্যার সংরক্ষণের বিপরীতে, যেমন এন্টিমেটারের পক্ষে সিপি লঙ্ঘন) সাধারণ পদার্থকে রূপান্তর করতে না দেয় বিরোধী বিষয়। তাত্ত্বিকভাবে, ভবিষ্যতে মানবেরা অ্যান্টিমেটারের প্রাকৃতিকভাবে সংখ্যক প্রাকৃতিক উত্স উদ্ভিদ চাষাবাদ এবং সংগ্রহ করার ক্ষমতা থাকতে পারে।

দ্বিতীয় শ্রেণির সভ্যতার পদ্ধতি

তৃতীয় শ্রেণির সভ্যতার পদ্ধতি

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা