ক্লেরো-র উপপাদ্য (অভিকর্ষ)

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

টেমপ্লেট:রুক্ষ অনুবাদ টেমপ্লেট:রচনা সংশোধন

চিত্র ১: একটি উপবৃত্তক
চিত্র ২: একটি উপবৃত্তকের তারের কাঠামোভিত্তিক উপস্থাপন (পিষ্ট আবর্ত উপগোলক)
১৯৮৪ সালে বিশ্ব ভূগাণিতিক ব্যবস্থাতে সংজ্ঞায়িত পৃথিবীর নিরক্ষীয় (টেমপ্লেট:Mvar), মেরুদেশীয় (টেমপ্লেট:Mvar) ও গড় ব্যাসার্ধসমূহ (সঠিক মাপে দেখানো হয়নি)

ক্লেরো-র উপপাদ্য উদস্থিতিক সাম্যাবস্থায় অবস্থিত একটি সান্দ্র ঘূর্ণায়মান উপবৃত্তকের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র এবং কেন্দ্রবিমুখী বলের ক্রিয়াধীন পৃষ্ঠতলের মাধ্যাকর্ষণ বল বা অভিকর্ষ বলকে চরিত্রায়িত করে। ১৭৩৩ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী আলেক্সি ক্লোদ ক্লেরো একটি গ্রন্থে এটি প্রকাশ করেন।

[] যাতে পৃথিবী যে একটি ঘূর্ণায়মান পিষ্ট আবর্ত উপগোলক, তার স্বপক্ষে

ভৌত ও ভূগাণিতিক সাক্ষ্যপ্রমাণগুলিকে একত্রিত করা হয়।[][] প্রাথমি কভাবে এটিকে ভূপৃষ্ঠের যে কোনো বিন্দুর অভিকর্ষকে সেই বিন্দুর অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত করতে ব্যবহৃত হত, এবং এভাবে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অক্ষাংশে অভিকর্ষের মান পরিমাপ করে সেগুলি থেকে পৃথিবীর উপবৃত্তীয়তা গণনা করা সম্ভব হয়। তবে বর্তমানে ক্লেরো-র উপপাদ্যের পরিবর্তে সোমিলিয়ানা সমীকরণ ব্যবহার করা হয়।

ইতিহাস

যদিও প্রাচীনকাল থেকেই জানা ছিল যে পৃথিবীটি গোলকাকৃতির, তবুও ১৭শ শতকের প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে এটি প্রকৃতপক্ষে নিখুঁত গোলক নয়। ১৬৭২ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জঁ রিশের প্রথম ভূপৃষ্ঠের সব অবস্থানে মাধ্যাকর্ষণ বলের মান যে সমান নয় (পৃথিবী নিখুঁত গোলক হলে এরূপ হত না), তার প্রমাণ খুজে পান; তিনি একটি দোলক ঘড়ি ফরাসি গায়ানার কাইয়েনে নিয়ে গিয়ে দেখতে পান যে ঘড়ির দোলকটি প্যারিসের হারের তুলনায় প্রতিদিন টেমপ্লেট:Frac মিনিট করে হারায়।[][] এই পর্যবেক্ষণটি প্যারিসের তুলনায় কাইয়েন শহরে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান যে কম, তার দিকে ইঙ্গিত করে। পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণের সময় দোলক অভিকর্ষমাপক সাথে নিয়ে যাওয়ার প্রচলন হয় এবং আস্তে আস্তে এ ব্যাপারটি আবিষ্কৃত হয় যে অক্ষাংশের বৃদ্ধির সাথে সাথে অভিকর্ষের মান কমতে থাকে এবং অভিকর্ষজ ত্বরণের মান নিরক্ষীয় অঞ্চলের চেয়ে মেরুতে প্রায় ০.৫% বেশি থাকে।

ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী আইজাক নিউটন তাঁর প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা (১৬৮৭) গ্রন্থে এই ব্যাপারটির একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সেখানে তিনি পৃথিবীর আকৃতির বিষয়ে তাঁর তত্ত্ব এবং গণনাসময়হের একটি রূপরেখা প্রদান করেন। নিউটন সঠিকভাবে এই তত্ত্ব দেন যে পৃথিবী একটি নিখুঁত গোলক নয়, তবে একটি কমলার মত উপরে নিচে চাপা ও মাঝ বরাবর স্ফীত একটি পিষ্ট আবর্ত উপগোলক (Oblate spheroid)। তিনি পৃথিবীর নিজ অক্ষে ঘূর্ণনজনিত কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে পৃথিবীর মেরু দুইটি কিছুটা চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। এই আকৃতির কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠস্থিত কোনও ভূকেন্দ্রের অধিকতর নিকটে অবস্থিত হয়, তাই সেই বিন্দুতে অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বেশি শক্তিশালী। নিউটন জ্যামিতিক গণনাসমূহ প্রয়োগ করে পৃথিবীর আনুমানিক উপবৃত্তক আকৃতির সপক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট যুক্তি প্রদান করেন।[]

প্রিন্সিপিয়ার লক্ষ্য প্রাকৃতিক ঘটনার সঠিক তথ্য সরবরাহ করা নয়, বরং বিজ্ঞানের এই অমীমাংসিত কারণগুলির সম্ভাব্য সমাধানকে তাত্ত্বিক করে তোলা। নিউটন বিজ্ঞানীদের অব্যক্ত সমস্যাগুলোকে আরও দেখার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যে দুজন বিশিষ্ট গবেষক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তারা হলেন- আলেক্সি ক্লেরো এবং পিয়ের লুই মোপের্ত্যুই। তারা উভয়ই পৃথিবীর আকার নিয়ে নিউটনের তত্ত্বের বৈধতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তারা দ্রাঘিমারেখাংশ সঠিকভাবে পরিমাপের প্রয়াসে ফিনল্যান্ডের লাপলান্ডে একটি অভিযান চালান। এ জাতীয় পরিমাপ থেকে তারা পৃথিবীর উৎকেন্দ্রিকতা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে সক্ষম হন, যেখানে উৎকেন্দ্রিকতা একটি নিখুঁত গোলক থেকে পৃথিবীর পার্থক্যের মাত্রা নির্দেশ করে। ক্লেরো প্রমাণ করেন যে পৃথিবী যে উপবৃত্তক আকৃতির, এ সংক্রান্ত নিউটনের তত্ত্বটি সঠিক, তবে নিউটনের গণনায় ভুল ছিল। তিনি তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলি সম্পর্কে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির কাছে একটি চিঠি লেখেন।[] রয়্যাল সোসাইটি পরের বছরই ১৭৩৭ সালে ফিলোসফিকাল ট্রানজাকশনস নামক গবেষণা সাময়িকীতে এ ব্যাপারে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল যেখানে ক্লেরো-র গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। ক্লেরো তাঁর গবেষণায় নিউটনের সমীকরণগুলো কীরকম ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং এগুলি যে পৃথিবীর উপবৃত্তক আকৃতি প্রমাণে সমর্থ নয়, সে প্রসঙ্গগুলি আলোচনা করেন।[] তবে তিনি নিউটনের তত্ত্বটির ত্রুটিগুলি সংশোধন করেন, যার ফলে শেষ পর্যন্ত নিউটনের তত্ত্বটি সঠিক প্রমাণিত হয়। ক্লেরো বিশ্বাস করতেন যে নিউটন নির্দিষ্ট কোনও কারণের বশবর্তী হয়েই পৃথিবীর এই আকার বেছে নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি প্রিন্সিপিয়ায় এই পছন্দের সপক্ষে কোনও প্রমাণ প্রদান করেননি। আবার ক্লেরো-র তাঁর নিজের নিবন্ধটিতেও তার যুক্তিটিকে সমর্থনকারী কোনও বৈধ সমীকরণ প্রদান করেননি। ফলে এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে ক্লেরো তাঁর তেওরি দ্য লা ফিগ্যুর দ্য লা তের ("পৃথিবীর আকৃতির তত্ত্ব") গ্রন্থটিতে এ প্রসঙ্গে একটি যথাযথ উত্তর প্রদান করেন। সেই গ্রন্থটিতে তিনি যে ধারণাটির পক্ষে প্রচারণা চালান, সেই ধারণাটিই বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লেরো-র উপপাদ্য হিসাবে অধিক পরিচিত।

সূত্র

ϕ অক্ষাংশে একটি গোলকের পৃষ্ঠের অভিকর্ষজ ত্বরণ g-এর জন্য ক্লেরো-র সূত্রটি ছিল:[][১০]

g(φ)=Ge[1+(52mf)sin2φ]

যেখানে Ge নিরক্ষরেখায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান, m নিরক্ষরেখায় অভিকর্ষ বলের সাপেক্ষে কেন্দ্রবিমুখী বলের অনুপাত এবং f পৃথিবী মধ্যরেখার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে সমতলতা, যা নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত:

f=aba

(যেখানে টেমপ্লেট:Math, টেমপ্লেট:Math)।

ক্লেরো এই পূর্বানুমানের অধীনে সূত্রটি প্রতিপাদন করেন যে তদন্তাধীন বস্তুটি সমঘনত্ববিশিষ্ট সমকেন্দ্রিক সমাক্ষিক উপগোলকীয় স্তরের সমন্বয়ে গঠিত।[১১] এই গবেষণাকর্মটি পরবর্তীকালে পিয়ের সিমোঁ লাপ্লাস অনুসরণ করেন, যিনি সমঘনত্ববিশিষ্ট পৃষ্ঠগুলিকে উপগোলক হতে হবে, এই প্রাথমিক শর্তটি শিথিল করেন।[১২] জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস ১৮৪৯ সালে দেখান যে উপপাদ্যটি ঘনত্বের যে কোনও সূত্রের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব, যদি বাহ্যিক পৃষ্ঠটি একটি ভারসাম্যবিশিষ্ট উপগোলক হয়।[১৩][১৪] বিষয়টির ইতিহাসসহ g এর জন্য আরও বিশদ সমীকরণগুলি মোহাম্মদ খানের রচনাতে পাওয়া যাবে।[১৫]

সোমিলিয়ানা সমীকরণ

g-এর জন্য উপরের রাশিটি সোমিলিয়ানা সমীকরণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে (ইতালীয় বিজ্ঞানী কার্লো সোমিলিয়ানার নামানুসারে):

g(φ)=Ge[1+ksin2φ1e2sin2φ],

যেখানে,

  • e2=a2b2a2 উপগোলকের উৎকেন্দ্রিকতা, বর্গ করা;
  • Ge,Gp যথাক্রমে নিরক্ষীয় এবং মেরুতে সংজ্ঞায়িত মাধ্যাকর্ষণ;
  • k=bGpaGeaGe (সূত্রের ধ্রুবক);

পৃথিবীর জন্য, টেমপ্লেট:Math; টেমপ্লেট:Math; টেমপ্লেট:Math; টেমপ্লেট:Math:[১৬][১৭]

g(φ)=9.7803253359[1+0.00193185265241sin2φ10.00669437999013sin2φ]ms2

ভূগণিত

পৃথিবীর উপগোলকাকৃতি আকার পৃথিবীর অক্ষে পৃথিবী ঘূর্ণনের ফলে মাধ্যাকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বলের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলাফল।[১৮][১৯] আইজাক নিউটন প্রিন্সিপিয়াতে প্রস্তাব করেছিলেন যে সমজাতীয় আবর্তিত পৃথিবীর ভারসাম্য রূপটি f সমতলতা বিশিষ্ট একটি ঘূর্ণায়মান উপবৃত্তকাকার যার মান টেমপ্লেট:Sfrac[২০][২১] ফলস্বরূপ মাধ্যাকর্ষণ থেকে মেরুতে মাধ্যাকর্ষণ বল বৃদ্ধি হয়। ক্লেরো-র উপপাদ্য প্রয়োগ করে লাপ্লাস ১৫টি মাধ্যাকর্ষণ মান থেকে f এর মান টেমপ্লেট:Sfrac পেয়েছেন। একটি আধুনিক গণনা হল টেমপ্লেট:Sfrac[২২] আরও বিশদের জন্য পৃথিবীর আকার দেখুন।

ভূগণিতের মান ভূ-প্রতিমান তৈরির বিশদ বিবরণের জন্য চ্যাটফিল্ডের গ্রন্থটি দেখুন।[২৩]

তথ্যসূত্র

  1. Théorie de la figure de la terre, tirée des principes de l'hydrostatique (Theory of the shape of the earth, drawn from the principles of hydrostatics) From the catalogue of the scientific books in the library of the Royal Society.
  2. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  3. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  4. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  5. টেমপ্লেট:সম্মেলন উদ্ধৃতি
  6. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  7. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  8. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  9. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  10. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  11. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  12. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  13. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  14. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  15. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  16. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  17. Eq. 2.57 in MIT Essentials of Geophysics OpenCourseWare notes
  18. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  19. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  20. Isaac Newton: Principia Book III Proposition XIX Problem III, p. 407 in Andrew Motte translation.
  21. See the Principia on line at Andrew Motte Translation
  22. Table 1.1 IERS Numerical Standards (2003))
  23. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি

টেমপ্লেট:প্রবেশদ্বার দণ্ড