মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যা

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যা নোডস
মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যা - বড়

কোয়ান্টাম বলবিদ্যায়, মুখ্য বা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা (principal quantum number) হচ্ছে কোন পরমাণুতে বিদ্যমান প্রতিটি ইলেক্ট্রনের দশার বর্ণনাসূচক চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার একটি। এর মানসমূহ স্বাভাবিক সংখ্যা ( হতে শুরু করে), যার কারণে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চলক (discrete variable)।

মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যা ছাড়া, কোন আবদ্ধ ইলেকট্রনের জন্য বাকি কোয়ান্টাম সংখ্যাগুলো হচ্ছে- অ্যাজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যা (), চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা (m), এবং ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা (s)।

সার্বিক আলোচনা ও ইতিহাস

n এর মান যত বাড়তে থাকে, ইলেকট্রন এর শক্তি তত বাড়তে থাকে, এবং এজন্য নিউক্লিয়াসের সাথে তার বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। n এর উচ্চতর মানের জন্য, নিউক্লিয়াস থেকে ইলেকট্রনের গড় দূরত্ব বাড়তে থাকে। n এর প্রতিটি মানের জন্য অ্যাজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যা, এর n-সংখ্যক মান পাওয়া যায় (0 থেকে n1 পর্যন্ত, সীমাবর্তী মানসহ)। এ কারণে, উচ্চতর n এর জন্য অধিক সংখ্যক ইলেকট্রন দশা বিদ্যমান থাকে। ইলেকট্রন ঘূর্ণনের দুটি দশা বিবেচনা করলে, প্রতিটি n স্তর 2n2 সংখ্যক পর্যন্ত ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে।

নিম্নে বর্ণিত সরল এক–ইলেকট্রন মডেলের ক্ষেত্রে, একটি ইলেকট্রনের মোট শক্তি হচ্ছে মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যা, n এর ঋণাত্মক বিপরীত দ্বিঘাত ফাংশন, যা প্রত্যেক n>1 এর জন্য অবক্ষয়িত শক্তিস্তর (degenerate energy levels) এর দিকে ধাবিত হয়। আরও জটিল ব্যবস্থায়– যেখানে নিউক্লিয়াস–ইলেকট্রন কুলম্ব বল ছাড়াও অন্যান্য বল ক্রিয়াশীল থাকে, সেখানে ঐ স্তরগুলো বিভক্ত হয়ে যায়। বহু-ইলেক্ট্রনবিশিষ্ট পরমাণুর ক্ষেত্রে এই বিভক্তি “উপস্তর” (subshell) এর সৃষ্টি করে, যাদের দ্বারা নির্দেশ করা হয়। পারমাণবিক সংখ্যা ৫ (বোরন) থেকে শুরু করে, কেবলমাত্র n দ্বারা ইলেকট্রনের শক্তিস্তরের বিবরণ ক্রমেই অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে, এবং পটাশিয়াম (Z=19) থেকে শুরু করে তা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়।

মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যার ধারণা প্রথম সৃষ্টি হয় বোর পরমাণু মডেলে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, ভিন্ন ভিন্ন শক্তিস্তরের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশের সাথে সাথে, সরল বোর মডেলের জায়গায় জটিলতর পারমাণবিক অরবিটাল তত্ত্বের আগমন ঘটে। তবে, আধুনিক তত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত মুখ্য বা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।

প্রতিপাদন

টেমপ্লেট:মূল নিবন্ধকোন পরমাণুর শক্তির দশার সাথে একটি কোয়ান্টাম সংখ্যার সেট সংশ্লিষ্ট থাকে। চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যা n,,m এবং s দ্বারা কোন পরমাণুর নির্দিষ্ট একটি ইলেকট্রনের সম্পূর্ণ ও অনন্য কোয়ান্টাম দশা নির্দেশিত হয়। একে তরঙ্গ ফাংশন বা অরবিটাল বলা হয়। পাউলি’র বর্জন নীতি অনুসারে, একই পরমাণুতে অবস্থিত যে কোন দুটি ইলেকট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যাই অভিন্ন হতে পারে না। শ্রোডিঙ্গার তরঙ্গ সমীকরণ এর সরলীকরণের মাধ্যমে এমন তিনটি সমীকরণ পাওয়া যায়, যেগুলোর সমাধান করলে প্রথম তিনটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান নির্ণয় করা যায়। অতএব, প্রথম তিনটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান পরস্পর সংশ্লিষ্ট। তরঙ্গ সমীকরণের বৃত্তীয় অংশের সমাধান করলে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান পাওয়া যায়, যা নিম্নে দেখানো হয়েছে।

শ্রোডিঙ্গার তরঙ্গ সমীকরণ শক্তির আইগেন–দশা (eigenstate) বর্ণনা করে, অনুষঙ্গী বাস্তব সংখ্যা

En

এবং একটি নির্দিষ্ট মোট শক্তির (

En

এর মান) মাধ্যমে। কোন হাইড্রোজেন পরমাণুতে আবদ্ধ দশার শক্তি পাওয়া যায় নিম্নরূপে:

En=E1n2=13.6 eVn2,n=1,2,3,
n

এর মান কেবল ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা হতে পারে। শক্তিস্তরের ধারণা এবং চিহ্নলিপি পূর্ববর্তী বোর পরমাণু মডেল হতে নেওয়া। শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ দ্বারা সমতল দ্বিমাত্রিক বোর পরমাণু হতে ত্রিমাত্রিক তরঙ্গ ফাংশন মডেলের বিকাশ ঘটেছে। বোর মডেলে, অনুমোদিত কক্ষপথ নির্ধারণ করা হয়েছিল অরবিটালের কৌণিক ভরবেগ (

𝐋

) এর কোয়ান্টায়িত (বিচ্ছিন্ন) মান দ্বারা, নিম্নোক্ত সমীকরণ অনুসারে:

𝐋=n=nh2π

যেখানে

n=1,2,3,

; একে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা বলা হয়, এবং

h=

প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক

কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় এই সমীকরণটি সঠিক নয় কেননা কৌণিক ভরবেগের মান নির্ধারিত হয় অ্যাজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যার দ্বারা, তবে শক্তিস্তরগুলো যথার্থ এবং প্রচলিতভাবে ইলেকট্রনের বিভব শক্তিগতি শক্তির সমষ্টির সমান হয়।

প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n, প্রতিটি অরবিটালের আপেক্ষিক সর্বমোট শক্তি প্রকাশ করে। নিউক্লিয়াস থেকে দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে, প্রতিটি অরবিটালের শক্তির মাত্রা বাড়তে থাকে। যে সকল অরবিটালের n এর মান একই, তাদের সেটকে প্রায়শই ইলেকট্রনের শক্তিস্তর (electron shell) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

যে কোন তরঙ্গ-পদার্থ মিথষ্ক্রিয়ায় বিনিময়কৃত ন্যূনতম শক্তির পরিমাণ তরঙ্গের কম্পাংক এবং প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের গুণফলের সমান। এর ফলে তরঙ্গ কণা-সদৃশ শক্তির প্যাকেট প্রদর্শন করে, যাদেরকে কোয়ান্টা (একবচনে কোয়ান্টাম) বলে অভিহিত করা হয়। এর ভিন্ন ভিন্ন মানের জন্য শক্তিস্তরগুলোর মধ্যে সৃষ্ট পার্থক্য দ্বারা কোন মৌলের নিঃসরণ বর্ণালি (emission spectrum) নির্ধারিত হয়।

পর্যায় সারণীর চিহ্নলিপিতে ইলেকট্রনের প্রধান শেল বা শক্তিস্তরগুলোকে মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত রূপে চিহ্নিত করা হয়:

K(𝐧=1),L(𝐧=2),M(𝐧=3),

ইত্যাদি

প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা (

n

) এবং বৃত্তীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা (

nr

) পরস্পরের সাথে নিম্নরূপে সম্পর্কিত:

n=nr++1

যেখানে

হচ্ছে অ্যাজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যা এবং

nr

হচ্ছে বৃত্তীয় তরঙ্গ ফাংশনের নিস্পন্দ বিন্দুর (node) সংখ্যার সমান। কোন সাধারণ কুলম্ব ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন বর্ণালিবিশিষ্ট কোন কণার সুনির্দিষ্ট সামগ্রিক শক্তি পাওয়া যায়:

En=Z222m0aB2n2=Z2e4m022n2

যেখানে

aB

হচ্ছে বোর ব্যাসার্ধ

কোন কুলম্ব ক্ষেত্রে ইলেকট্রনের গতিজনিত কোয়ান্টাম যান্ত্রিক সমস্যার সমাধান হতে প্রাপ্ত এই বিচ্ছিন্ন শক্তি বর্ণালি, চিরায়ত সমীকরণে বোর-সমারফিল্ড কোয়ান্টায়ন নিয়ম প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্ত বর্ণালির সাথে সমাপতিত হয়। বৃত্তীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারা বৃত্তীয় তরঙ্গ ফাংশন R(r)-এ, নিস্পন্দ বিন্দুর সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।[]

মানসমূহ

রসায়নে, ইলেকট্রন শক্তিস্তর তত্ত্বে n=1,2,3,4,5,6,7 মানগুলো ব্যবহার করা হয়, যেখানে অষ্টম পর্যায়ের মৌলসমূহের জন্য n=8 ( এবং সম্ভাব্যভাবে n=9) এর অন্তর্ভুক্তিও প্রত্যাশিত।

পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে, উত্তেজিত দশার বর্ণনায় উচ্চতর n এর দেখা মেলে। নক্ষত্রমণ্ডলীয় মাধ্যম (interstellar medium) পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায় যে, পারমাণবিক হাইড্রোজেন এর বর্ণালি রেখা শতাধিক হয়ে থাকে, যার মান সর্বোচ্চ ৭৬৬[] পর্যন্ত বলে শনাক্ত করা গেছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা

বহিঃসংযোগ