পারমাণবিক কক্ষক

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
প্রথম পাঁচটি পারমাণবিক কক্ষকের আকার হল: 1s, 2s, 2px, 2py এবং 2pz। দুটি রঙ প্রত্যেকটি অঞ্চলে তরঙ্গ অপেক্ষকের দশা বা চিহ্নকে নির্দেশ করছে। এগুলি হল টেমপ্লেট:Math এর লেখচিত্র, যা একটি ইলেক্ট্রনের স্থানাঙ্কের ওপর নির্ভর করে। টেমপ্লেট:Math অaপেক্ষকের বিস্তৃত আকার দেখতে নিচে d কক্ষকের লেখচিত্র দেখুন, যা আরও প্রত্যক্ষভাবে সম্ভাবনা ঘনত্বের পরিচয় দেয়।

পারমাণবিক তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান অনুসারে, পারমাণবিক কক্ষক (টেমপ্লেট:Lang-en) হল এক প্রকার গাণিতিক অপেক্ষক (function), যা পরমাণুর অভ্যন্তরে একটি ইলেকট্রনের অবস্থান অথবা তরঙ্গ-ধর্মী আচরণ ব্যাখ্যা করে।[] এই অপেক্ষকের মাধ্যমে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পারিপার্শ্বে নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনো ইলেকট্রনকে পাওয়ার সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট গাণিতিক রূপ থেকে নির্ধারিত বিশেষ ভৌত অঞ্চল বা দেশ, যেখানে ইলেকট্রনের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়, তাকেই পারমাণবিক কক্ষক বলে।[]

প্রতিটি কক্ষককে চিহ্নিত করা হয় তিনটি কোয়ান্টাম সংখ্যা সমন্বিত নির্দিষ্ট মানের সেটের সাহায্যে। সেই তিনটি কোয়ান্টাম সংখ্যা হল টেমপ্লেট:Mvar, টেমপ্লেট:Mvar এবং টেমপ্লেট:Mvar, যথাক্রমে যারা ইলেকট্রনের শক্তি, কৌণিক ভরবেগ এবং কৌণিক ভরবেগের ভেক্টর উপাংশকে (চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা) নির্দেশ করে। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যার বিকল্প হিসাবে অরবিটালগুলিকে প্রায়শই সংশ্লিষ্ট ছন্দিত বহুপদ দ্বারা যুক্ত করা হয় (যেমন, xy, টেমপ্লেট:Nowrap)। এরূপ প্রতিটি কক্ষকে সর্বাধিক দুটি ইলেকট্রন থাকতে পারে, যাদের প্রতিটি নিজের ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা ms সমন্বিত হয়। s কক্ষক, p কক্ষক, d কক্ষক, f কক্ষক সহজ নামগুলি যথাক্রমে কৌণিক ভরবেগ কোয়ান্টাম সংখ্যা টেমপ্লেট:Math এবং টেমপ্লেট:Math সমন্বিত কক্ষকগুলিকে নির্দেশ করে। টেমপ্লেট:Mvar এর মানসহ এই নামগুলি পরমাণুর ইলেকট্রন-বিন্যাসের ব্যাখ্যা দেয়। প্রাচীন বর্ণালিবীক্ষকদের বর্ণনা অনুসারে, এই নামগুলি বিশেষ শ্রেণির ক্ষার ধাতুর বর্ণালি রেখা থেকে প্রাপ্ত হয়েছে; যথা— sharp (সূক্ষ্ম), principal (মুখ্য), diffuse (পরিব্যাপ্ত), fundamental (মৌলিক)। যেসব কক্ষকের টেমপ্লেট:Mvar > 3, তাদের নাম শুধু "j" বাদ দিয়ে[][] ইংরেজি বর্ণানুক্রমে চলতে থাকে (g, h, i, k, …),[] কারণ কিছু ভাষায় "i" ও "j"-কে একই মনে করা হয়।[]

পারমাণবিক কক্ষক হল পারমাণবিক কক্ষক মডেল (ইলেকট্রন মেঘ বা তরঙ্গ বলবিদ্যা মডেল নামেও পরিচিত) এর ভিত্তিস্বরূপ, যা পদার্থে ইলেকট্রনের আণুবীক্ষণিক আচরণকে দর্শন করার এক আধুনিক চিন্তাধারা। এই মডেলে বহু-ইলেকট্রন সমন্বিত পরমাণুর ইলেকট্রন মেঘকে সহজতর হাইড্রোজেন-জাতীয় পারমাণবিক কক্ষকের ধারণা থেকে প্রাপ্ত ইলেকট্রন বিন্যাস (আনুমানিক) হিসেবে গঠিত হতে দেখা যায়। পর্যায় সারণির ২, ৬, ১০ ও ১৬-ব্লকের বিভিন্ন অংশে মৌলগুলির পর্যাবৃত্তি ধর্মও যথাক্রমে s, p, df কক্ষকে থাকা সর্বমোট ইলেকট্রন সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। যদিও টেমপ্লেট:Mvar এর উচ্চতর মানে, বিশেষত পরমাণুটি ধনাত্মক আধান বহন করলে, ওই নির্দিষ্ট উপকক্ষগুলির মোট শক্তির মান খুবই কাছাকাছি হয়ে পড়ে (যেমন Cr = [Ar]4s13d5 এবং Cr2+ = [Ar]3d4), তখন ইলেকট্রন বিন্যাস নির্ধারণ করতে অনুমানের সাহায্য নিতে হয়।

হাইড্রোজেন পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরে পারমাণবিক কক্ষক।

ইলেকট্রনের ধর্ম

কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশের সাথে সাথে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে (যেমন ইলেকট্রনের দ্বি-রেখাছিদ্র অপবর্তন) দেখা গেল যে, নিউক্লিয়াসের চারিদিকে কক্ষপথে ইলেকট্রনের পরিক্রমণ কেবল তার কণা-ধর্ম দিয়ে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না, কণা-তরঙ্গ দ্বিত্বের সাহায্যে একে ব্যাখ্যা করতে হয়। এই অনুসারে, ইলেকট্রনগুলির নিম্নোক্ত ধর্মগুলি দেখা যায়:

তরঙ্গধর্ম:

  1. সূর্যের চারদিকে গ্রহরা যেভাবে পরিক্রমণ করে, ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে মোটেই সেভাবে পরিক্রমা করে না, এটি স্থাণুতরঙ্গের মতো উপস্থিত থাকে। সেই হেতু ইলেকট্রনের সর্বনিম্ন শক্তি কোনো টান-করা তারে তরঙ্গের মূলসুরের কম্পাঙ্কের অনুরূপ হয়। উচ্চ শক্তিস্তরগুলি ওই মূলসুরের সমমেলের সাথে তুলনীয়।
  2. একটি ইলেকট্রন কখনোই কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে অবস্থান করতে পারে না, যদিও ইলেকট্রনের তরঙ্গ অপেক্ষক থেকে কোনো বিন্দুতে ইলেকট্রনের সাথে আন্তঃক্রিয়ার সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায়। ইলেকট্রনের আধান ওই অঞ্চলে সমভাবে পরিব্যাপ্ত থাকে, এবং তা ওই বিন্দুতে ইলেকট্রনের তরঙ্গ অপেক্ষকের মানের বর্গের সমানুপাতিক হয়।

কণাধর্ম:

  1. নিউক্লিয়াসের চারিদিকে যতগুলি ইলেকট্রন পরিক্রমণ করে, তা পূর্ণ সংখ্যায় হয়।
  2. কক্ষপথ পরিবর্তনের সময় ইলেকট্রন কণার মতোই আচরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ফোটন ইলেকট্রনকে আঘাত করে, তবে তার ফলে একটি মাত্র ইলেকট্রন শক্তিস্তর পরিবর্তন করে।
  3. ইলেকট্রনের আরও কিছু কণাধর্ম: প্রতিটি তরঙ্গে একটিমাত্র ইলেকট্রনের সমান আধান ব্যাপ্ত থাকে। প্রতিটি তরঙ্গের নিজস্ব ঘূর্ণন (Spin) বা অক্ষীয় আবর্তন (ঊর্ধ্বমুখী ঘূর্ণন ও অধোমুখী ঘূর্ণন) আছে। এটি অভিলেপনের ওপর নির্ভর করে।

অর্থাৎ, সূর্যের চারদিকে গ্রহদের আবর্তন থেকে ইলেকট্রনের ধর্ম ব্যাখ্যা বেশ জনপ্রিয় হলেও, ইলেকট্রনকে শুধু নিরেট কণা ভেবে নিলে চলে না। এছাড়াও, পারমাণবিক কক্ষক পুরোপুরি গ্রহদের কক্ষপথের মতো নয়। বরং আরও নিখুঁতভাবে বলা যায়, একটি বিরাট অদ্ভুত আকৃতির "পরিমণ্ডল" (ইলেকট্রন নিজেই) তুলনায় ছোট্ট একটি গ্রহের (পারমাণবিক নিউক্লিয়াস) চারদিকে ছড়িয়ে আছে। পরমাণুতে কেবল একটি ইলেকট্রন থাকলে সেই পরিমণ্ডলের আকৃতি কেমন হবে, সেটাই বোঝায় পারমাণবিক কক্ষক। ওই পরমাণুতে আরও ইলেকট্রন যোগ করলে, অতিরিক্ত ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসের পারিপার্শ্বে আরও বেশি আয়তন দখল করে, ফলস্বরূপ একটি ইলেকট্রন-পুঞ্জ তৈরি হয় (একে "ইলেকট্রন মেঘ" বলে), যা তার গোলকীয় আকৃতির মাধ্যমে পরামাণুতে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা অঞ্চলকে ব্যাখ্যা করে। অনিশ্চয়তা নীতির জন্যই এরূপ হয়।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় পূর্বতন সংজ্ঞা

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা