হার্ডি–উইনবার্গ সূত্র

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

হার্ডি–উইনবার্গ সূত্র (টেমপ্লেট:Lang-en) বা হার্ডি–উইনবার্গ নীতি বা হার্ডি–উইনবার্গ সাম্যাবস্থা হল জনসংখ্যা বংশাণুবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র যা ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ গডফ্রি হ্যারল্ড হার্ডি[] ও জার্মান চিকিৎসক উইলহেল্ম উইনবার্গ[][] কর্তৃক স্বাধীনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল। সূত্রটি পপুলেশনে জিনের গতিবিধি নির্ণায়ক।

হার্ডি ও উইনবার্গের মতে:

জিন মজুতে বিশেষ কোন জিনের অ্যালিলগুলির আনুপাতিক পরিমাণ কোন ব্যতিচার ব্যতিরেকে সাধারণত স্থির থাকে। জিনের অ্যালিলগুলির পরিমাণ স্থির থাকলে পপুলেশনের কোনো প্রজাতিভুক্ত জীবদের বিভিন্ন জেনোটাইপের বিস্তার সাম্যবস্থা বজায় রেখে চলে। আনুপাতিক মাত্রার পরিবর্তন হলে এই সাম্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়।

মূলত জীবজগতের যে কোন পপুলেশনেই এই সূত্র প্রযোজ্য হয় না। শুধুমাত্র মেন্ডেলীয় পপুলেশনে এই সূত্রটি প্রযোজ্য। যে কোন যৌন জননকারী ছোট বা বড় পপুলেশনকে বলা হয় মেন্ডেলীয় পপুলেশন। প্রসঙ্গত মেন্ডেলীয় পপুলেশনে জিনের উত্তর লব্ধি মেন্ডেলের সূত্র অনুসারে হয়। এই পপুলেশনের জনিতৃজনুর জিনগুলি পুরুষ ও স্ত্রী গ্যামেটের মাধ্যমে পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয় ও বিস্তার লাভ করে।

শর্তাবলী

যখন বৃহৎ পপুলেশনে স্ত্রী ও পুরুষ অবাধে মেলামেশা করতে পারে এবং পপুলেশনে পরিব্যক্তি (বা মিউটেশন), প্রাকৃতিক নির্বাচন, জেনেটিক ড্রিফট, জিন প্রবাহ, পরিযান প্রভৃতি অভিব্যক্তি মূলক শক্তি কার্যকরী না হয়, তাহলে সেই পপুলেশনে বংশপরম্পরায় অ্যালিলগুলির আনুপাতিক মান অপরিবর্তিত থাকবে এবং জিনোটাইপের বিস্তারে ভারসাম্য বজায় থাকবে।[]

গাণিতিক বিশ্লেষণ

দুটি অ্যালিল-এর জন্য হার্ডি–উইনবার্গ সাম্যাবস্থা: অনুভূমিক অক্ষ বরাবর দুটি অ্যালিলের আনুপাতিক মাত্রা (pq) এবং উল্লম্ব অক্ষ বরাবর জিনোটাইপের আনুপাতিক মাত্রা। এক একটি রেখা এক একটি জিনোটাইপের ক্ষেত্র নির্দেশ করে।

লেখচিত্রে একটি জিন নেওয়া হয়েছে যার দুটি অ্যালিল A এবং a। শর্তাবলী অক্ষুণ্ণ রেখে চললে, জিনোটাইপের আনুপাতিক মাত্রা f(A)=p এবং f(a)=q। আবার, হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস ধরে হিসেব করতে গেলে, f(AA)=p², f(aa)=q² এবং f(Aa)=2pq।

টেমপ্লেট:Math এর দৈর্ঘ্য অ্যালিলের আনুপাতিক মাত্রাকে নির্দেশ করে (এখানে টেমপ্লেট:Math)। তাহলে আয়তক্ষেত্র গুলির ক্ষেত্রফল জিনোটাইপের আনুপাতিক মাত্রাকে নির্দেশ করবে। (তাই টেমপ্লেট:Math)।
হার্ডি উইনবার্গ চেকার বোর্ড/পানেট বর্গ
স্ত্রী
A (p) a (q)
পুরুষ A (p) AA (p2) Aa (pq)
a (q) Aa (qp) aa (q2)

যেহেতু জিনোটাইপের আনুপাতিক মাত্রার মোট যোগফল ১ হতেই হবে তাই, টেমপ্লেট:Math

এখান থেকে, টেমপ্লেট:Math

জিনোটাইপের আনুপাতিক মাত্রার নির্ধারক সূত্র: টেমপ্লেট:NumBlk টেমপ্লেট:NumBlk

পানেট বর্গ বা দ্বিপদ সম্প্রসারণের উপাদানগুলির সংক্ষিপ্তকরণ, আমরা একটি একক প্রজন্মের পরে বংশধরদের মধ্যে প্রত্যাশিত জিনোটাইপ অনুপাত পাই: টেমপ্লেট:NumBlk টেমপ্লেট:NumBlk টেমপ্লেট:NumBlk

উপরের পাঁচটি সমীকরণকে একসাথে প্রয়োগ করে দেখা যাবে যে A অ্যালিলের আনুপাতিক মাত্রা পরের প্রজন্মেও p এবং a অ্যালিলের আনুপাতিক মাত্রা পরের প্রজন্মেও q ই থাকবে। তাই এই সূত্রটি c তম প্রজন্মের জন্য একই রূপ ধারণ করে থাকে:

(p+q)c=1

অন্য রূপে: (n সংখ্যক অ্যালিল)

(p1++pn)c=k1,,kn :k1++kn=c(ck1,,kn)p1k1pnkn

উদাহরণ

উদাহরণ ১

প্রকার ধর্মী একদিনের জন্য মানুষ ফিনাইল থায়োকার্বামাইড (PTC) নামে এক রাসায়নিক পদার্থের স্বাদ তিক্ত অনুভব করে এই দিনটির প্রচ্ছন্ন ধর্মী পরিবর্তন মানুষের উক্ত রাসায়নিক পদার্থটির স্বাদ অনুভব করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ধরা যাক মানুষের PTC এর স্বাদ অনুভূতির জন্য দায়ী জিনের প্রকট অ্যালিল T এবং প্রচ্ছন্নধর্মী অ্যালিল t। তাই TT, Tt জিনোটাইপ যুক্ত মানুষ স্বাদ গ্রহণে সমর্থ কিন্তু tt জিনোটাইপ যুক্ত মানুষ স্বাদ গ্রহণে অসমর্থ।

কল্পিত আনুপাতিক মাত্রা ধরা যাক, TT=0.36, Tt=0.48, tt= 0.16।

তাহলে, এরকম জেনোটাইপীয় বিস্তার অনুসারে T ও t জিনের আনুপাতিক মান হয়,

p=f(T)=0.36+(12*0.48)=0.6
q=f(t)=0.16+(12*0.48)=0.4

সুতরাং, পরিষ্কার যে, p+q=1

এবং,

p2=f(TT)=0.36
2pq=f(Tt)=0.48
q2=f(tt)=0.16

উল্লিখিত যে, কোন পপুলেশনের জিনোটাইপ গুলি প্রথমে সাম্যবস্থায় না থাকলেও একবার অবাধ মিলন ঘটলে পরবর্তী জনুতেই সাম্যবস্থা অর্জন করে। আর একবার সাম্যবস্থা অর্জিত হলে ও শর্তাবলী অক্ষুণ্ণ থাকলে জিনের আনুপাতিক মানের কোন পরিবর্তন আসে না।


উদাহরণ ২
  • একটি পপুলেশনে দেখা গেল চার শতাংশ লোক অ্যালবিনিজম-এ আক্রান্ত যদি পপুলেশনে ১০০০০০ লোক থাকে, তাহলে যে জিনের জন্য অ্যালবিনিজম হয় তার সংখ্যাানুপাতিক মান কত? ওই পপুলেশনে কি ধরনের লোক দেখা যাবে?

যেহেতু, ৪% লোক আক্রান্ত, তাহলে অ্যালবিনো লোক আছে = ৪০০০ আর তার সংখ্যানুপাত = ৪০০০÷১০০০০০ = ০.০৪।

অ্যালবিনিজম একটি অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন রোগ, তাই আক্রান্তরা হোমোজাইগাস প্রচ্ছন্নধর্মী জিনোটাইপ বহন করে। যদি, অ্যালবিনিজমের জন্য দায়ী জিনের প্রচ্ছন্ন অ্যালিল a (রোগের জন্য দায়ী) ও প্রকট অ্যালিল A হয়, তাহলে আক্রান্তদের জিনোটাইপ aa। a অ্যালিলের সংখ্যানুপাতিক মান q হলে, q²=০.০৪ বা, q = ০.২। তাই, A অ্যালিলের সংখ্যানুপাতিক মান p হলে, p+q=১ বা, p = ০.৮।

তাহলে, স্বাভাবিক হোমোজাইগাস আছে = p²×(১০০০০০) = ৬৪০০০।

তাহলে, স্বাভাবিক হেটেরোজাইগাস আছে = 2pq×(১০০০০০) = ৩২০০০।

এটাও প্রমাণিত যে, ৬৪০০০+৩২০০০+৪০০০ = ১০০০০০ = মোট জনসংখ্যা

গুরুত্ব

  • অভিব্যক্তিজনিত পরিবর্তন পরিমাপের অন্যতম তাত্ত্বিক এবং প্রাথমিক স্তর।
  • এই সাম্যবস্থা পপুলেশনে হেটেরোজাইগাস অবস্থা বজায় রাখে।
  • এই সাম্যাবস্থা জিনগত নতুন প্রাপ্তিকে পপুলেশনের ধরে রাখে এবং অতি দ্রুত পরিবর্তনকে প্রশমিত করে।
  • অভিব্যক্তির অগ্রগতিকে প্রতিহত করে।

সাম্যবস্থা ও অভিব্যক্তি

যেকোনো পপুলেশনের একটি জিনগত মডেল তৈরি করে এই সূত্রটি, যা পপুলেশনের একটি স্থির অবস্থার পরিচয়ক। এই অবস্থায় পপুলেশনে জিনোটাইপের অনুপাত সাম্যাবস্থায় বজায় রেখে যখন কোন প্রজাতির অভিব্যক্তি আসতে পারে না। কিন্তু এমন অবস্থা সম্পূর্ণ তাত্ত্বিক বা কাল্পনিকও বলা যেতে পারে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক পরিবেশে নানা রকম অভিব্যক্তি বল কাজ করে থাকে এবং তার ফলে কখনো জিনের অনুপাতিক মাত্রা স্থায়ী থাকতে পারে না। এর অপর প্রভাব হলো সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং তার মধ্যে দিয়েই আসে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির আবির্ভাব। অর্থাৎ বিঘ্নিত সাম্যাব্যবস্থাই অভিব্যক্তির অন্যতম কারণ।

বিভেদ প্রকরণ যখন অভিব্যক্তির মূল উপাদান তখন যে যে কারণে পপুলেশনের প্রজাতি সদস্যদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়, সেগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর বিভেদ সৃষ্টির এই পথগুলি আসলে জিনোটাইপের আনুপাতিক মাত্রার পরিবর্তন আনে। তাই এই মাত্রা পরিবর্তন প্রজাতি সদস্যদের মধ্যে বিভেদের মাত্রা নির্ধারক একটি সূচক হিসেবে ধরা যায়। উপরোক্ত শর্তাবলীর যেকোনো একটি ভেঙে গেলেই অভিব্যক্তি নিজের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং নতুন প্রজাতি গঠনে অনবদ্য হিসেবে কাজ করে।

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা

আরও পড়ুন

টেমপ্লেট:Refbegin

টেমপ্লেট:Refend

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:কমন্স বিষয়শ্রেণী

টেমপ্লেট:বিবর্তন টেমপ্লেট:বংশাণুবিজ্ঞান

  1. Hardy, 1908
  2. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  3. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  4. Hastings, Alan. 1997. "Population Biology: Concepts and Models". Springer New York. ISBN 978-0-387-94853-9