মুডি চার্ট
প্রকৌশলবিদ্যায় মুডি চার্ট বা মুডি ডায়াগ্রাম (অথবা স্ট্যান্টন ডায়াগ্রাম) হল একটি অ-মাত্রিক লেখচিত্র যা বৃত্তাকার পাইপের ভিতরে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত প্রবাহের ডারসি-ওয়েইসব্যাশ ঘর্ষণ ফ্যাক্টর fD, রেইনল্ডস নম্বর Re এবং সার্ফেস রাফনেসের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। একে পাইপের ভেতরের চাপের হ্রাস বা প্রবাহমাত্রা অনুমান করতে ব্যবহার করা যায়।

ইতিহাস
লুইস ফেরি মুডি ১৯৪৪ সালে আপক্ষিক রাফনেস ε / D এর বিভিন্ন মানের জন্য ডার্সি – ওয়েইসব্যাশ ঘর্ষণ ফ্যাক্টর এর বিপরীতে রেনল্ডস নম্বর Re কে বসিয়ে লেখচিত্র তৈরী করেন যা পরবর্তীতে মুডি চার্ট বা মুডি ডায়াগ্রাম হিসেবে পরিচিতি পায়। চার্টটি তৈরী করা হয় হান্টার রাউসের গবেষণাগুলোর [১] ওপর ভিত্তি করে কিন্তু এতে আর.জে.এস পিগট [২] এর তৈরী অধিক কার্যকর স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার ব্যবহার করা হয়েছে। আর.জে.এস পিগট এর কাজের ভিত্তি ছিল প্রায় ১০,০০০ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তাদের ফলাফল বিশ্লেষণ।[৩] জে. নিকুরাদসার [৪] কৃত্রিমভাবে অমসৃণকৃত (roughened) পাইপের ভেতর দিয়ে প্রবাহীর প্রবাহমাত্রা মাপার গবেষণাটি এর স্বল্প সময় আগে প্রকাশ পাওয়ায় পিগটের চার্টে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি।
মুডি চার্টের উদ্দেশ্য ছিল সি. এফ. কলারবুক এবং সি. এম. হোয়াইটের [৫] ফাংশনকে লেখচিত্রে উপস্থাপন করা। চার্টটি একটি কার্যকর ট্রাঞ্জিশন (রূপান্তর) কার্ভ তৈরী করে মসৃণ এবং অমসৃণ পাইপের মধ্যবর্তী ট্রাঞ্জিশন জোনকে লেখচিত্রে সংযুক্ত করে। এই জোন বা অঞ্চলকে অসম্পূর্ণ টার্ব্যুলেন্স অঞ্চলও বলা হয়।
বর্ণনা
মুডির ও তাঁর দল প্রাপ্ত ডাটা ( নিকুরাদসার গবেষণাসহ) ব্যবহার করে দেখাতে সক্ষম হয় যে অমসৃণ পাইপের মধ্য দিয়ে প্রবাহীর প্রবাহকে চারটি অ-মাত্রিক রাশি দিয়ে বর্ণণা করা যায় ( রেইনল্ডস নাম্বার, প্রেশার-লস সহগ, পাইপের ব্যাসের অনুপাত এবং আপেক্ষিক রাফনেস)। এরপর তারা রাশিগুলো ব্যবহার করে একটি লেখচিত্র তৈরী করে দেখান যে রাশিগুলো একসারি লাইন তৈরী করে। এটাই বর্তমানে মুডি চার্ট নামে পরিচিত। এই অ-মাত্রিক চার্টটি পাইপের ভেতরের প্রেশার-ড্রপ, ( প্যাসকেল) ( অথবা হেড লস, (মিটার)) এবং প্রবাহমাত্রা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহ্রত হয়। ডার্সি-ওয়েইসব্যাশ সমীকরণ ব্যবহার করে হেড লস নির্ণয় করা যায়ঃ
হেড লস থেকে এভাবে প্রেশার-ড্রপ নির্ণয় করা যায়:
বা সরাসরি এভাবে বের করা যায়
যখন, হল প্রবাহীর ঘনত্ব, পাইপের ভেতর প্রবাহীর গড় বেগ, হল মুডি চার্ট থেকে প্রাপ্ত ঘর্ষণ গুণাঙ্ক, পাইপের দৈর্ঘ্য এবং পাইপের ব্যাস।
চার্টটি আপেক্ষিক রাফনেসের বিভিন্ন মানের জন্য ডার্সি – ওয়েইসব্যাশ ঘর্ষণ ফ্যাক্টর এর বিপরীতে রেনল্ডস নম্বর Re কে লেখচিত্রে স্থাপন করে। পাইপের রাফনেস বা অমসৃণতার গড় মান এবং পাইপের ব্যাসের অনুপাতই হল আপেক্ষিক রাফনেস বা ।
মুডি চার্টকে প্রবাহের ধরনের ভিত্তিতে দুই অঞ্চলে ভাগ করা যায়ঃ ল্যামিনার এবং টার্ব্যুলেন্ট । ল্যামিনার প্রবাহ অঞ্চলের জন্য ( <~ 3000) রাফনেসের কোনো বিশেষ প্রভাব নেই এবং পোয়েজল এই অঞ্চলের ডার্সি-ওয়েইসব্যাশ ঘর্ষণ গুণাঙ্ক কে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে নির্ণয় করেনঃ
- ল্যামিনার প্রবাহের জন্য প্রযোজ্য
টার্ব্যুলেন্ট প্রবাহের ক্ষেত্রে ঘর্ষণ গুণাঙ্ক , রেইনল্ডস নাম্বার Re এবং আপেক্ষিক রাফনেস এর সম্পর্ক ল্যামিনারের চাইতে জটিল। এই সম্পর্ক প্রকাশের জন্য একটি অন্যতম মডেল হল কলারব্রুক সমীকরণ ( যা এর একটি ইমপ্লিসিট সমীকরণ):
- টার্ব্য়ুলেন্ট প্রবাহের জন্য প্রযোজ্য
প্রয়োগ
প্রথমে কোনো প্রবাহের জন্য রেইনল্ডস নাম্বার এবং আপেক্ষিক রাফনেসের মান জানা থাকতে হবে। আপেক্ষিক রাফনেসের মানের সাথে মিলিয়ে ডান দিকের একটি লাইন পাওয়া যাবে। যদি প্রিন্ট করা লাইন না পাওয়া যায়, তাহলে অনুমান করে একটি লাইন ধরে বা এঁকে নিতে হবে। এই লাইন রেইনল্ডস নাম্বারের উলম্ব লাইনকে যেই বিন্দুতে ছেদ করে সেইটা হবে ঘর্ষণ ফ্যাক্টরের মান। এক্ষেত্রে পাইপ খুবই মসৃণ হলে আপেক্ষিক রাফনেস শূণ্য হতে পারে। সেক্ষেত্রেও ঘর্ষণ ফ্যাক্টরের মান পাওয়া যাবে। [৬]

ল্যামিনার প্রবাহের জন্য ঘর্ষণ ফ্যাক্টরের মান মূলত রেইনল্ডস নাম্বারের ওপর নির্ভর করে। তবে সেক্ষেত্রে পোয়েজলের সূত্রের সাহায্যে সহজেই ঘর্ষণ ফ্যাক্টরের মান নির্ণয় করা সম্ভব। তবে টার্ব্যুলেন্ট প্রবাহের জন্য চার্টের লাইনগুলো X অ্যাক্সিসের সমান্তরাল অর্থাৎ রেইনল্ডস নাম্বারের ওপর নির্ভরশীল না। কলারবুক সমীকরণ এর একটি ইমপ্লিসিট ধরনের সমীকরণ বলে এটির থেকে চার্ট ব্যবহার করাই অধিক প্রচলিত। তাই মূলত টার্ব্যুলেন্ট প্রবাহের জন্য চার্টের প্রয়োজনীয়তা বেশি। কিন্তু ল্যামিনার এবং টার্ব্যুলেন্টের মাঝের ক্রিটিক্যাল অঞ্চলে প্রবাহের ঘর্ষণ ফ্যাক্টরের মান রেইনল্ডস নাম্বার এবং আপেক্ষিক রাফনেস উভয়ের ওপরই আংশিকভাবে নির্ভরশীল। সুতরাং, ট্রাঞ্জিশনাল প্রবাহের জন্যেই চার্ট উপযুক্ত নয়।[৭]
ফ্যানিং ঘর্ষণ ফ্যাক্টর
এই ফরমুলাটিকে ফ্যানিং সমীকরণ এর সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত হবে না। ফ্যানিং সমীকরণে ফ্যানিং ঘর্ষণ ফ্যাক্টর কে ডার্সি-ওয়েইসব্যাশ ফ্যাক্টর এর এক-চতুর্থাংশের সমান ধরা হয়। ফ্যানিং ফ্যাক্টর ব্যবহার করলে প্রেশার-ড্রপ হবেঃ
তথ্যসূত্র
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি These show in detail the transition region for pipes with high relative roughness (ε / D > 0.001).
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি