ত্রিকোণমিতির ইতিহাস

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

ত্রিভুজের প্রথম চর্চা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে মিশরীয় (রিন্দ ম্যাথমেটিক্যাল প্যাপিরাস) এবং ব্যাবিলনীয় গণিতে (রিহিন্ড ম্যাথমেটিক্যাল পাপাইরাস) পাওয়া যায়। কুশ যুগের গণিতেও ত্রিকোণমিতির চর্চা ছিল।[] হেলিনীয় গণিতে ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক সম্বন্ধে পদ্ধতিগত অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল, যা হেলিনীয় জ্যোতির্বিদ্যার অংশ হিসেবে ভারতে পৌঁছে যায়।টেমপ্লেট:Sfn ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে, গুপ্ত সাম্রাজ্যে ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক চর্চা প্রসারিত হয়, বিশেষত আর্যভট্টের (খ্রিস্টিয় ষষ্ঠ শতাব্দী) মাধ্যমে, যিনি সাইন ফাংশন আবিষ্কার করেছিলেন।

ব্যুৎপত্তি

“ত্রিকোণমিতি” শব্দটি গ্রীক τρίγωνον trigōnon, “ত্রিভুজ” এবং μέτρον metron, “পরিমাপ” শব্দদ্বয় থেকে এসেছে।[]

আধুনিক শব্দ “সাইন” কথাটি ল্যাটিন সাইনাস শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ “উপসাগর”, “বক্ষ” অথবা “ভাঁজ” থেকে এসেছে যা অপ্রত্যক্ষভাবে যথাক্রমে ভারতীয়, ফারসী এবং আরবীয় থেকে আগত। এটি গ্রীক শব্দ খোরদে “ধনুকের ছিলা, তার” থেকে এসেছে। সাইনের হিন্দু শব্দ সংস্কৃতে হয়েছে জ্যা অর্থাৎ ধনুকের ছিলা, হিন্দুরা প্রকৃতপক্ষে তিনটি ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক জ্যা, কোটি-জ্যা এবং উৎক্রম জ্যায়ের অবতারণা করেন এবং সাধারণভাবে এর প্রয়োগ করেন। হিন্দুরা এগুলোকে বৃত্তের চাপের অপেক্ষক হিসেবে বর্ণনা করেছেন, কোণ হিসেবে নয়, তাই তারা এর সাথে ধনুকের ছিলার তুলনা করেছেন এবং সেই কারণে “চাপের জ্যা”কে বলা হয় “ধনুক” (চাপ)। এর সমার্থকগুলো হল জীব, শিঞ্জিনী, মৌর্বী, গুণ ইত্যাদি। সাইন অপেক্ষক বিভিন্ন জীবে পরে বিবর্তিত হয়েছে।[] সংস্কৃত জীব আরবীয় ভাষায় ‘জীবা’ হিসেবে গৃহীত হয়েছে যাকে লেখা হয় জেবি جب [][] এটিকে পরে সত্যিকারের আরবীয় শব্দ জেব, অর্থাৎ “বক্ষ, ভাঁজ, উপসাগর”, হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[] হতে পারে এটা আরবীয়রাই করত, অথবা রবার্ট অফ চেস্টারের মত অনুবাদকদের ভুলও হতে পারে এখানে যাঁরা জেবকে ল্যাটিন সাইনাস হিসেবে অনুবাদ করেছিলেন।[] সাইনাস নামটিকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ফিবোনাসসির সাইনাস রেক্টাস আরকাস অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে প্রমাণিত হয়েছিল।[] “মিনিট” এবং “সেকেন্ড” শব্দগুলো ল্যাটিন বাক্যাংশ পারটেস মাইনুটি প্রাইমি এবং পারটেস মাইনুটি সেকান্ডি থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।[] এগুলোকে সাধারণভাবে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “প্রথম ছোট অংশ” এবং “দ্বিতীয় ছোট অংশ”।

বিকাশ

পূর্বের কাছে প্রাচীন

বহু শতাব্দী ধরে প্রাচীন মিশরীয় এবং ব্যবিলনীয়রা একই ধরনের ত্রিভুজের বাহুর অনুপাত সংক্রান্ত উপপাদ্য জানতেন। তবে, হেলিনীয় পূর্ববর্তী সমাজে কোণ সম্বন্ধে ধারণা ছিল না, তাই তাঁরা ত্রিভুজের বাহু নিয়ে চর্চা করতেন।[]

ব্যবিলনীয় জ্যোতির্বিদরা নক্ষত্রের উদয় এবং অস্তাচল, গ্রহের গতিবিধি এবং সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ সম্বন্ধে বিশদে লিখে রাখতেন, যেগুলোর সবক’টির ক্ষেত্রেই খ-গোলকে কৌণিক দূরত্ব সম্বন্ধে পরিচিতির প্রয়োজন ছিল।[] প্লিম্পটন ৩২২ কুনিফর্ম ফলকের (খ্রিঃপূঃ ১৯০০) একটি ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে অনেকে এমনকি এটাও মনে করেন যে ব্যবিলনীয়রা সেক্যান্টের ছকও ব্যবহার করত।টেমপ্লেট:Sfn তবে এটা দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানে ব্যবহৃত পাইথাগোরিয়ান ট্রিপলের ছক নাকি একটা ত্রিকোণমিতির ছক তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে।

অন্যদিকে মিশরীয়রা খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে পিরামিড বানানোর জন্য ত্রিকোণমিতির আদিরূপ ব্যবহার করত।[] মিশরীয় লিপিকার আহমেসের (১৬৮০-১৬২০ খ্রিঃপূঃ) লেখা রিহ্নড ম্যাথমেটিকাল প্যাপিরাসে ত্রিকোণমিতি সম্বন্ধে নিম্নলিখিত সমস্যার কথা বলা হয়েছেঃ[]

টেমপ্লেট:Quoteএই সমস্যার ক্ষেত্রে আহমেসের উত্তর হল, পিরামিডের ভূমির বাহুর অর্ধেক এবং এর উচ্চতার অনুপাত, অর্থাৎ এর অভিমুখের ভুজ-কোটির অনুপাত। অন্যভাবে বলতে গেলে, সেকেডের পরিমাপ হল পিরামিডের ভূমির সাথে এর অভিমুখের কোণের কোট্যাঞ্জেন্ট।[]

শাস্ত্রীয় প্রাচীনত্ব

একটি কোণের জ্যা কোণটির চাপকে স্পর্শ করছে।

প্রাচীন গ্রীক এবং হেলিনীয় গাণিতিকরা জ্যায়ের ব্যবহার করতেন। একটি বৃত্ত এবং একটি বৃত্তীয় চাপ প্রদত্ত হলে, জ্যা হল সেই চাপটির দুই শীর্ষবিন্দুর সংযোগকারী রেখা। একটি জ্যায়ের লম্ব সমদ্বিখণ্ডক বৃত্তের কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে গমন করে এবং কোণটিকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। দ্বিখণ্ডিত জ্যায়ের অর্ধাংশ হল দ্বিখণ্ডিত কোণের অর্ধেকের সাইন, অর্থাৎ[]

chord θ=2rsinθ2,

এবং তাই সাইন অপেক্ষক অর্ধ-জ্যা হিসেবেও পরিচিত। এই সম্পর্কের কারণে, বেশ কয়েকটি ত্রিকোণমিতিক পরিচয় এবং উপপাদ্য যেগুলো আজকের দিনে প্রচলিত, সেগুলো হেলিনীয় গাণিতিকদেরও অজানা ছিল না, যদিও সেগুলোকে তাঁরা সমতুল্য জ্যা হিসেবে চিনতেন।[১০][১১]

যদিও, কঠোরভাবে বলতে গেলে, ইউক্লিড এবং আর্কিমিডিসের কাজে ত্রিকোণমিতির ব্যবহার ছিল না, কিন্তু তাদের উপপাদ্যগুলোকে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে উপস্থাপিত করা হয়েছে (ত্রিকোণমিতিক পদ্ধতির চেয়েও বেশি) যেগুলো নির্দিষ্ট ত্রিকোণমিতিক নীতি অথবা সূত্রের সাথে তুলনীয়।[] উদাহরণস্বরূপ, এলিমেন্টস গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ প্রস্তাব ছিল যথাক্রমে স্থুলকোণ এবং সূক্ষ্যকোণের কোসাইনের নীতি। জ্যায়ের দৈর্ঘ্যের উপপাদ্যগুলো হল সাইনের নীতির প্রয়োগ। এবং ভগ্ন জ্যায়ের ওপরে আর্কিমিডিসের উপপাদ্যগুলো, কোণের সমষ্টি এবং পার্থক্যের সাইনের সূত্রের সাথে তুলনীয়।[] জ্যায়ের ছকের অভাবে, অ্যারিস্টারকাসের সময়কার গাণিতিকরা অনেক সময় একটি বিবৃতি ব্যবহার করতেন যা আজকের দিনে অ্যারিস্টারকাসের অসমীকরণ হিসেবে পরিচিতঃ sin α/sin β < α/β < tan α/tan β যখন 0° < β < α < 90°।[১২]

প্রথম ত্রিকোণমিতির ছক আপাতভাবে নিকাইয়ার হিপ্পারকাস (১৮০ – ১২৫ খ্রিঃপূঃ) সঙ্কলিত করেন, যাঁকে “ত্রিকোণমিতির জনক” বলা হয়ে থাকে।[১৩] হিপ্পারকাসই প্রথম ভিন্ন ভিন্ন কোণের জন্য জ্যা এবং তার সংশ্লিষ্ট চাপের মান তৈরি করে ছকের রূপে সাজান।[][১৩]

যদিও ৩৬০ বৃত্তের পদ্ধতিগত চর্চা কবে থেকে গণিতে শুরু হয়েছিল তা জানা যায়নি, তবে সামোসের আরিস্টারকাসের লেখা বই অন দি সাইজেস অ্যান্ড ডিস্ট্যান্সেস অফ দি সান অ্যান্ড মুন (২৬০খ্রিঃপূঃ) প্রকাশিত হওয়ার কিছু সময় পরে  ৩৬০ বৃত্তের পদ্ধতিগত চর্চা শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়, কারণ তিনি বৃত্তের এক চতুর্থাংশের হিসেবে কোণের পরিমাপ করতেন।[১২] মনে করা হয়, ৩৬০ বৃত্তের পদ্ধতিগত চর্চা হিপ্পারকাস এবং তাঁর জ্যায়ের ছকের কারণেই শুরু হয়েছিল। হিপ্পারকাস সম্ভবত হিপসিকলসের থেকে এই ধারণাটা পেয়েছিলেন, কারণ হিপসিকলস এর আগে দিনকে ৩৬০ ভাগে বিভক্ত করেন; দিনকে ৩৬০ ভাগে বিভক্ত করার এই পদ্ধতিটি সম্ভবত ব্যবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যা থেকেই নেওয়া হয়েছে।[১৪] প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যায়, রাশিচক্র বারোটা “চিহ্ন” অথবা ছত্রিশটা “ডেকানসে” বিভক্ত করা হত। মোটামুটিভাবে ৩৬০ দিনের ঋতুপর্যায়ের সাথে রাশিচক্রের চিহ্ন এবং ডেকানসের একটা মিল পাওয়া যায় এবং এই রাশিচক্রে প্রতিটা চিহ্নকে তিরিশটা ভাগে এবং প্রতিটা ডেকানকে দশটা ভাগে ভাগ করা হয়।[] ব্যবিলনীয় সেক্সাজেসিমাল সংখ্যাপদ্ধতিতে, প্রতিটা ডিগ্রীকে ষাট মিনিট এবং প্রতিটা মিনিটকে ষাট সেকেন্ডে ভাগ করা হয়।[]

মেনেলসের উপপাদ্য

আলেকজান্দ্রিয়ার মেনেলস (১০০খ্রিঃ) স্ফেরিকা নামে তিনটে বই লিখেছিলেন। প্রথম বইয়ে, তিনি ইউক্লিডিয় ভিত্তিতে সমতল ত্রিভুজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বৃত্তীয় ত্রিভুজের ভিত্তি তৈরি করেন।[১১] তিনি একটি উপপাদ্য তৈরি করেন যেখানে বলা হয়, ইউক্লিডিয় সামঞ্জস্য ছাড়া, দুটি বৃত্তীয় ত্রিভুজ সর্বসম হবে যদি তাদের পারস্পরিক কোণগুলো সমান হয়, কিন্তু তিনি সর্বসম এবং প্রতিসম বৃত্তীয় ত্রিভুজের মধ্যে কোন পার্থক্য নিরূপণ করেননি।[১১] আরেকটি উপপাদ্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন যাতে বলা হয়েছিল বৃত্তীয় ত্রিভুজের কোণের সমষ্টি ১৮০র বেশি হয়।[১১] স্ফেরিকার দ্বিতীয় বইয়ে তিনি বৃত্তীয় জ্যামিতিকে জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োগ করেন। এবং তৃতীয় বইয়ে “মেনেলসের উপপাদ্য” লেখা আছে।[১১] তিনি এরপরে তাঁর বিখ্যাত “ছয় রাশির নীতি” প্রয়োগ করেন।টেমপ্লেট:Sfn

পরবর্তীকালে, ক্লডিয়াস টলেমি (৯০ – ১৬৮ খ্রিঃ) হিপ্পারকাসের কর্ডস ইন আ সার্কেলকে আরো বর্ধিত করেন তাঁর আলমাজেস্টে, অথবা ম্যাথমেটিকাল সিনট্যাক্সিস। আলমাজেস্ট প্রাথমিকভাবে জ্যোতির্বিদ্যার ওপরে লেখা একটি বই, এবং সেই জ্যোতির্বিদ্যা ত্রিকোণমিতির ওপর নির্ভরশীল। টলেমির জ্যায়ের ছক থেকে জানা যায় একটি ১২০ ব্যাসের বৃত্তের চাপের দৈর্ঘ্য বৃত্তটির সংশ্লিষ্ট চাপের n ডিগ্রীর সংখ্যার অপেক্ষক হিসেবে প্রকাশিত হয়, যেখানে n এর মান ১/২ থেকে ১৮০ পর্যন্ত হতে পারে, ১/২এর গুণিতক হিসেবে।[১৫] আলমাজেস্টের তেরোটি বই সমস্ত সভ্যতার ত্রিকোণমিতিক কাজের সবথেকে প্রভাবশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[১৬] জ্যা সংক্রান্ত টলেমির হিসেবের ওপরে লেখা একটি উপপাদ্য যা আজও টলেমির উপপাদ্য নামে পরিচিত, সেখানে বলা হচ্ছে যে একটি বৃত্তীয় চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুর গুণফল তাদের কর্ণগুলির গুণফলের সাথে সমান। টলেমির উপপাদ্যের একটি বিশেষ ক্ষেত্র ইউক্লিডের ডেটার ৯৩তম প্রস্তাব হিসেবে দেখা যায়। টলেমির উপপাদ্য সাইন এবং কোসাইন নিয়ে সমষ্টি-এবং-পার্থক্যের চারটি সূত্রের তুল্য একটি সূত্রের আবিষ্কার করে যে কারণে এটি আজ টলেমির সূত্র নামে পরিচিত হয়ে আছে, যদিও টলেমি নিজেই সাইন এবং কোসাইন ব্যবহার না করে জ্যায়ের ব্যবহার করেছেন। [১৬] এছাড়াও টলেমি অর্ধ-কোণের সূত্রের তুল্য একটি সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন

sin2(x2)=1cos(x)2.[১৬]

টলেমি তাঁর ত্রিকোণমিতিক ছক প্রস্তুত করার জন্য এইসকল ফলগুলো ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু এই ছকগুলোর ধারণা তিনি হিপ্পারকাসের থেকে পেয়েছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।[১৬]

হিপ্পারকাস এবং টলেমির ছকের অস্তিত্ব আজকের দিনে নেই, তবুও অন্যান্য প্রাচীন লেখকদের বর্ণনা থেকে হাল্কা সন্দেহ করা হয় যে এগুলোর চর্চা একসময় ছিল।টেমপ্লেট:Sfn

পাইথাগোরাস অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছিলেন যা ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক নামে পরিচিত। পাইথাগোরাসের উপপাদ্য, p2 + b2 = h2 , sin2(x) + cos2(x) = 1 – এই মৌলিক ত্রিকোণমিতিক পরিচয়কেই উপস্থাপিত করে। যেকোন সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের দৈর্ঘ্য ১, এবং এর অপর দুই বাহুর দৈর্ঘ্য sin (x) এবং cos (x) যেখানে x হল দুটি অসমকোণের একটির মান। এটিকে মনে রেখে এটা বলা যায় যে, ত্রিকোণমিতি যে পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটা হল পাইথাগোরাসের উপপাদ্য।  

ভারতীয় গণিত

ভারতে ত্রিকোণমিতির বেশ কিছু প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ হয়েছে। খ্রিস্টিয় ৪র্থ – ৫ম শতাব্দীতে রচিত কিছু প্রভাবশালী কাজ হয়েছিল যেগুলো সিদ্ধান্তগ্রন্থ নামে পরিচিত (পাঁচটি সিদ্ধান্তগ্রন্থের মধ্যে সূর্যসিদ্ধান্তই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিলটেমপ্লেট:Sfn); এই গ্রন্থেই প্রথম অর্ধ-কোণ এবং অর্ধ-জ্যায়ের মধ্যেকার আধুনিক সম্পর্ককে সাইন হিসেবে বর্ণনা করা হয়; এছাড়াও এই বইয়ে কোসাইন, ভারসাইন এবং ইনভার্স সাইনেরও বর্ণনা করা হয়েছিল।টেমপ্লেট:Sfn এরপর অবিলম্বেই, আরেকজন ভারতীয় গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ, আর্যভট্ট (খ্রিঃ ৪৭৬ – খ্রিঃ ৫৫০), সিদ্ধান্তগ্রন্থগুলো সংগ্রহ করে আরো বিশদে আলোচনা করেন তাঁর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বই আর্যভটিয়তে।টেমপ্লেট:Sfn ৩.৭৫ অন্তর ০ থেকে ৯০ পর্যন্ত, ৪ দশমিক স্থান পর্যন্ত সূক্ষ্যভাবে নির্ণীত সাইনের মানের এবং ভার্সাইনের (১ - কোসাইন) মানের প্রাচীনতম টিকে থাকা ছক সিদ্ধান্ত এবং আর্যভটিয়তে বর্ণিত হয়েছে।টেমপ্লেট:Sfn তাঁরা সাইনের পরিবর্তে জ্যা, কোসাইনের পরিবর্তে কোজ্যা, ভার্সাইনের পরিবর্তে উৎক্রম-জ্যা এবং ইনভার্স সাইনের পরিবর্তে ওৎক্রম জ্যা ব্যবহার করতেন। জ্যা এবং কোজ্যা পরবর্তীকালে উপরে বর্ণিত ভুল অনুবাদের ফলে সাইন এবং কোসাইন হয়ে যায়।

৭ম শতকে, প্রথম ভাস্কর ছক ছাড়াই সূক্ষ্যকোণের সাইনের হিসেবের জন্য সূত্র প্রণয়ন করেন। তিনি sin(x) এর জন্য নিম্নলিখিত আসন্ন সূত্র বের করেন, যার আপেক্ষিক ত্রুটি ছিল ১.৯%এর কম:

sinx16x(πx)5π24x(πx),(0xπ).

৭ম শতকের পরের দিকে, ব্রহ্মগুপ্ত এই সূত্রটিকে আরো উন্নত করেন

 1sin2(x)=cos2(x)=sin2(π2x)

(এটিও পূর্বেই আবিষ্কৃত, উপরে উল্লিখিত) এবং ব্রহ্মগুপ্তের অন্তর্বেশন সূত্র সাইন মানের গণনায় ব্যবহৃত হয়।[১০]

১২শ শতকের ত্রিকোণমিতির আরেক লেখক ছিলেন দ্বিতীয় ভাস্কর। দ্বিতীয় ভাস্কর বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতির বিকাশে সাহায্য করেন এবং অনেক ত্রিকোণমিতির ফল আবিষ্কার করেন।

sin(a+b) এবং sin(ab) থেকে প্রাপ্ত নিম্নলিখিত ত্রিকোণমিতিক ফল যাঁরা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন দ্বিতীয় ভাস্কর ছিলেন তাঁদের অন্যতম:

  • sin(a+b)=sinacosb+cosasinb

মাধব (১৪শ শতক) ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক এবং তাদের অসীম শ্রেণীর বিস্তারের বিশ্লেষণে প্রথম প্রয়াস করেছিলেন। তিনি ঘাত শ্রেণী এবং টেলর শ্রেণীর ধারণাকে আরো উন্নত করেন, এবং সাইন, কোসাইন, ট্যানজেন্ট, এবং আর্কট্যানজেন্ট ঘাত শ্রেণী বিস্তার আবিষ্কার করেন।[১৭][১৮] তিনি সাইন এবং কোসাইনের টেলর শ্রেণীর আসন্নমান ব্যবহার করে, ১২ দশমিক স্থান পর্যন্ত মানের সাইন ছক এবং ৯ দশমিক স্থান পর্যন্ত মানের কোসাইন ছক আবিষ্কার করেন। π এবং বৃত্তের কোণ, ব্যাসার্ধ, ব্যাস এবং পরিধির ঘাত শ্রেণীকে ত্রিকোণমিতির অপেক্ষকের আকারে প্রকাশ করেন। ১৬শ শতকে কেরালা স্কুলে তাঁর অনুগামীরা তাঁর কাজ নিয়ে আরো বিশদে চর্চা করেন।[১৭][১৮]

নং শ্রেণী নাম শ্রেণীর পাশ্চাত্য আবিষ্কারক এবং আবিষ্কারের আনুমানিক তারিখ[১৯]
১. টেমপ্লেট:Nowrap      মাধবের সাইন শ্রেণী     আইজ্যাক নিউটন (১৬৭০) এবং উইলহেম লেইবনিজ (১৬৭৬)  
  ২.   টেমপ্লেট:Nowrap     মাধবের কোসাইন শ্রেণী     আইজ্যাক নিউটন (১৬৭০) এবং উইলহেম লেইবনিজ (১৬৭৬)  
  ৩.   টেমপ্লেট:Nowrap     মাধবের আর্কট্যানজেন্ট শ্রেণী     জেমস গ্রেগরি (১৬৭১) এবং উইলহেম লেইবনিজ (১৬৭৬)   

ভারতীয় শাস্ত্র যুক্তিভাষে মাধব আবিষ্কৃত সাইন এবং কোসাইন সূত্রের বিস্তারের প্রমাণ এবং ইনভার্স ট্যানজন্টের ঘাত শ্রেণীর প্রমাণ সম্বন্ধে আলোচিত হয়েছে। দুটি কোণের সমষ্টি এবং পার্থক্যের সাইন এবং কোসাইন নির্ণয়ের নীতিও যুক্তিভাষে বর্ণিত হয়েছে।

চীনা গণিত

গুও শুজিং (১২৩১ - ১৩১৬)

চীনে আর্যভট্টর সাইনের ছক কাইয়ুয়ান ঝাংজিং নামক চীনা গণিত গ্রন্থে অনুদিত হয়, যেটি ৭১৮ খ্রিঃ তাং সাম্রাজ্যে সংকলিত হয়েছিল।টেমপ্লেট:Sfn যদিও চীন ঘন জ্যামিতি, দ্বিমিক উপপাদ্য এবং জটিল বীজগাণিতিক সূত্র প্রভৃতি গণিতের ক্ষেত্রগুলোর শিখরে উঠতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু ত্রিকোণমিতির প্রাচীন রূপ সেখানে গ্রীক, হেলিনীয়, ভারতীয় এবং ঐস্লামিক বিশ্বের মত অত উন্নত ছিল না।টেমপ্লেট:Sfn পরিবর্তে, প্রাচীন চীনারা চোং চা নামক একটি স্থুল বিকল্প ব্যবহার করত, যদিও সমতল ত্রিকোণমিতির বাস্তব ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইন, ট্যানজেন্ট এবং সেক্যান্টের ব্যবহার তারা জানত।টেমপ্লেট:Sfn তবে, চীনের ত্রিকোণমিতির এই ভ্রূণাবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে এর অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় সং সাম্রাজ্যের সময়ে (৯৬০ – ১২৭৯ খ্রিঃ); যখন চীনা গণিতবিদরা পঞ্জিকা বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিদ্যার গণনায় বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতির প্রয়োজনের ওপর জোর দিতে শুরু করে।টেমপ্লেট:Sfn বিবিধ বিষয়ে পণ্ডিত চীনা গাণিতিক, বিজ্ঞানী এবং কর্মচারী শেন কুও (১০৩১ – ১০৯৫) জ্যা এবং চাপ সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যার সমাধানে ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের ব্যবহার করেছিলেন।টেমপ্লেট:Sfn ভিক্টর জে. কাট্‌জ লিখেছেন যে শেনের সূত্রে “পরস্পরছেদী বৃত্তের কৌশলের” ব্যবহার রয়েছে; তিনি একটি বৃত্তের চাপ s ধরে তার আসন্ন মান নির্ণয় করেছেন নিম্নলিখিত সূত্রের মাধ্যমে যেখানে বৃত্তের ব্যাস d, সাগিট্টা v, এবং চাপের শীর্ষবিন্দুদ্বয়ের সংযোগকারী রেখার দৈর্ঘ্য c :টেমপ্লেট:Sfn

s=c+2v2d.

সাল রেস্টিভো লিখেছেন যে বৃত্তের চাপ নিয়ে শেনের কাজ বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতির ভিত্তির তৈরি করে যা নিয়ে ১৩শ শতকের গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ গুও শুজিং (১২৩১ – ১৩১৬) বিস্তর চর্চা করেছিলেন এবং একে উন্নত করেন।টেমপ্লেট:Sfn ঐতিহাসিক এল. গচেট এবং জোসেফ নিধাম বলেছেন, গুও শুজিং ক্যালেন্ডার ব্যবস্থা এবং চৈনিক জ্যোতির্বিদ্যা উন্নত করার জন্য তাঁর গণনায় বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতির ব্যবহার করেছিলেন।টেমপ্লেট:Sfnটেমপ্লেট:Sfn পরবর্তীকালে ১৭শ শতকে গুওর গাণিতিক প্রমাণের চৈনিক অলংকরণ সম্বন্ধে নিধাম বলেছেন যেঃ

গুও চতুষ্কোণ বৃত্তীয় পিরামিড ব্যবহার করেছিলেন, যার চতুর্পাশ্বস্থ ভূমির মধ্যে ছিল একটি নিরক্ষীয় রেখা এবং একটি উপবৃত্তাকার চাপ; এরা একসাথে দুটো মেরিডিয়ান আর্কের সাথে ছিল যাদের একটি কর্কটক্রান্তি বিন্দুর মধ্যে দিয়ে গমন করেছিল…এই পদ্ধতিতে তিনি ডু লি পেয়েছিলেন (নিরক্ষীয় ডিগ্রীর সাথে সংশ্লিষ্ট উপবৃত্তীয় ডিগ্রী), জি চা (প্রদত্ত উপবৃত্তীয় চাপের জ্যায়ের মান) এবং চা লু (১ ডিগ্রী তফাতে চাপের জ্যায়ের মধ্যেকার দূরত্ব)।টেমপ্লেট:Sfn

ত্রিকোণমিতিতে শেন এবং গুওর কৃতিত্ব সত্ত্বেও, চৈনিক ত্রিকোণমিতির ওপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দের আগে প্রকাশিতই হয়নি যেটি ছিল চীনা কর্মচারী এবং জ্যোতির্বিদ জু গুয়াংকি (১৫৬২ – ১৬৩৩) এবং ইটালীয় জেস্যুইট মাট্টিও রিকির (১৫৫২ – ১৬১০) যুগ্ম প্রকাশিত রচনা ইউক্লিডস্‌ এলিমেন্টস্‌।টেমপ্লেট:Sfn

মধ্যযুগীয় ইসলামিক বিশ্ব

মহম্মদ ইবন মুসা আল খোয়ারিজমির লেখা বই দি কম্পেন্ডিয়াস বুক অন ক্যালকুলেশন বাই কমপ্লিশন অ্যান্ড ব্যালান্সিং (খ্রিঃ ৮২০)-এর একটি পৃষ্ঠা

মধ্যযুগীয় ঐস্লামিক বিশ্বে ত্রিকোণমিতির ওপর পূর্ববর্তী কাজগুলো মূলত ফারসী এবং আরবীয় মুসলমান গণিতবিদদের দ্বারা অনুদিত এবং বিকশিত হয়েছিল; এঁরা প্রচুর সংখ্যক উপপাদ্য নিয়ে কাজ করেন যার ফলে ত্রিকোণমিতি বিষয়টাই চতুর্ভুজের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পায়; মেনেলস উপপাদ্যের প্রয়োগের কারণে একই ব্যাপার হেলিনীয় গণিতেও হয়েছিল। ই. এস. কেনেডির মতে, ঐস্লামিক গণিতে এইরকম উন্নতির পরেই “প্রথম বাস্তব ত্রিকোণমিতির জন্ম হয় এই অর্থে যে এরপর থেকেই এই চর্চার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় বৃত্তীয় অথবা সমতল ত্রিভুজ, তার বাহু এবং কোণ।”[২০]

বৃত্তীয় ত্রিভুজ নিয়ে কাজের পদ্ধতিও এসময় জানা ছিল, বিশেষ করে মেনেলস অফ আলেকজান্দ্রিয়ার পদ্ধতি যিনি বৃত্তীয় সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য “মেনেলস উপপাদ্য” আবিষ্কার করেন।[১১][২১] তবে, ই. এস. কেনেডি বলেছেন যে যদিও ইসলাম-পূর্ব গণিতে বৃত্তীয় আকারের মান জ্যায়ের ছক এবং মেনেলসের উপপাদ্যের সাহায্যে নির্ণয় করা নীতিগতভাবে সম্ভব ছিল, তবে বাস্তবে বৃত্তীয় সমস্যার ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ছিল অত্যন্ত জটিল।[২২] চন্দ্রকলার হ্রাসবৃদ্ধির দ্বারা স্থিরীকৃত পবিত্র দিন ঐস্লামিক পঞ্জিকায় দেখবার জন্য জ্যোতির্বিদরা প্রাথমিকভাবে চন্দ্র ও নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য মেনেলসের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন, যদিও এই পদ্ধতিটি উদ্ভট এবং জটিল বলে দেখা গেছে। এতে দুটি পরস্পরছেদী সমকোণী ত্রিভুজ রয়েছে; মেনেলসের উপপাদ্য প্রয়োগ করে এর ছটি বাহুর একটির সমস্যার সমাধান করা সম্ভব, যদি অন্য পাঁচটির বাহুর মান জানা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের অবস্থান দেখে সময় জানতে হলে মেনেলসের উপপাদ্যের বারংবার প্রয়োগ দরকার। মধ্যযুগীয় ঐস্লামিক জ্যোতির্বিদদের কাছে একটি সরল ত্রিকোণমিতিক পদ্ধতি খুঁজে বের করাটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।[২৩]

খ্রিস্টিয় ৯ম শতকের শুরুর দিকে, মহম্মদ ইবন মুসা আল খোয়ারিজমি নির্ভুল সাইন এবং কোসাইন ছক এবং প্রথম ট্যানজেন্টের ছক তৈরি করেছিলেন। তিনি বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতিরও প্রবর্তক ছিলেন। ৮৩০ খিস্টাব্দে, হাবাশ আল হাসিব আল মারওয়াজি প্রথম কোট্যানজেন্টের ছক প্রস্তুত করেন।[২৪][২৫] মহম্মদ ইবন জাবির আল হারানি আল বাত্তানি (আলবাতেনিয়াস) (খ্রিঃ ৮৫৩ – খ্রিঃ ৯২৯) সেক্যান্ট এবং কোসেক্যান্টের বিপরীত অপেক্ষক আবিষ্কার করেন এবং ১ থেকে ৯০ পর্যন্ত প্রতিটি ডিগ্রীর জন্য কোসেক্যান্টের মানের প্রথম ছক প্রস্তুত করেন।[২৫]

খ্রিস্টিয় ১০ম শতকের মধ্যে, আবু আল ওয়াফা আল বুজ্জানির কাজে, মুসলমান গণিতবিদরা ছ’টি ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের সবক’টিই ব্যবহার করতেন।টেমপ্লেট:Sfn আবু আল ওয়াফা ০.২৫ বৃদ্ধিতে, ৮ দশমিক স্থান পর্যন্ত সাইন ছক নির্মাণ করেন এবং ট্যানজেন্ট মানের নির্ভুল ছকও তিনি প্রস্তুত করেন।টেমপ্লেট:Sfn তিনি নিম্নলিখিত ত্রিকোণমিতিক সূত্রটি আবিষ্কার করেন:[২৬]

 sin(2x)=2sin(x)cos(x)(টলেমির কোণ-সংযোগ সূত্রের একটি বিশেষ ক্ষেত্র; উপরে দেখুন)

মূল গ্রন্থে, আবু আল ওয়াফা বলেছেন, “যদি আমরা প্রদত্ত সাইনের সঙ্গে কোসাইনের মিনিট গুণ করতে চাই, তবে তার ফলে হবে দ্বিগুণের সাইনের অর্ধেক”।[২৬] আবু আল ওয়াফা কোণের সংযোগ এবং বিয়োগের প্রতীক সম্পূর্ণ প্রমাণসহ উপস্থাপিত করেছেন:[২৬]

sin(α±β)=sin2α(sinαsinβ)2±sin2β(sinαsinβ)2

sin(α±β)=sinαcosβ±cosαsinβ

দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে, বইতে লেখা আছে: “আমরা প্রথমে দুটি চাপের প্রতিটির সাইন দ্বারা অন্য মিনিটের কোসাইনকে গুণ করি। যদি আমরা সমষ্টির সাইন মান পেতে চাই, তবে আমরা গুণফলগুলোকে যোগ করব আর আমরা যদি বিয়োগের সাইন মান পেতে চাই, তবে আমরা তাদের বিয়োগ করব।[২৬]

তিনি বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতির সাইনের নীতি আবিষ্কার করেছিলেন:[২৪]

sinAsina=sinBsinb=sinCsinc.

খ্রিস্টিয় ১০ম শতকের শেষের দিকে এবং ১১শ শতকের শুরুর দিকে, মিশরীয় জ্যোতির্বিদ ইবন ইয়ুনুস অনেক অনেকগুলো যত্নসাধ্য ত্রিকোণমিতিক হিসাব করেছিলেন এবং নিম্নলিখিত ত্রিকোণমিতিক পরিচয় প্রদর্শন করেছিলেন:[২৭]

cosacosb=cos(a+b)+cos(ab)2

আল আন্দালুসের আল জাইয়ানি (৯৮৯ – ১০৭৯) দি বুক অফ আননোন আর্কস অফ আ স্ফিয়ার নামে একটি বই লিখেছিলেন যেটিকে মনে করা হয় “বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতির ওপর প্রথম চর্চা”।[২৮] এটির মধ্যে রয়েছে “সমকোণী ত্রিভুজের সূত্র, সাইনের সাধারণ নীতি, পোলার ত্রিভুজ দ্বারা বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতির সমাধান।” এই চর্চা পরবর্তীকালে “ইওরোপীয় গণিতে জোরালো প্রভাব” ফেলেছিল, এবং তাঁর “অনুপাতের সংজ্ঞাকে নম্বর হিসেবে উল্লেখ করা” এবং “বৃত্তীয় ত্রিভুজের সমাধানের পদ্ধতি, যখন এর সমস্ত বাহুর মান অজানা” রেজিওমন্টানাসকে প্রভাবিত করেছিল বলে মনে করা হয়।[২৮]

আবু রায়হান বিরুনি ১১শ শতকের শুরুর দিকে বলেছেন, ত্রিকোণীয় সর্বেক্ষণের পদ্ধতি প্রথম মুসলমান গণিতবিদরাই আবিষ্কার করেন; তাঁরা সমীক্ষা করার কাজে,[২৯] এবং ঐস্লামিক ভূগোলে এটির বাস্তব প্রয়োগ করতেন। বিরুনি নিজেও পৃথিবীর আকৃতি পরিমাপ এবং বিভিন্ন স্থানের মধ্যেকার দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য এই ত্রিকোণীয় সর্বেক্ষণ পদ্ধতির প্রচলন করেছিলেন।[৩০] ১১শ শতকের শেষের দিকে, ওমর খৈয়াম (১০৪৮ – ১১৩১) ত্রিকোণমিতিক ছকের অন্তর্বেশনের দ্বারা সংখ্যাগত আসন্ন সমাধান বের করে ঘন সমীকরণগুলোর সমাধান করেন। ১৩শ শতকে, নাসির আল দিন আল টুসি প্রথম ত্রিকোণমিতিকে জ্যোতির্বিদ্যার থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র গাণিতিক শাখা হিসেবে চর্চা করতে শুরু করেন এবং তিনি বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতিকে এর বর্তমান রূপে উন্নীত করেন।[২৫] তিনি বৃত্তীয় ত্রিকোণমিতিতে সমকোণী ত্রিভুজের ছ’টি ভিন্ন ক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করেন এবং তাঁর অন দি সেক্টর ফিগার বইয়ে, তিনি বৃত্তীয় ত্রিভুজ এবং সমতলের জন্য সাইনের নীতি বিবৃত করেন, বৃত্তীয় ত্রিভুজের জন্য ট্যানজেন্টের নীতি আবিষ্কার করেন এবং এসবের স্বপক্ষে তিনি প্রমাণও দেন।[৩১] নাসির আল দিন আল টুসি ত্রিকোণমিতিকে গণিতের একটি শাখা হিসেবে নিজের মর্যাদায় দাঁড় করিয়েছেন বলে, তাঁকে ত্রিকোণমিতির স্রষ্টা বলা হয়।[৩২][৩৩][৩৪]

১৫শ শতকে, জামশেদ আল কাশি ত্রিকোণীয় সর্বেক্ষণের জন্য সুবিধাজনক হয় এমনরূপে কোসাইনের নীতি সম্বন্ধে প্রথম স্পষ্ট বিবৃতি দেন।টেমপ্লেট:Citation needed ফ্রান্সে, কোসাইনের নীতিকে এখনও আল কাশির উপপাদ্য বলে বর্ণনা করা হয়। তিনি চারটে সেক্সাজেসিমাল সংখ্যা পর্যন্ত (৮ দশমিক সংখ্যার স্থানের তুলনীয়) সাইন অপেক্ষকের মানের ত্রিকোণমিতিক ছক প্রস্তুত করেন যেখানে প্রতি ১র পার্থক্যে প্রতি ১র ১/৬০ ভাগ যোগ করতে হয়।টেমপ্লেট:Citation needed একই সময়ে উলুঘ বেগও সাইন এবং ট্যানজেন্টের নির্ভুল ছক আবিষ্কার করেন যেটি ৮ দশমিক স্থান পর্যন্ত সঠিক ছিল।টেমপ্লেট:Citation needed

ইওরোপের নবজাগরণ এবং তার পরবর্তী কাল

১৩৪২ সালে, লেভি বেন গেরশন যিনি গেরসোনাইডস্‌ নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি অন সাইনস্‌, কর্ডস্‌ অ্যান্ড আর্কস্‌ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন যেখানে বিশেষ করে সমতল ত্রিভুজের ক্ষেত্রে সাইন নীতি প্রমাণ করেন এবং পাঁচ অঙ্কের সাইন ছক প্রস্তুত করেন।[৩৫]

ভূমধ্যসাগরের নাবিকরা ১৪শ – ১৫শ শতকে দিকনির্ণয়ের জন্য একটি সরল ত্রিকোণমিতিক ছক ব্যবহার করতেন যার নাম ছিল “টোলেটা ডি মার্টেলোইও”। মেজরকার রামন লাল ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দে এই ছকটি নির্মাণ করেন এবং ভেনেশিয়ান ক্যাপ্টেন আন্দ্রিয়া বিয়াঙ্কোর ১৪৩৬ সালের অ্যাটলাসে এটি প্রদর্শিত হয়।

ইউরোপে ত্রিকোণমিতিকে একটা স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে সম্ভবত প্রথম চর্চা করেছিলেন রেজিওমন্টানাস,টেমপ্লেট:Sfn তাঁর ১৪৬৪ সালে লেখা ডি ট্রায়াঙ্গুলিস ওমনিওডিস গ্রন্থে এবং তাঁর পরবর্তী ট্যাবুলি ডিরেকশনাম নামক গ্রন্থে যেখানে তিনি ট্যানজেন্ট অপেক্ষককে নামবিহীনভাবে ব্যবহার করেছিলেন। কোপার্নিকাসের একজন ছাত্র জর্জ জোয়াচিম রেটিকাসের লেখা বই ওপাস পালাটিনাম ডি ট্রাঙ্গুলিসে তিনি বৃত্তের পরিবর্তে সমকোণী ত্রিভুজ দিয়ে ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষককে (ছ’টি ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের সবক’টির ছকের সাথে) বর্ণনা করেছেন যা ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত প্রথম; ১৫৯৬ সালে রেটিকাসের ছাত্র ভ্যালেন্টিন ওথো তাঁর এই কাজ শেষ করেন।

১৭শ শতকে, আইজ্যাক নিউটন এবং জেমস স্টারলিং ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের জন্য সাধারণ নিউটন-স্টারলিং অন্তর্বেশন সূত্র আবিষ্কার করেন।

১৮শ শতকে, লিওনার্ড অয়লারের লেখা ইন্ট্রোডাক্টিও ইন অ্যানালিসিন ইনফিনিটোরাম (১৭৪৮) নামক গ্রন্থ ইওরোপে ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের বিশ্লেষণমূলক চর্চার জন্য দায়ী ছিল; এই বই থেকে তাদের অসীম শ্রেণী বের করা হয় এবং “অয়লারের সূত্রeix = cos x + i sin x প্রস্তুত করা হয়। অয়লার প্রায়-আধুনিক সংক্ষিপ্তরূপগুলোই ব্যবহার করেছিলেন যেমন সাইন, কস, ট্যান, কট, সেক এবং কোসেক। এর আগে রজার কোটস তাঁর হারমোনিয়া মেনসুরারাম (১৭২২) নামক গ্রন্থে সাইনের লব্ধ মান নির্ণয় করেছিলেন।[৩৬] ১৮শ শতকে ব্রুক টেলর সাধারণ টেলর শ্রেণী নির্ণয় করেন এবং শ্রেণী বিস্তার প্রস্তুত করেন ও ছ’টি ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের আসন্ন মানও তিনি নির্ণয় করেন। ১৭শ শতকের জেমস গ্রেগরি এবং ১৮শ শতকের কলিন ম্যাকক্লরিনের কাজও ত্রিকোণমিতিক শ্রেণীর উন্নতিতে প্রচুর প্রভাব রেখেছিল।

আরও দেখুন

টেমপ্লেট:প্রবেশদ্বার

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা

গ্রন্থপঞ্জি

টেমপ্লেট:বিজ্ঞানের ইতিহাস

  1. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  2. টেমপ্লেট:Cite dictionary
  3. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  4. ৪.০ ৪.১ টেমপ্লেট:Harvnb: It was Robert of Chester's translation from the Arabic that resulted in our word "sine". The Hindus had given the name jiva to the half-chord in trigonometry, and the Arabs had taken this over as jiba. In the Arabic language there is also the word jaib meaning "bay" or "inlet". When Robert of Chester came to translate the technical word jiba, he seems to have confused this with the word jaib (perhaps because vowels were omitted); hence, he used the word sinus, the Latin word for "bay" or "inlet".
  5. ৫.০ ৫.১ ৫.২ ৫.৩ ৫.৪ ৫.৫ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  6. ৬.০ ৬.১ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  7. ৭.০ ৭.১ ৭.২ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  8. ৮.০ ৮.১ ৮.২ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  9. টেমপ্লেট:Citation
  10. ১০.০ ১০.১ As these historical calculations did not make use of a unit circle, the length of the radius was needed in the formula. Contrast this with the modern use of the crd function that assumes a unit circle in its definition.
  11. ১১.০ ১১.১ ১১.২ ১১.৩ ১১.৪ ১১.৫ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  12. ১২.০ ১২.১ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  13. ১৩.০ ১৩.১ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  14. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  15. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  16. ১৬.০ ১৬.১ ১৬.২ ১৬.৩ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  17. ১৭.০ ১৭.১ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  18. ১৮.০ ১৮.১ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  19. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  20. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি (cf. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি)
  21. টেমপ্লেট:MacTutor "Book 3 deals with spherical trigonometry and includes Menelaus's theorem".
  22. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি (cf. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি)
  23. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  24. ২৪.০ ২৪.১ Jacques Sesiano, "Islamic mathematics", p. 157, in টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  25. ২৫.০ ২৫.১ ২৫.২ টেমপ্লেট:বিশ্বকোষ উদ্ধৃতি
  26. ২৬.০ ২৬.১ ২৬.২ ২৬.৩ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  27. William Charles Brice, 'An Historical atlas of Islam', p.413
  28. ২৮.০ ২৮.১ টেমপ্লেট:MacTutor
  29. Donald Routledge Hill (1996), "Engineering", in Roshdi Rashed, Encyclopedia of the History of Arabic Science, Vol. 3, p. 751–795 [769].
  30. টেমপ্লেট:MacTutor
  31. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  32. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  33. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  34. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  35. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  36. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি. The proof of Cotes is mentioned on p. 315.