তারা
টেমপ্লেট:রুক্ষ অনুবাদ টেমপ্লেট:রচনা সংশোধন

মহাকাশে অবস্থিত যে সকল বস্তু নিজের অভ্যন্তরে থাকা পদার্থকে জ্বালিয়ে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটাতে পারে এবং আলোক উজ্জ্বল হয় তাদেরকে নক্ষত্র বলা হয়। এছাড়া তারা, তারকা বা নক্ষত্র বলতে মহাশূন্যে প্লাজমা দশায় অবস্থিত অতি উজ্জ্বল এবং সুবৃহৎ গোলাকার বস্তুপিণ্ডকেও বোঝায়। উচ্চ তাপে তারা নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত নিজের জ্বালানি উৎপন্ন করে।
নিউক্লীয় সংযোজন থেকে উদ্ভূত তাপ ও চাপ মহকর্ষীয় সঙ্কোচনকে ঠেকিয়ে রাখে। জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে একটি তারার মৃত্যু হয়ে শ্বেত বামন অথবা নিউট্রন তারা আবার কখনো কৃষ্ণ বিবরের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী হতে সবচেয়ে কাছের তারা হচ্ছে সূর্য। তারা জ্বলজ্বল করার কারণ হচ্ছে, এর কেন্দ্রে নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা তারার পুরো অভ্যন্তরভাগ পার হয়ে বহিঃপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হয়। হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম অপেক্ষা ভারী প্রায় সকল মৌলই তারার কেন্দ্রে প্রথমবারের মত উৎপন্ন হয়েছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তারার বর্ণালি, দীপন ক্ষমতা বা গতি পর্যবেক্ষণ করে এর ভর, বয়স, রাসায়নিক গঠন এবং অন্যান্য অনেক ধর্মই বলে দিতে পারেন। তারাটির সর্বমোট ভরই মূলত তার বিবর্তন এবং চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়। অন্যান্য ধর্মগুলো নির্ণয় করা হয় বিবর্তনমূলক ইতিহাসের মাধ্যমে যার মধ্যে রয়েছে ব্যাস, ঘূর্ণন, চাপ এবং তাপমাত্রা। অনেকগুলো তারার তাপমাত্রাকে তাদের দীপন ক্ষমতার বিপরীতে একটি লেখচিত্রে স্থাপন করলে যে চিত্র পাওয়া যায় তাকে হের্টস্স্প্রুং-রাসেল চিত্র বলা হয়। এই চিত্রের মাধ্যমেই তারার বিবর্তনের বর্তমান দশা এবং এর বয়স নির্ণয় করা যায়।
মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে সংকোচিত হয়ে পড়ছে এমন একটি মেঘের মাধ্যমে তারার জীবনচক্র শুরু হয়। এই মেঘের মধ্যে থাকে মূলত হাইড্রোজেন, অবশ্য হিলিয়াম সহ অতি সামান্য বিরল ভারী মৌল থাকতে পারে। তারার কেন্দ্রটি যখন যথেষ্ট ঘন হয় তখন সেই কেন্দ্রের হাইড্রোজেন নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়ামে পরিণত হতে থাকে। তারার অভ্যন্তরভাগ থেকে শক্তি বিকিরণ এবং পরিচলনের এক মিশ্র প্রকিয়ায় বহির্ভাগে নির্গত হয়। এই প্রক্রিয়াগুলো তারাকে ধ্বসে পড়তে দেয় না এবং উৎপন্ন শক্তি একটি নাক্ষত্রিক বায়ু তৈরি করে যা বিকিরণকে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়।
তারার মধ্যকার হাইড্রোজেন জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যু ভরের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। অবশ্য মৃত্যু ঘটার আগে তারাটি আরও কয়েক প্রজন্ম পার করে যার মধ্যে রয়েছে অপজাত অবস্থা। প্রতি প্রজন্মে তার পূর্বের প্রজন্মের তুলনায় ভারী মৌলের পরিমাণ বেশি থাকে। তারা নিঃসঙ্গ থাকতে পারে, আবার দুই বা ততোধিক তারা একসাথে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। দুটি হলে সাধারণত একে অন্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে এবং বেশি কাছাকাছি এসে গেল একে অন্যের বিবর্তনকেও প্রভাবিত করে।
সংখ্যাভিত্তিক বা ব্যবস্থাভিত্তিক তারা আট প্রকার(উদাহরণসহ)
(১). এককতারা ব্যবস্থা (Single star system):-
(২). যুগ্ম তারা ব্যবস্থা (Binary star system):-
(৩). ত্রয়ীতারা ব্যবস্থা (Ternary/triple star system):-
(৪). চতুর্মুখীতারা ব্যবস্থা (Quaternary/Quadruple star system):-
(৫). পঞ্চমর্মুখীতারা ব্যবস্থা (Quinary/Quintuplet star system):-
(৬). ষড়র্মুখীতারা ব্যবস্থা (Senary/Sextuple Star system):-
(৭).সপ্তমর্মুখীতারা ব্যবস্থা(Septenary Star system):-
(৮).অষ্টমর্মূখীতারা ব্যবস্থা (Octonary star system):-
ব্যুৎপত্তি
তারা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ "স্টার"। স্টার শব্দটি গ্রিক অ্যাস্টার থেকে এসেছে যা আবার হিত্তীয় ভাষার শব্দ শিত্তার থেকে এসেছে। শিত্তার শব্দটির ব্যুৎপত্তি আবার সংস্কৃত শব্দ সিতারা (सितारा)[১]।
পর্যবেক্ষণের ইতিহাস

প্রতিটি সংস্কৃতিতেই তারা বিশেষ গুরুত্ব বহন করতো। ধর্ম চর্চায় এর ব্যবহার ছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তারার মাধ্যমে নাবিকরা দিক নির্ণয় করতো এবং ঋতুর সাথে এর সম্পর্কটিও মানুষ অনেক আগে বুঝতে পেরেছিল। প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা অনেকেই বিশ্বাস করতেন, তারা স্বর্গীয় গোলকে নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ আছে এবং এরা অপরিবর্তনীয়। চলতি প্রথা অনুযায়ী তারা তারাগুলোকে কিছু তারামণ্ডলে ভাগ করেছিলেন।
এবং এই মণ্ডলগুলোর মাধ্যমে সূর্যের অনুমিত অবস্থান ও গ্রহের গতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতেন[৪]। তারার পটভূমিতে তথা দিগন্তে সূর্যের গতিকে ব্যবহার করে পঞ্জিকা তৈরি করা হতো যা কৃষিকাজে বিশেষ কাজে আসতো। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পঞ্জিকা হচ্ছে জর্জীয় পঞ্জিকা। এই পঞ্জিকাটিও সৌরকেন্দ্রিক। সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষের কোণগুলোর মাধ্যমে এই পঞ্জিকা নির্মিত হয়।
জানা মতে সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত প্রাচীনতম পঞ্জিকা নির্মাণ করেছিল প্রাচীন মিশরীয়রা, ১,৫৩৪ খ্রিস্টপূর্বে[৫]। ইসলামী জ্যোতির্বজ্ঞানীরা অনেক তারার আরবি নাম দিয়েছিলেন যার অনেকগুলো এখনও ব্যবহৃত হয়। এছাড়া তারা তারার অবস্থান নির্ণয়ের জন্য প্রচুর জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক যন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন।
একাদশ শতাব্দীতে আবু রাইহান আল-বিরুনি আকাশগঙ্গা ছায়াপথ বিপুল সংখ্যক ভগ্নাংশের সমন্বয়ে গঠিত বলে ব্যাখ্যা করেন। এর ভগ্নাংশগুলোর নীহারিকময় তারার মত ধর্ম রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ১০১৯ সালের এক চন্দ্র গ্রহণের সময় তিনি বিভিন্ন তারার অক্ষাংশও নির্ণয় করেছিলেন।[৬]
তারাকে স্বর্গীয় অপরিবর্তনীয় বস্তুরূপে কল্পনা করলেও চৈনিক জ্যোতির্বিদরা বুঝতে পেরেছিলেন, নতুন তারার উদ্ভব হতে পারে[৭]। টাইকো ব্রাহের মত আদি ইউরোপীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা রাতের আকাশে নতুন তারার উদ্ভব দেখতে পান। এ থেকে তারা প্রস্তাব করেন, স্বর্গ অপরিবর্তনীয় নয়। ১৫৮৪ সালে জর্দানো ব্রুনো বলেন, তারাগুলো মূলত অন্যান্য সূর্য যাদের পৃথিবীর মত বা একটু অন্যরকম গ্রহও থাকতে পারে।
গ্রহগুলো যার যার সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়[৮]। এই ধারণাটি এর আগে গ্রিক বিজ্ঞানী দিমোক্রিতুস এবং এপিকিউরাস-ও ব্যক্ত করেছিলেন। এর পরের শতাব্দী জুড়ে তারাগুলোকে অনেক দূরের সূর্য হিসেবে কল্পনা করার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে থাকে। তারাগুলো কেন সৌর জগৎকে মহাকর্ষীয় টানের মাধ্যমে প্রভাবিত করে না তা ব্যাখ্যা করার জন্য আইজাক নিউটন বলেন, তারা আসলে মহাবিশ্বে সমানভাবে বন্টিত। ধর্মতাত্ত্বিক রিচার্ড বেন্টলি সমরূপতার এই ধারণাটি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন[৯]।
ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমিনিয়ানো মোন্তানারি ১৬৬৭ সালে আলগল নামক তারার জ্যোতির পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেন। এডমন্ড হ্যালি সর্বপ্রথম আমাদের কাছাকাছি অবস্থিত এক জোড়া স্থির তারার সঠিক গতি পরিমাপ করে তা প্রকাশ করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি দেখান প্রাচীন গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি এবং হিপ্পার্কুসের সময়ে এটি যে অবস্থানে ছিল, এখন সেখানে নেই। পৃথিবী থেকে একটি তারার দূরত্ব প্রথম সঠিকভাবে পরিমাপ করেন ফ্রিডরিক বেসেল, ১৮৩৮ সালে। লম্বন কৌশল ব্যবহার করে তিনি এই দূরত্ব পরিমাপ করেছিলেন। তিনি পৃথিবী থেকে ৬১ সিগনি নামক তারাটির দূরত্ব ১১.৪ আলোকবর্ষ নির্ণয় করেছিলেন। লম্বন পরিমাপের মাধ্যমেই বোঝা গিয়েছিল স্বর্গীয় স্থির তারাগুলো আসলে একে অপর থেকে কতো দূরে দূরে অবস্থান করছে।
উইলিয়াম হার্শেল প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী যিনি আকাশে তারার বণ্টনের সঠিক তাৎপর্য উদ্ধারে ব্রতী হন। ১৭৮০'র দশকে তিনি ৬০০টি ভিন্ন ভিন্ন দিকে এক বিশেষ পরিমাপ সম্পন্ন করেন। প্রতিটি দৃষ্টিরেখায় অবস্থিত তারার সংখ্যা পরিমাপ করে ফলাফলগুলো একত্রিত করেন। এ থেকে তিনি বের করেন, আকাশের একটি বিশেষ দিকে তারার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর এই দিকটি হলে আকাশগঙ্গার কেন্দ্রের দিক। তার আবিষ্কার থেকে তিনি এও মন্তব্য করেন যে, কিছু কিছু তারা যে কেবল এক দৃষ্টিরেখায় আছে তা-ই নয়, ভৌতভাবে একে অন্যের সাথে সম্পর্কিতও থাকতে পারে। এ কারণেই যুগল তারা ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়।
নাক্ষত্রিক বর্ণালিবিক্ষণ বিজ্ঞানের উন্নয়ন ঘটান জোসেফ ফন ফ্রাউনহফার এবং অ্যাঞ্জেলো সেচি তারাসমূহের বর্ণালীর তুলনা করে তারা তাদের শক্তি এবং তাদের বর্ণালীতে উপস্থিত বিশোষণ রেখার সংখ্যায় পার্থক্য দেখতে পান। বিশোষণ রেখা বলতে নাক্ষত্রিক বর্ণালিতে উপস্থিত এমন সব কালো রেখাকে বোঝায়, তারাটির পরিবেশে আলোর নির্দিষ্ট কিছু কম্পাঙ্কের শোষণের কারণে যার সৃষ্টি হয়। ১৮৬৫ সালে Secchi তারাগুলোকে বর্ণালী ধরনে বিভক্ত করা শুরু করেন। অবশ্য নাক্ষত্রিক শ্রেণিবিভাগের আধুনিক সংস্করণটির উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন অ্যানি জে ক্যানন, বিংশ শতাব্দীতে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুগল তারা নিয়ে গবেষণার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৮৩৪ সালে ফ্রিডরিক বেসেল লুব্ধক তারার প্রকৃত গতিতে বিবর্তন লক্ষ করেন এবং এর একটি গুপ্ত সাথী রয়েছে বলে সিদ্ধান্তে আসেন।
পরিমাপের একক
যদিও নাক্ষত্রিক পরামিতিগুলো এসআই একক বা গাউসিয়ান এককে প্রকাশ করা যেতে পারে, এটি প্রায়ই সবচেয়ে সুবিধাজনক হয় যদি ভর, দীপ্তিমাত্রা এবং ব্যাসার্ধকে সৌর এককে প্রকাশ করা, যা সূর্যের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে। ২০১৫ সালে, IAU একটি সেট মনোনীত সৌর মান সংজ্ঞায়িত করেছিল (এসআই ধ্রুবক হিসাবে সংজ্ঞায়িত, অনিশ্চয়তা ছাড়াই) যা নাক্ষত্রিক পরামিতিগুলি উদ্ধৃত করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে:
নিউটনীয় মহাকর্ষ ধ্রুবক (G) এর বড় আপেক্ষিক অনিশ্চয়তা (10−4) এর কারণে IAU সৌর ভর (M☉)স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেনি। যেহেতু নিউটনীয় মহাকর্ষ ধ্রুবক এবং সৌর ভরের গুণফল (GM☉) অনেক বেশি নির্ভুলতার সাথে নির্ধারিত হয়েছে, IAU মনোনীত সৌর ভর পরামিতি সংজ্ঞায়িত করেছে:
মনোনীত সৌর ভর পরামিতি সর্বশেষ (২০১৪) CODATA অনুমানের সাথে নিউটনীয় মহাকর্ষ ধ্রুবক (G) একত্রিত করে সৌর ভর আনুমানিক (1.9885×1030 কেজি)নিরূপণ করা যেতে পারে। যদিও ভবিষ্যতে নিরীক্ষণগত অনিশ্চয়তার কারণে দীপ্তিমাত্, ব্যাসার্ধ, ভর পরামিতি এবং ভরের সঠিক মান সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে, ২০১৫ IAU মনোনীত ধ্রুবকগুলি একই এসআই মান হিসাবে থাকবে কারণ তারা নাক্ষত্রিক পরামিতিগুলি উদ্ধৃত করার জন্য উপকারী পরিমাপ হিসাবে থাকে।
বৃহৎ দৈর্ঘ্য, যেমন একটি দানব নক্ষত্রের ব্যাসার্ধ বা একটি যমজ নক্ষত্রের সেমি-মেজর অক্ষ প্রায়ই জ্যোতির্বিদ্যাগত এককে প্রকাশ করা হয়—যা পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী গড় দূরত্বের প্রায় সমান (১৫০ মিলিয়ন কিমি বা আনুমানিক ৯৩ মিলিয়ন মাইল)। ২০১২ সালে, IAU জ্যোতির্বিদ্যাগত ধ্রুবকটিকে মিটারে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল: 149,597,870,700 মিটার [১০]
তারার গঠন
একটি স্থিতিশীল নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ অংশ হাইড্রোস্ট্যাটিক সাম্যাবস্থায় থাকে: কোনো ক্ষুদ্র পরিমাণ ভলিউমের উপর বলগুলি একে অপরকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিহত করে। এই ভারসাম্যযুক্ত বলগুলি হল অভ্যন্তরীণ মহাকর্ষীয় বল এবং একটি বাহ্যিক বল যা নক্ষত্রের মধ্যে চাপের পার্থক্যের কারণে সৃষ্টি হয়। চাপের পার্থক্যটি প্লাজমার তাপমাত্রার পার্থক্যের মাধ্যমে স্থাপিত হয়; নক্ষত্রের বাইরের অংশটি মূলের তুলনায় শীতল। একটি মূল ক্রম বা দৈত্য নক্ষত্রের কেন্দ্রে তাপমাত্রা কমপক্ষে ১০⁷ K হয়। মূল ক্রম নক্ষত্রের হাইড্রোজেন-দহন কেন্দ্রে উত্পন্ন তাপমাত্রা এবং চাপ যথেষ্ট পরিমাণে পারমাণবিক সংযোজনের জন্য যথেষ্ট এবং পর্যাপ্ত শক্তি উত্পাদন করে যাতে নক্ষত্রের আরও পতন প্রতিরোধ করা যায়।
যখন পারমাণবিক নিউক্লিয়াসগুলি কেন্দ্রে সংযোজিত হয়, তারা গামা রশ্মির আকারে শক্তি নির্গত করে। এই ফোটনগুলি পার্শ্ববর্তী প্লাজমার সাথে ক্রিয়া করে, কেন্দ্রে তাপীয় শক্তি যোগ করে। মূল ক্রম নক্ষত্রগুলি হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তরিত করে, কেন্দ্রে ধীরে ধীরে কিন্তু স্থিরভাবে হিলিয়ামের অনুপাত বৃদ্ধি করে। শেষ পর্যন্ত হিলিয়ামের পরিমাণ প্রধান হয়ে ওঠে এবং কেন্দ্রে শক্তি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে, ০.৪ M☉ এর বেশি ভরের নক্ষত্রগুলির ক্ষেত্রে, একটি ধীরে ধীরে প্রসারিত শেলের মধ্যে সংযোজন ঘটে যা অপূর্ণাঙ্গ হিলিয়াম কেন্দ্রকে ঘিরে থাকে।[১১]
হাইড্রোস্ট্যাটিক সাম্যাবস্থার পাশাপাশি, একটি স্থিতিশীল নক্ষত্রের অভ্যন্তরে তাপগতীয় সাম্যাবস্থার শক্তি ভারসাম্য বজায় থাকে। অভ্যন্তরের সর্বত্র একটি রৈখিক তাপমাত্রার পার্থক্য রয়েছে যা বাইরের দিকে প্রবাহিত শক্তির প্রবাহের ফলাফল। নক্ষত্রের মধ্যে যে কোনো স্তর থেকে নির্গত শক্তির প্রবাহ নিচ থেকে আগত প্রবাহের সাথে ঠিক মিলবে।
তাপ বিকিরণ অঞ্চল হল নক্ষত্রের অভ্যন্তরের সেই অঞ্চল যেখানে তাপের বিকিরণীয় স্থানান্তরের উপর নির্ভর করে বাহ্যিক দিকে শক্তির প্রবাহ ঘটে, কারণ ঐ অঞ্চলে তাপীয় স্থানান্তর অকার্যকর। এই অঞ্চলে প্লাজমা ব্যাহত হবে না এবং যে কোনো ভরের গতিবিধি মরে যাবে। যেখানে এই পরিস্থিতি ঘটে না, সেখানে প্লাজমা অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং সঞ্চালন ঘটে, যা একটি সঞ্চালন অঞ্চল গঠন করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি সেই সব অঞ্চলে ঘটতে পারে যেখানে খুব উচ্চ শক্তি প্রবাহ ঘটে, যেমন কেন্দ্রে বা উচ্চ অস্বচ্ছতা (যা বিকিরণীয় তাপ স্থানান্তরকে অকার্যকর করে) বিশিষ্ট এলাকায় যেমন বাইরের আবরণে।
একটি মূল ক্রম নক্ষত্রের বাইরের আবরণে সঞ্চালনের ঘটনার উপর নির্ভর করে নক্ষত্রের ভর। সূর্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভরের নক্ষত্রগুলির অভ্যন্তরের গভীরে একটি সঞ্চালন অঞ্চল এবং বাইরের স্তরগুলিতে একটি বিকিরণ অঞ্চল থাকে। সূর্যের মতো ছোট নক্ষত্রগুলিতে ঠিক বিপরীত হয়, বাইরের স্তরগুলিতে সঞ্চালন অঞ্চল থাকে। ০.৪ M☉ এর চেয়ে কম ভরের লাল বামন নক্ষত্রগুলি পুরোপুরি সঞ্চালনশীল হয়, যা একটি হিলিয়াম কেন্দ্রের সঞ্চয় রোধ করে। অধিকাংশ নক্ষত্রের ক্ষেত্রে, নক্ষত্রের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এবং অভ্যন্তরের গঠন পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে সঞ্চালন অঞ্চল পরিবর্তিত হয়।
ফোটোস্ফিয়ার হল নক্ষত্রের সেই অংশ যা একজন পর্যবেক্ষকের কাছে দৃশ্যমান। এটি সেই স্তর যেখানে নক্ষত্রের প্লাজমা আলোর ফোটনের জন্য স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। এখান থেকে, কেন্দ্রে উৎপন্ন শক্তি মহাকাশে প্রসারিত হতে স্বাধীন হয়। ফোটোস্ফিয়ারের মধ্যে সূর্যকলঙ্ক, গড় তাপমাত্রার চেয়ে নিম্ন তাপমাত্রার অঞ্চলগুলি দেখা দেয়।
ফোটোস্ফিয়ারের স্তরের উপরে নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডল অবস্থিত। সূর্যের মতো একটি মূল ক্রম নক্ষত্রে, ফোটোস্ফিয়ারের ঠিক উপরে বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিম্ন স্তর হল পাতলা ক্রোমোস্ফিয়ার অঞ্চল, যেখানে স্পিকুলস উপস্থিত হয় এবং নাক্ষত্রিক উল্কাপাত শুরু হয়। এর উপরে আছে ট্রানজিশন অঞ্চল, যেখানে মাত্র ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দূরত্বের মধ্যে তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এর বাইরে রয়েছে করোনা, একটি অত্যন্ত উত্তপ্ত প্লাজমার ভলিউম যা কয়েক মিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। করোনার অস্তিত্ব নক্ষত্রের বাইরের স্তরে সঞ্চালন অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল বলে মনে হয়। উচ্চ তাপমাত্রা সত্ত্বেও, কম গ্যাস ঘনত্বের কারণে করোনা খুব কম আলো নির্গত করে। সূর্যের করোনা অঞ্চল সাধারণত শুধুমাত্র সূর্যগ্রহণের সময় দৃশ্যমান হয়।
করোনা থেকে, প্লাজমা কণার একটি নাক্ষত্রিক বায়ু নক্ষত্র থেকে বাইরের দিকে প্রসারিত হয়, যতক্ষণ না এটি আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। সূর্যের ক্ষেত্রে, এর সৌর বায়ুর প্রভাব একটি বুদ্বুদ আকৃতির অঞ্চলের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়, যা হেলিওস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
বৈশিষ্টসমূহ
তারার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টসমূহ যেমনঃ আকার, উজ্জ্বলতা, বিবর্তন, জীবনচক্র এবং সবশেষে তারার পরিনতি -এ সব কিছুই এর প্রাথমিক ভরের উপর নির্ভর করে।
বৃহত্তম তারকা
ইউ ওয়াই স্কিউটি (UY Scuti) মহাবিশ্বের বৃহত্তম তারকা। এটি আমাদের সূর্যের চেয়ে ১,০০০ গুণের চেয়েও বেশি প্রশস্ত। এটি একটি লাল মহাদানব (Red Supergiant)।
বয়স
অধিকাংশ তারার বয়স ১০০ কোটি থেকে ১০০০ কোটির মধ্যে। কিছু তারার বয়স ১৩,৭০ কোটির কাছাকাছি, যা আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের বয়সের সমান।এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত পুরাতন তারা HE1523-0901 এর গননাকৃত বয়স ১,৩২০ কোটি বছর।[১২][১৩] তারার আকার যত বড় হয় এর আয়ূকাল ততই কমে যায়। কেননা, বৃহদকার তারার কেন্দ্রের চাপ বেশি থাকে এবং এই চাপের সমতার জন্য এর হাইড্রোজেন দ্রুত পুড়ে নিঃশেষ হয়। আধিকাংশ বৃহদকার তারার আয়ূকাল গড়ে প্রায় ১০ লক্ষ বছর হয়। আপেক্ষাকৃত কম ভরের তারার (যেমন লাল বামন নক্ষত্র) জ্বালানি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয় এবং এদের আয়ূকাল ১,০০০ কোটি থেকে লক্ষ কোটি বছর হয়।[১৪][১৫]
তারকার প্রকারভেদ
বিভিন্ন ধরনের তারকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মেইন-সিকোয়েন্স তারকা। মহাবিশ্বে তারকাদের ৮০ ভাগই এই শ্রেণির।[১৬] তারকাদের মধ্যে মূলত এরাই হাইড্রোজেন জ্বালিয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন করে এবং একই সাথে তৈরি করে বিপুল পরিমাণ আলো ও তাপ। এই তারকাদের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে তখন এদের নাম হয় দানব নক্ষত্র। কারণ, তখন বিকিরণের চাপে এদের ব্যাসার্ধ বেড়ে যায়। আরো ৫ বিলিয়ন বছর পর আমাদের সূর্য এই দশায় পৌঁছবে। পরবর্তীতে ভরভেদে এরা নিউট্রন তারা, পালসার বা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দুটি তারকা তাদের সাধারণ ভরকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। এদেরকে বলা হয় বাইনারি তারকা। মহাবিশ্বে ৫০ ভাগ তারকাই এই শ্রেণির।
আরও দেখুন
- তারা গুচ্ছ
- উজ্জ্বলতম তারাসমূহের তালিকা
- তারার বিবর্তন
- তারামণ্ডল
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
- Query star by identifier, coordinates or reference code. Centre de Données astronomiques de Strasbourg
- Star, World Book @ NASA টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ
- Portraits of Stars and their Constellations. University of Illinois
- How To Decipher Classification Codes. Astronomical Society of South Australia
- টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি View the stars above your location
- টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:Cite conference
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ ১০.০ ১০.১ ১০.২ ১০.৩ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সংবাদ উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতিটেমপ্লেট:অকার্যকর সংযোগ