সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন
সমন্বিত রসায়নে, সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন[১], যা ডেটিভ বন্ধন[২], দ্বিপোলার বন্ধন[১] বা সন্নিবেশী বন্ধন[৩] নামেও পরিচিত, এক ধরণের দ্বিকেন্দ্রিক, দ্বিইলেকট্রনিক সমযোজী বন্ধন যেখানে দুটি ইলেকট্রন একটি পরমাণু থেকেই আসে। ধাতব আয়নসমূহের সাথে লিগ্যান্ডসমূহের এ ধরণের বন্ধন হয়ে থাকে।[৪] এ ধরণের বন্ধন লুইসের এসিড-ক্ষার তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দু।
সন্নিবেশী বন্ধন সাধারণত সমন্বিত যৌগসমূহের মধ্যে পাওয়া যায়।[৫]
উদাহরণসমূহ

সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন সর্বত্র বিদ্যমান।[৬] সকল ধাতব জলীয়-জটিল যৌগ [M(H2O)n]m+ সমূহের মধ্যে পানি ও ধাতব ক্যাটায়নের মধ্যকার যে বন্ধন সেটিকে সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বেশিরভাগ ধাতব জৈব যৌগ এবং সমন্বিত যৌগসমূহের ধাতব-লিগ্যান্ড বন্ধনকেও একইভাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
জৈব রসায়নে দ্বিপোলার বন্ধন শব্দটি অ্যামাইন অক্সাইডের মতো যৌগগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়, যেগুলোর ইলেকট্রনিক কাঠামোকে একটি অক্সিজেন পরমাণুতে দুটি ইলেকট্রন দানকারী মৌলিক অ্যামিনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণনা করা যেতে পারে।
তীর চিহ্ন → নির্দেশ করে যে বন্ধনের উভয় ইলেকট্রনই অ্যামিন ময়িটি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। একটি আদর্শ সমযোজী বন্ধনে প্রতিটি পরমাণু একটি করে ইলেকট্রন প্রদান করে থাকে। অতএব, অন্যভাবে বলা যায় অ্যামিনটি অক্সিজেন পরমাণুকে একটি ইলেকট্রন দান করে যেটি পরে আদর্শ সমযোজী বন্ধন গঠন করতে নাইট্রোজেনের অবশিষ্ট অযুগ্ম ইলেকট্রনের সাথে ব্যবহৃত হয়। নাইট্রোজেন থেকে অক্সিজেনে ইলেকট্রন স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি ফর্মাল চার্জ তৈরি করে, তাই ইলেকট্রনিক কাঠামোটিকে এইভাবেও চিত্রিত করা যেতে পারে-

এই ইলেকট্রনিক কাঠামোটির একটি ইলেকট্রিক ডাইপোল রয়েছে; তাই এর নাম পোলার বন্ধন। বাস্তবে পরমাণুসমূহ আংশিক চার্জ বহন করে; বন্ধনে আবদ্ধ দুটি পরমাণুর মধ্যে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণুটি সাধারণত একটি আংশিক ঋণাত্মক চার্জ বহন করে। এর মধ্যে একটি ব্যতিক্রম হচ্ছে কার্বন মনোঅক্সাইড। এক্ষেত্রে কার্বন পরমাণু অক্সিজেনের চেয়ে কম তড়িৎ ঋণাত্মক হওয়া সত্ত্বেও আংশিক ঋণাত্মক চার্জ বহন করে।
নাইট্রোজেন পরমাণুতে এক জোড়া মুক্তজোড় ইলেকট্রনযুক্ত একটি লুইস ক্ষার অ্যামোনিয়া অণু এবং বোরন ট্রাইফ্লোরাইড, একটি লুইস অ্যাসিডের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া দ্বারা একটি ডেটিভ সমযোজী বন্ধনের উদাহরণ পাওয়া যায়, যা বোরন পরমাণুর অষ্টক অপূর্ণতার ফলাফল। অ্যাডাক্ট গঠনের মাধ্যমে বোরন পরমাণু অষ্টক পরিপূর্ণতা অর্জন করে।
একটি সমন্বিত জটিল যৌগের ইলেকট্রনিক কাঠামোকে বন্ধনে অংশগ্রহণকারী লিগ্যান্ডসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণনা করা যেতে পারে যেখানে প্রতিটি লিগ্যান্ড ধাতব কেন্দ্রে এক জোড়া ইলেকট্রন দান করে। উদাহরণস্বরূপ, হেক্সাঅ্যামিনকোবাল্ট(III) ক্লোরাইড অণুতে, প্রত্যেকটি অ্যামোনিয়া লিগ্যান্ড কোবাল্ট(III) আয়নকে তাদের মুক্ত জোড় ইলেকট্রন দান করে। এক্ষেত্রে যে বন্ধন গঠিত হয় সেটিকেই সন্নিবেশী বন্ধন হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। কোভ্যালেন্ট বন্ড ক্লাসিফিকেশন (CBC) পদ্ধতিতে, যে লিগ্যান্ডগুলি একটি কেন্দ্রীয় পরমাণুর সাথে সমন্বিত সহযোজী বন্ধন গঠন করে তাদের L-টাইপ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, আর যে লিগ্যান্ডগুলি স্বাভাবিক সমযোজী বন্ধন গঠন করে তাদের X-টাইপ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।
অন্যান্য ইলেকট্রন শেয়ারিং-এর ধরণের সাথে তুলনা
সকল বন্ধনের ক্ষেত্রেই যেখানে ইলেকট্রন শেয়ারিং হয় তা ডেটিভ হোক বা সাধারণ, একটি সমযোজী বন্ধন। সাধারণভাবে, দ্বিপোলার, ডেটিভ বা সন্নিবেশী উপসর্গসমূহ বন্ধন গঠনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইলেকট্রনের উৎস নির্দেশ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, F3B ← O(C2H5)2 ("বোরন ট্রাইফ্লোরাইড (ডাইইথাইল) ইথারেট") [•BF3]– এবং [•O(C2H5)2]+ রেডিক্যাল গোত্রের বিপরীতে BF3 এবং :O(C2H5)2 থেকে তৈরি করা হয়। ডেটিভ বন্ধনকে চিহ্নিত করাও সুবিধাজনক, কারণ এক্ষেত্রে ফর্মাল চার্জসমূহকে বিবেচনায় নেওয়া হয় না: আমরা অ+–ক– এর পরিবর্তে অ: + []ক ⇌ অ → ক লিখতে পারি (এখানে : এবং [] যথাক্রমে ইলেকট্রন-জোড় দাতা অ এর মুক্ত জোড় ইলেকট্রনকে এবং ইলেকট্রন-জোড় গ্রহীতা ক এর ফাঁকা অরবিটালকে নির্দেশ করে)। এই চিহ্নিতকরণ কখনো কখনো সেসব ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় যেখানে লুইস এসিড-ক্ষার বিক্রিয়া অনেকটা তাত্ত্বিক (যেমন- যদি সালফাইড R2S এর সাথে পারমাণবিক অক্সিজেন O এর বিক্রিয়ায় R2S → O তৈরি করা হয় তাহলে কমই পাওয়া যায়)। তাই রসায়নবিদেরা একটি চিহ্নিতকরণ পদ্ধতির উপর আরো একটি পদ্ধতি (ফর্মাল চার্জ বনাম তীর চিহ্নিত বন্ধন) বাছাই করার সময় বন্ধনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোনো দাবি করেন না।
তবে এটি সাধারণত সত্য যে, এভাবে চিহ্নিতকৃত বন্ধনগুলি পোলার সমযোজী, কখনো কখনো আসলেই তাই, এবং কেউ কেউ দাবি করেন যে ডেটিভ বন্ধন ও ইলেকট্রন শেয়ারকৃত বন্ধনের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য রয়েছে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ডেটিভ বন্ধন দেখানো আরও উপযুক্ত। ১৯৮৯ সালে, হল্যান্ড ডেটিভ বন্ধনগুলিকে এমন বন্ধন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন যা (১) দুর্বল এবং দীর্ঘ; (২) বন্ধন গঠনের সময় কেবলমাত্র অল্প পরিমাণে চার্জ স্থানান্তর ঘটে এবং (৩) গ্যাস অবস্থায় বা নিম্ন ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবক ε বিশিষ্ট নিষ্ক্রিয় দ্রাবকে এর অপসারণের প্রাথমিক ধরণ হোমোলাইটিকের পরিবর্তে হেটেরোলাইটিক হয়।[৭] অ্যামোনিয়া-বোরেন অ্যাডাক্ট (H₃N → BH₃) কে একটি ক্লাসিক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়: এই বন্ধনটি দুর্বল, যার বিচ্ছিন্নতার শক্তি হলো ৩১ কিলোক্যালরি/মোল (তুলনায় ইথেনের ক্ষেত্রে এটি ৯০ কিলোক্যালরি/মোল)। এই বন্ধনটি দীর্ঘ, যার দৈর্ঘ্য হলো ১৬৬ পিকোমিটার (তুলনায় ইথেনের জন্য ১৫৩ পিকোমিটার)। এই অণুটি ৫.২ ডিবাই (D) এর একটি ডাইপোল মোমেন্ট ধারণ করে, যা নির্দেশ করে যে নাইট্রোজেন থেকে বোরন এর দিকে মাত্র ০.২ ইলেকট্রন (e⁻) স্থানান্তরিত হয়েছে। H₃N → BH₃ এর হেটেরোলাইটিক অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রায় ২৭ কিলোক্যালরি/মোল হিসেবে অনুমান করা হয়েছে। এটি নিশ্চিত করে যে অ্যামোনিয়া (H₃N) এবং বোরেন (BH₃) -এ হেটেরোলাইসিস হোমোলাইসিসের তুলনায় বেশি সুবিধাজনক, যেখানে অপসারণের ফলে রেডিক্যাল ক্যাটায়ন এবং রেডিক্যাল অ্যানায়ন তৈরি হয়। তবে, স্পষ্ট উদাহরণগুলোর বাইরে, একটি নির্দিষ্ট যৌগকে কখন ডেটিভ বন্ধন হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হবে তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য বিতর্ক রয়েছে। এর ফলে, ডেটিভ বন্ধনের সামগ্রিক বিস্তৃতি নিয়েও মতপার্থক্য দেখা যায়, যা অনেকাংশে কোনো লেখকের পছন্দের সংজ্ঞার উপর নির্ভর করে। পরিগণনামূলক রসায়নবিদরা দুই "ধরনের" বন্ধনের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য পরিমাণগত মানদণ্ড প্রস্তাব করেছেন।[৮][৯][১০]
কিছু অপ্রত্যাশিত উদাহরণ যেখানে ডেটিভ বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করা হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: কার্বন সাবঅক্সাইড (O≡C → C⁰ ← C≡O), টেট্রাএমিনোঅ্যালিনস ((R₂N)₂C → C⁰ ← C(NR₂)₂), যা ডেটিভ বন্ধনের ভাষায় "কার্বোডাইকার্বিন" হিসেবে বর্ণনা করা হয়; রামিরেজ কার্বোডিফসফোরেন (Ph₃P → C⁰ ← PPh₃), এবং বিস(ট্রাইফিনাইলফসফিন)ইমিনিয়াম ক্যাটায়ন (Ph₃P → N⁺ ← PPh₃), এই সমস্ত যৌগগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বক্র সমতুল্য জ্যামিতিক কাঠামো প্রদর্শন করে, যদিও বাঁকানোর জন্য প্রতিবন্ধকতা তুলনামূলকভাবে কম। বন্ধন সর্বাধিক করে (ইলেকট্রন-শেয়ারিং বন্ধন ব্যবহার করে) এবং ফর্মাল চার্জ কমিয়ে লুইস কাঠামো আঁকার জন্য সাধারণ নিয়মগুলির সহজ প্রয়োগ, এই প্রতিটি যৌগের জন্য হেটেরোকিউমুলিন কাঠামো এবং পরে রৈখিক জ্যামিতি কেমন হবে তা অনুমান করবে। অতএব, এই অণুগুলিকে :C: (কার্বন(0) বা কার্বোন) অথবা :N:+ (মনোনাইট্রোজেন ক্যাটায়ন) এর সমন্বিত জটিল যৌগ হিসেবে দেখানো আরও উপযুক্ত বলে দাবি করা হয়, যেখানে CO, PPh₃, বা N-হেটেরোসাইক্লিককার্বিন লিগ্যান্ড হিসেবে কাজ করে। কেন্দ্রীয় পরমাণুর উপর থাকা মুক্ত জোড় ইলেকট্রন এই বক্র জ্যামিতিক কাঠামোর জন্য দায়ী। তবে, এই দৃষ্টিভঙ্গির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[৯][১০]