ফুকোর দোলক

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
শিল্পীর কল্পনায় ফুকোর দোলক

ফুকোর দোলক (টেমপ্লেট:IPAc-en টেমপ্লেট:Respell; টেমপ্লেট:IPA-fr) পৃথিবীর আহ্নিক গতিকে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রদর্শন করার এক সরল যন্ত্র বিশেষ। ফরাসী পদার্থবিদ জাঁ বার্নার্ড লিওঁ ফুকোর নামানুসারে দোলকের নাম ফুকোর দোলক রাখা হয়।

বলবিজ্ঞান

প্যারিসের প্যানথিওনে (৪৮°৫২' উত্তর) অবস্থিত ফুকোর দোলকের অ্যানিমেশন- সবুজ দাগগুলি ঘূর্ণায়মান ভূমিতে দোলকের পথ ও নীল দাগগুলি দোলকের তলের ঘূর্ণন পথ

ফুকোর দোলক যে কোন উল্লম্ব তলে দোলনরত একটি লম্বা দোলক। স্থির পৃথিবীর সাপেক্ষে এই দোলনের উল্লম্ব তল আপাতদৃষ্টিতে ঘোরে বলে মনে হয়। [] উত্তর মেরু বা দক্ষিণ মেরুতে দোলনের তল ব্রহ্মান্ডের দূরবর্তী ভরের সাপেক্ষে স্থির থাকে। কিন্তু পৃথিবী এক নক্ষত্র দিনে একবার সম্পূর্ণ আবর্তন করায় উত্তর মেরুতে ফুকোর দোলক একদিনে ঘড়ির কাঁটার দিকে ও দক্ষিণ মেরুতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে সম্পূর্ণ আবর্তন করে। নিরক্ষরেখায় ফুকোর দোলকের দোলন তল পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির থাকে। অন্য স্থানাঙ্কে এই দোলকের দোলন তল মেরু অঞ্চলের আবর্তনের চেয়ে ধীরে আবর্তিত হয়। ঘড়ির কাঁটার দিকে আবর্তিত দোলকের কৌণিক গতিবেগ ω অক্ষাংশ φ এর সাইনের সমানুপাতী হয়।

ω=360sinφ /day

যেখানে নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ যথাক্রমে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক ধরা হয়। এই সূত্র অনসারে বলা যায়, ফুকোর দোলক ৩০° দক্ষিণ অক্ষাংশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং ৩০° উত্তর অক্ষাংশে ঘড়ির কাঁটার দিকে দুই দিনে ৩৬০° আবর্তন করে। আবার এই দোলক দক্ষিণ মেরুতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং উত্তর মেরুতে ঘড়ির কাঁটার দিকে এক দিনেই পূর্ণ আবর্তন করে।

দোলকের দ্বারা পৃথিবীর আহ্নিক গতির প্রদর্শনে অক্ষাংশের উপর নির্ভরতার জটিলতা কমাতে ফুকো ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে একটি ঘূর্ণদর্শী ব্যবহার করেন। যে কোন স্থানাঙ্কে এক দিন পরে ঘূর্ণদর্শীর ঘূর্ণায়মান অংশের অক্ষ পুনরায় একই স্থানে ফিরে আসে।

ফুকোর মূল দোলক

প্যারিসের প্যানথিয়নে ফুকোর দোলক

১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিস মানমন্দিরে প্রথম ফুকোর দোলকের প্রদর্শনী হয়। কয়েক সপ্তাহ পরে জাঁ বার্নার্ড লিওঁ ফুকো প্যারিসের প্যানথিয়নের ছাদ থেকে ৬৭ মিটার দড়ি থেকে ২৮ কিলোগ্রামের সীসার তৈরী গোলক ঝুলিয়ে তার বিখ্যাত দোলকটি নির্মাণ করেন। এই দোলকের তলটি ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রতি ঘণ্টায় ১১° ঘোরে এবং ৩২.৭ ঘণ্টায় একবার সম্পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন হয়। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে ব্যবহৃত দোলকটি ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসের কনজার্ভাটয়ের ন্যাশানাল ডেস আর্টস এট মেটিয়ার্সে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে দোলকের পঞ্চাস বছর পূর্তিতে প্যারিসের প্যানথিয়নে দ্বিতীয়বার এই দোলককে স্থাপন করা হয়। []

২০০০ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসের মিউজি ডেস আর্টস এট মেটিয়ার্সে স্থাপন করা হয়। [] ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই এপ্রিল দড়ি ছিড়ে দোলকটির অপুরণীয় ক্ষতি হয়। [][] ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ফুকোর মূল দোলকের একটি সঠিক প্রতিলিপি প্যানথিয়নে রাখা আছে।

দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত ফুকোর দোলক

দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ফুকোর দোলকের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। এই স্থানে ফুকোর দোলক থাকলে দোলকটি প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এক বার পূর্ণ আবর্তন করতে পারে। জন বার্ড, জেনিফার ম্যাককালাম, মাইকেল টাউন এবং অ্যালেন বেকার নামক চার গবেষক আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্রে দক্ষিণ মেরু দোলক প্রকল্প চালু করেন। এই প্রকল্পে দোলকটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৩০০ মিটার উচ্চতায় টেমপ্লেট:রূপান্তর তাপমাত্রায় ছয়তল বিশিষ্ট একটি সিড়িঘর থেকে ঝোলানো হয়। দোলকটির দৈর্ঘ্য ৩৩ মিটার এবং এর সঙ্গে ২৫ কিলোগ্রামের এক গোলক বাঁধা রয়েছে। এই স্থানে বাতাসের চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে ৩৫ শতাংশ কম হওয়ায় দোলকটির ওপর বাতাসের বাধা কম। এই দোলক দক্ষিণ মেরুতে স্থাপিত হওয়ার পর তা প্রত্যাশা মতো চব্বিশ ঘণ্টায় একবার আবর্তন করছে বলে গবেষকেরা নিশ্চিত করেছেন। [][])

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ