দশার সমীকরণ

পদার্থবিজ্ঞান এবং তাপগতিবিজ্ঞানে, একটি দশার সমীকরণ হলো একটি দশার চলক সম্পর্কিত তাপগতীয় সমীকরণ যেখানে ভৌত অবস্থার একটি নির্দিষ্ট সেট, যেমন চাপ, আয়তন, তাপমাত্রা (পিভিটি), বা অভ্যন্তরীণ শক্তির অধীনে পদার্থের অবস্থা বর্ণীত হয়।[১] দশার সমীকরণগুলি তরল, তরলের মিশ্রণ, কঠিন এবং নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় কার্যকর।
সার্বিক অবস্থা
বর্তমানে, এমন একটিও দশার সমীকরণ নেই যা যেকোনো অবস্থায় যেকোনো পদার্থের বৈশিষ্ট্য সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারে। আদর্শ গ্যাস সূত্র হিসাবে পরিচিত সমীকরণটি দশার সমীকরণের একটি উদাহরণ যা তাপমাত্রা এবং চাপের সাথে গ্যাস এবং তরলের ঘনত্বের সংযোগ স্থাপন করে, এটি কম চাপ এবং মাঝারি তাপমাত্রায় দুর্বল মেরূপ্রবণতাযুক্ত গ্যাসের জন্য প্রায় সঠিক। এই সমীকরণটি উচ্চ চাপ এবং কম তাপমাত্রায় ক্রমবর্ধমানভাবে ভুল হতে থাকে এবং গ্যাস থেকে তরলে ঘনীকরণের বর্ণনা দিতে ব্যর্থ হয়।
এর ব্যবহারের আরেকটি প্রচলিত ক্ষেত্র হলো, তারার অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য যেমন নিউট্রন তারা, ঘন পদার্থ (কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা[২]) এবং তেজস্ক্রিয় ক্ষেত্রের বর্ণনা। একটি সংশ্লিষ্ট ধারণা হলো, মহাজাগতিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নিখুঁত তরল দশার সমীকরণ।
এক স্ফটিক দশা থেকে অন্যটিতে পরিবৃত্তি সহ দশার সমীকরণগুলি কঠিনকেও বর্ণনা করতে পারে।
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, পেট্রোলিয়াম গ্যাস/তরল ভারসাম্য গণনার মতো প্রকৌশল প্রক্রিয়ার সমস্যাগুলিতে পিভিটি গণনার জন্য দশার সমীকরণগুলি সহায়ক। উপযুক্ত দশার সমীকরণের উপর ভিত্তি করে একটি সফল পিভিটি মডেল প্রবাহ প্রণালী, আধার তরল পরিচালনা করার জন্য স্থিতিমাপের ক্ষেত্রে এবং পাইপ বিন্যাসে সহায়ক হতে পারে।
দশার সমীকরণের স্থিতিমাপ নির্ণয়ে, বিশেষত উচ্চ চাপে লেজার ব্যবহার করা যেতে পারে।[৩][৪][৫]
ইতিহাস
বয়েলের সূত্র (১৬৬২)
বয়েলের সূত্রই সম্ভবত কোনো দশার সমীকরণের প্রথম প্রকাশ। ১৬৬২ সালে[৬] আইরিশ পদার্থবিদ ও রসায়নবিদ রবার্ট বয়েল জে "J " আকৃতির একটি এক মুখ বন্ধ কাঁচের নল ব্যবহার করে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান।[৭] নলটির সংক্ষিপ্ত, বন্ধ প্রান্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু আটকে রেখে কছু পারদ টিউবটিতে প্রবেশ করানো হয়। এরপর, অতিরিক্ত পারদ প্রবেশ করা নলটিতে গ্যাসের আয়তন পরিমাপ করা হয়। নলের ছোট প্রান্ত এবং বড়, উন্মুক্ত প্রান্তের পারদ স্তরের পার্থক্য দ্বারা গ্যাসের চাপ নির্ণয় করা যায়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে, বয়ল বলেন যে গ্যাসের আয়তন এর চাপের বিপরীতে পরিবর্তীত হয়।[৮] গাণিতিক আকারে বলা যায়:
উপরের সম্পর্কটির জন্য এডমে মারিয়টকেও উল্লেখ করা হয় এবং কখনও কখনও একে মারিয়টের সূত্রও বলা হয়। তবে, মারিয়টের কাজটি ১৬৭৬ সালের আগে প্রকাশিত হয়নি।[৯]
চার্লসের সূত্র বা চার্লস এবং গে-লুস্যাক-এর সূত্র (১৭৮৭)
১৭৮৭ সালে ফরাসী পদার্থবিজ্ঞানী জ্যাকুইস চার্লস লক্ষ্য করেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বায়ু প্রায় ৮০-কেলভিনের বিরামকালে প্রায় একই পরিমাণে প্রসারিত হয়। পরবর্তীতে, ১৮০২ সালে, জোসেফ লুই গে-লুস্যাক[১০] অনুরূপ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন, যা আয়তন এবং তাপমাত্রার মধ্যে রৈখিক সম্পর্কের দ্যোতক[১১]:
ডাল্টনের সূত্র (১৮০১)
আংশিক চাপের জন্য ডাল্টনের সূত্রানুসারে, গ্যাসের মিশ্রণের চাপ এককভাবে এর সকল সংগঠক গ্যাসের চাপের সমান।[১২]
গাণিতিকভাবে, n সংখ্যক গ্যাসের জন্য:
আদর্শ গ্যাস সূত্র (১৮৩৪)
১৮৩৪ সালে, বেনয়েট পল এমিলি ক্লেপিওরন, বয়েলের সূত্র এবং চার্লসের সূত্রকে মিলিত করে আদর্শ গ্যাস সূত্রের প্রথম বর্ণনা দেন।[১৩] প্রাথমিকভাবে, সূত্রটি pVm = R(TC + ২৬৭) হিসেবে গঠিত হয় (তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রকাশিত), যেখানে R গ্যাস ধ্রুবক। তবে পরবর্তী কাজগুলি প্রকাশ করে যে সংখ্যাটি আসলে ২৭৩.২ এর কাছাকাছি হওয়া উচিত এবং তখন সেলসিয়াস স্কেলটি ০ °C = ২৭৩.১৫ K দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়:
ভ্যান্ডারওয়ালস-এর দশার সমীকরণ (১৮৭৩)
১৮৭৩ সালে, ইয়োহানেস ডিডেরিক ফান ডার ভাল্স প্রথম দশার সমীকরণটি সংগঠক অণু দ্বারা দখলকৃত একটি সীমাবদ্ধ আয়তন অনুমানের মাধ্যমে উদ্ভূত করেন।[১৪] তাঁর নতুন সূত্রটি দশার সমীকরসণ অধ্যয়নে বিপ্লব সাধন করে এবং রেডলিচ-কোওং দশার সমীকরণ এবং রেডলিচ-কোওং-এর সোভ পরিবর্তনের মাধ্যমে সর্বাধিক বিখ্যাত হয়।[১৫][১৬]
১ মোল গ্যাসের ক্ষেত্রে:
- = ধ্রুবক রাশি
একটি দশার সমীকরণের সাধারণ রূপ
কোনও প্রক্রিয়ায় প্রদত্ত পদার্থের পরিমাণের জন্য তাপমাত্রা, পরিমাণ এবং চাপ স্বতন্ত্র রাশি নয়; এদের একটি সাধারণ গঠন দ্বারা সংযুক্ত করা যায়:
এই সম্পর্কের গঠন সম্পন্ন একটি সমীকরণকে দশার সমীকরণ বলা হয়।এখানে ব্যবহৃত চলকগুলি নিচে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এককগুলির ক্ষেত্রে যে কোনও ধারাবাহিক সেট ব্যবহার করা যেতে পারে, যদিও এস.আই. এককগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পরম তাপমাত্রা বলতে কেলভিন (k) বা রেঙ্কিন মানদন্ড (°R) তাপমাত্রার মানদন্ডের ব্যবহার বোঝায় যেখানে, শূন্য অর্থ পরম শূন্য তাপমাত্রা।
- , চাপ (পরম)
- ,আয়তন
- , মোল সংখ্যা
- , , মোলার আয়তন, ১ মোল গ্যাস বা তরলের আয়তন
- , পরম তাপমাত্রা
- , গ্যাস ধ্রুবক ≈ ৮.৩১৪৪৬২১টেমপ্লেট:NbspJ/mol·K
- , সংকট বিন্দুতে চাপ
- , সংকট বিন্দুতে মোলার আয়তন
- , সংকট বিন্দুতে পরম তাপমাত্রা
চিরায়ত আদর্শ গ্যাস সূত্র
ক্লাসিক্যাল আদর্শ গ্যাস সূত্রকে লেখা যেতে পারে:
উপরে উল্লিখিত গঠন অনুসারে, এই দশার সমীকরণটি:
- ।
এক্ষেত্রে যদি পড়তা নিখুঁত তাপীয় গ্যাস ব্যবহৃত হয় তাহলে সমীকরণটিকে নিম্ন রূপে প্রকাশ করা যায়:
এখানে, হলো তাপ, হলো সমতাপী সূচক (তাপ ধারণের অনুপাত), হলো প্রতি একক ভরের জন্য অভ্যন্তরীণ শক্তি (নির্দিষ্ট অভ্যন্তরীণ শক্তি), হলো ধ্রুব আয়তনে নির্দিষ্ট তাপ এবং হলো ধ্রুব চাপে নির্দিষ্ট তাপ।
তরল ও কঠিনের দশার সমীকরণ
সাধারণ সমাহার:
- পানি এবং অন্যান্য তরলের জন্য রয়েছে টেইটের সমীকরণ। বেশ কিছু সমীকরণকে টেইট সমীকরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[১৭]
- মুরনাঘানের দশার সমীকরণ। এটি টেইটের সমীকরণেরই একটি রূপান্তরযোগ্য রূপ।[১৮][১৯]
- স্ট্যাসি-ব্রেন্নান-আরভিনের দশার সমীকরণ,[২০] (অনেক সময় ভুল করে রোজ-ভিনেটের দশার সমীকরণ হিসেবে উল্লিখিত হয়)
- রাইডবার্গের পরিবর্তীত দশার সমীকরণ [২১][২২][২৩] (কঠিন সঙ্কোচনের জন্য অধিক হেতু সম্পন্ন)
- অভিযোজিত বহুপদী দশার সমীকরণ [২৪] (দ্বিতীয় শ্রেণির গঠন = AP2, চরম সঙ্কোচনের জন্য অভিযোজিত)
- with
- যেখানে, = ০.০২৩৩৭ GPa.nm5। হলো ইলেকট্রন সংখ্যা, হলো প্রাথমিক আয়তন এবং ফার্মি গ্যাসের চাপ। সমীকরণটি চরম সঙ্কোচনের সময় সঠিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে। এখন পর্যন্ত কনো সাধারণ কঠিন পদার্থ আবিষ্কার হয় নি যার এর থেকে উচ্চ ক্রম প্রয়োজন হয়।
- অভিযোজিত বহুপদী দশার সমীকরণ [২৪] (তৃতীয় শ্রেণির গঠন = AP3)
- যেখানে হলো সাম্য আয়তন বাল্কের গুনাঙ্ক এবং সাধারণত -২ সম্পর্কিত এবং কখনো কখনো এর দ্বারা গ্রুনাইসেনের স্থিতিমাপের সাথে সম্পর্কিত।
আরও দেখুন
টীকা
তথ্যসূত্র
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:Cite magazine
- ↑ In 1662, he published a second edition of the 1660 book New Experiments Physico-Mechanical, Touching the Spring of the Air, and its Effects with an addendum Whereunto is Added a Defence of the Authors Explication of the Experiments, Against the Obiections of Franciscus Linus and Thomas Hobbes; see J Appl Physiol 98: 31–39, 2005. (Jap.physiology.org Online টেমপ্লেট:ওয়েব আর্কাইভ.)
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ See:
- Mariotte, Essais de Physique, ou mémoires pour servir à la science des choses naturelles, … (Paris, France: E. Michallet, 1679); "Second essai. De la nature de l'air".
- (Mariotte, Edmé), Oeuvres de Mr. Mariotte, de l'Académie royale des sciences; … , vol. 1 (Leiden, Netherlands: P. Vander Aa, 1717); see especially pp. 151–153.
- Mariotte's essay "De la nature de l'air" was reviewed by the French Royal Academy of Sciences in 1679. See: (Anon.) (1733) "Sur la nature de l'air," Histoire de l'Académie Royale des Sciences, 1 : 270–278.
- Mariotte's essay "De la nature de l'air" was also reviewed in the Journal des Sçavans (later: Journal des Savants) on 20 November 1679. See: (Anon.) (20 November 1679) "Essais de physique, … ," Journal des Sçavans, pp. 265–269.
- ↑ Gay-Lussac (1802), from p. 166:
"Si l'on divise l'augmentation totale de volume par le nombre de degrés qui l'ont produite ou par 80, on trouvera, en faisant le volume à la température 0 égal à l'unité, que l'augmentation de volume pour chaque degré est de 1 / 223.33 ou bien de 1 / 266.66 pour chaque degré du thermomètre centrigrade."
If one divides the total increase in volume by the number of degrees that produce it or by 80, one will find, by making the volume at the temperature 0 equal to unity (1), that the increase in volume for each degree is 1 / 223.33 or 1 / 266.66 for each degree of the centigrade thermometer.
From p. 174:
" … elle nous porte, par conséquent, à conclure que tous les gaz et toutes les vapeurs se dilatent également par les mêmes degrés de chaleur."
… it leads us, consequently, to conclude that all gases and all vapors expand equally [when subjected to] the same degrees of heat. - ↑ টেমপ্লেট:Citation.
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি Facsimile at the Bibliothèque nationale de France (pp. 153–90).
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ Macdonald, J. R. (1966). Some simple isothermal equations of state. Reviews of Modern Physics, 38(4), 669.
- ↑ টেমপ্লেট:Citation
- ↑ টেমপ্লেট:Citation
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ ২৪.০ ২৪.১ টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
- ↑ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি