মহাকর্ষীয় পরকলা

testwiki থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

টেমপ্লেট:ভাঁজযোগ্য তালিকার সাথে পার্শ্বদণ্ড

একটি আলোক উৎস একটি মহাকর্ষীয় পরকলার (চিত্রটির কেন্দ্রের বিন্দু ভর) পাশ দিয়ে যাচ্ছে। পরকলা ছাড়াই দেখা যাওয়ায় পান্না রঙের বৃত্তটি আলোক উৎস এবং সাদা দাগগুলি আলোক উৎসটির বিম্ব (আইনস্টাইন বলয় দেখুন)।

মহাকর্ষীয় পরকলা হলো একটি দূরবর্তী আলোক উৎস ও একটি পর্যবেক্ষকের মাঝে অবস্থিত ভরের এমন এক ধরনের বিন্যাস (যেমন ছায়াপথ স্তবক) যা উৎস হতে পর্যবেক্ষকের দিকে আলো যাওয়ার সময় একে বাঁকিয়ে দিতে পারে। এই প্রভাবটি মহাকর্ষীয় পরকলায়ন হিসেবে পরিচিত। এই ক্রিয়ায় আলোর অবনমনের গণনা আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার অন্যতম বিষয়।[][] (চিরায়ত পদার্থবিদ্যায়ও আলোক অবনমনের হিসাব করা হয়েছিল কিন্তু, তার মান সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রদত্ত মানের মাত্র অর্ধেকই ছিলো।)[]

যদিও, আইনস্টাইন এই বিষয়ে ১৯১২ সালে অপ্রকাশিত হিসাব করেন কিন্তু ওরেস্টেস খোভলসন ড্যানিলোভিচ (১৯২৪) ও ফ্র‍্যান্টিসেক লিঙ্ককে (১৯৩৬) এই ক্রিয়াটি প্রথম প্রকাশ করার জন্য সম্মান জানানো হয়।[][][] যাইহোক, এই প্রভাবটি অধিকাংশ স্থলে আইনস্টাইনের সাথে যুক্ত যিনি ১৯৩৬ সালে এবিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন।

ফ্রিট্‌জ জুইকি ১৯৩৭ সালে বলেন যে, ছায়াপথ স্তবকগুলিও এই প্রভাবের কারণে মহাকর্ষীয় পরকলা হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে, ১৯৭৯ সালে জমজ আপাত-নক্ষত্র এসবিএস ০৯৫৭+৫৬১ কে পর্যবেক্ষণের আগে এই প্রভাব নিশ্চিতকৃত হয়নি।

বিবরণ

চিত্র:Artist's impression of gravitational lensing of a distant merger.ogv চিত্র:Gravitational lensing of distant star-forming galaxies (schematic) -vid-.webm চিত্র:Gravitational lensing of distant star-forming galaxies (schematic) 2.webm

সাধারণ আপেক্ষিকতা অনুযায়ী, আলো স্থান-কালের বক্রতাকে অনুসরণ করে। তাই একটি বিশাল বস্তুকে অতিক্রম করার সময় আলো বেঁকে যায়। অর্থাৎ উৎস থেকে আলো বেঁকে পর্যবেক্ষকের চোখে পৌছায়, ঠিক সাধারণ পরকলার মত। তবে, সাধারণ পরকলার মত না হয়ে, মহাকর্ষীয় পরকলাগুলি এদের কেন্দ্রের সবচেয়ে কাছ দিয়ে যাওয়া আলোক রশ্মির সর্বোচ্চ এবং কেন্দ্রের সবচেয়ে দূরবর্তী আলোক রশ্মির সর্বনিম্ন বিচ্যুতি ঘটায়। ফলস্বরূপ, একটি মহাকর্ষীয় পরকলার কোনও একক কেন্দ্রবিন্দু নেই, তবে একটি অভিসারী অক্ষ রয়েছে। মহাকর্ষীয় আলোক প্রতিসরণের ক্ষেত্রে "লেন্স" কথাটি প্রথম স্যার অলিভার জোসেফ লজ কর্তৃক ব্যবহৃত হয় যিনি এসম্পর্কে বলেন, "এটি বলা বৈধ নয় যে সৌর মহাকর্ষ ক্ষেত্রটি পরকলার মতো কাজ করে, কারণ এর কোনও ফোকাস দূরত্ব নেই।"[] যদি আলোক উৎস, লেন্স এবং পরযবেক্ষক একটি সরল রেখায় অবস্থান করে, তাহলে পর্যবেক্ষকের কাছে আলোক উৎসটিকে বৃহৎ লেন্সকে ঘিরে একটি বলয় মনে হবে। যদি, রেখায় কোনো ত্রুটি থাকে (সরল রৈখিক না হলে) তাহলে পর্যবেক্ষক একটি ধনু আকৃতি দেখতে পাবে। আরো সাধারণভাবে, যেখানে লেন্সিং ভরটি জটিল এবং স্থান-কাল স্থান-কালের বৃত্তাকার বিকৃতি না ঘটায় তাহলে উৎসটি লেন্সের চারপাশে আংশিক ধনু আকৃতির প্রতিরূপ সৃষ্টি করবে। সে ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক একই উৎসেরই একাধিক বিকৃত বিম্ব দেখতে পারে; বিম্বের সংখ্যা এবং আকার উৎস, লেন্স ও পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক অবস্থান এবং লেন্স কর্তৃক স্থান-কালের বিকৃতির উপর নির্ভর করে।[]

মহাকর্ষীয় লেন্সিংএর তিনটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি বিদ্যমানঃ[][]

১. সবল মহাকর্ষীয় লেন্সিং: এখানে বিকৃতি যেমন আইনস্টাইন বলয়, ধনু এবং একাধিক বিম্বের সৃষ্টি সহজেই দৃশ্যমান হয়।

২. দূর্বল মহাকর্ষীয় লেন্সিং: এক্ষেত্রে উৎসের বিকৃতি অনেক ছোট এবং কেবলমাত্র কয়েক শতাংশের সুসংগত বিকৃতি খুঁজে পাওয়ার জন্য বিশাল পরিমাণ উৎসের তথ্যের পরিসংখ্যানমূলক বিশ্লেষণ করতে হয়। পরিসংখ্যানগতভাবে, লেন্সিংটি লেন্সের কেন্দ্রের দিকে উলম্বভাবে উৎসকে প্রসারিত হিসাবে দেখায়। বিশাল পরিমাণে দূরবর্তী ছায়াপথ সমূহের আকার ও ওরিয়েন্টেশনের বিশ্লেষণ করে এদের ওরিয়েন্টেশনের একটি গড় করা যায় যা ব্যবহার করে লেন্সিং ক্ষেত্রটির যেকোনো অবস্থানের শিয়ার হিসাব করা যায়। এটি, পালাক্রমে, এই অঞ্চলে ভর বিন্যাস পুনর্গঠন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে: বিশেষত, তমোপদার্থের বিন্যাস পুনর্গঠন করা যেতে পারে। যেহেতু অন্তর্নিহিত ছায়াপথগুলি উপবৃত্তাকার এবং দূর্বল লেন্সিং সংকেত খুবই ক্ষীণ, তাই এ ধরনের জরিপে বহু সংখ্যক ছায়াপথকে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে নিয়মানুগ ভুল গুলিকে এড়িয়ে চলতে হয়। ল্যামডা-সিডিএম নকশার বিকাশ, অন্যান্য মহাকর্ষীয় পর্যবেক্ষণের মাঝে সমন্বয় সাধন সহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্বল লেন্সিং এর গুরুত্ব অনেক।মহাবিশ্বে তমোপদার্থ তমোপদার্থের বিনিময় সম্পর্কীত গবেষণায় এদের ভূমিকা রয়েছে।[১০]

৩. মহাকর্ষীয় অনুলেন্সিং: এখানে আকৃতির কোনো বিকৃতি হয় না কিন্তু সময়ের সাথে উৎস হতে প্রাপ্ত আলোর পরিমাণে তারতম্য ঘটে। সাধারণ ক্ষেত্রে, লেন্সটি আকাশগঙ্গা ছায়াপথের একটি তারা এবং আলোক উৎসটি কোনো দূরবর্তী ছায়াপথের একটি তারা হতে পারে; কিছু ক্ষেত্রে তা আরো দূরবর্তী আপাত-নক্ষত্র হতে পারে। এই প্রভাবটি ক্ষীণ, এমনকি সৌর ভরের ১০০ বিলিয়ন গুণ ভরসম্পন্ন ছায়াপথও ধনুসেকেন্ডের ব্যবধানে একাধিক বিম্ব তৈরী করবে। ছায়াপথ স্তবকগুলির ক্ষেত্রে কয়েক ধনুমিনিটের ব্যবধান থাকতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই লেন্স ও উৎস বেশ দূরবর্তী হয়; আমাদের গ্যালাক্সি থেকে বেশ কয়েক শত মেগাপারসেক দূরে।অনুলেন্সিং অন্যান্য নক্ষত্রের কক্ষপথের গ্রহ সনাক্তকরণেও ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে একটি তারা লেন্স হিসেবে কাজ করে এবং অন্যটি উৎস হিসেবে কাজ করে। যখন, লেন্সের আশেপাশে উৎসের বিম্ব তৈরী হয় তখন তারার সাথে সাথে আরো কিছু চ্যুতি দেখা যায় যা গ্রহের ইঙ্গিত দেয়। এমনকি, অপেশাদার টেলিস্কোপও এদের সনাক্ত করতে পারে।[১১]

মহাকর্ষীয় লেন্সিং শুধুমাত্র দৃশ্যমান আলকেই নয় বরং সকল প্রকার তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণেই কাজ করে। মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ সহ গ্যালাক্সি জড়িপেও দূর্বল লেন্সিং ব্যবহার করা হয়। সবল লেন্সিংকে বেতারএক্স-রেতেও সনাক্ত করা হয়েছে। যদি কোনো সবল লেন্সিংএর মাধ্যমে একাধিক বিম্ব সৃষ্ট হয় তাহলে আলোর দুইটি পথের মাঝের আপেক্ষিক সময় বিলম্ব থাকে; অর্থাৎ একটি বিম্বে লেন্সেড বস্তুটি আগে ও অন্যটিতে পরে দেখা যাবে। মহাকর্ষীয় লেন্সিং এর প্রক্রিয়াটি অনেকটা একটি বিশাল আতশ কাঁচ দিয়ে দেখার মত। এক্ষেত্রে লেন্স আলোক উৎসকে বিবর্ধিত করে এবং বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে সনাক্তযগ্য নয় এমন বস্তুকেও (যেমন প্রথমদিকের ছায়াপথ) গবেষণা যোগ্য করে।[১২] আবার, যেহেতু, তমোপদার্থ দেখা যায় না কিন্তু এদের ভর আছে, অর্থাৎ এরা লেন্স হিসেবে কাজ করতে পারে, তাই মহাকর্ষীয় লেন্সিং ব্যবহার করে আমরা মহাবিশ্বে তমোপদার্থের ছকও অঙ্কন করেছি।[১১]

ইতিহাস

আর্থার স্ট্যানলি এডিংটনের ১৯১৯ সালের সূর্যগ্রহণ গবেষণার একটি চিত্র যা ১৯২০ সালে এর সফলতা ঘোষণার সময় প্রকাশিত হয়।

১৭৮৪ সালে হেনরি ক্যাভেন্ডিশ (একটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিতে) এবং ১৮০১ সালে জোহান জর্জি ফন সল্ডনার (১৮০৪ সালে প্রকাশিত) দেখান যে নিউটনীয় মহাকর্ষ বলে যে, একটি বৃহৎ বস্তুর কাছাকাছি নক্ষত্রালোক বেঁকে যাবে যা ইতিমধ্যেই আইজাক নিউটন কর্তৃক ১৭০৪ সালে অপটিএক্সের ১ নং কুয়েরিতে অনুমিত হয়েছিল।[১৩][১৪] সল্ডনারের কাজের ভিত্তি ছিলো নিউটনের গতির সূত্র, নিউটনীয় মহাকর্ষ এবং এই ধারণা যে আলো দ্রুত গতিসম্পন্ন কণার মত ব্যবহার করে।[১৫] সল্ডনার আলোর বাঁকনের যেই মান পান, ১৯১১ সালে আইনস্টাইনও সাম্য সূত্রের ভিত্তিতে সেই একই মান পান।[] তবে, আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে সাধারণ আপেক্ষিকতার পূর্ণতা দানের সময় লক্ষ্য করেন, তার (সল্ডনারেরও) ১৯১১ সালের মানটি সঠিক মানের মাত্র অর্ধেকই ছিলো। আইনস্টাইনই প্রথম যিনি আলোর বাঁনের সঠিক মান নির্ণয় করেন।[১৬]

সল্ডনারের সমীকরণটি (১৯১১সালের আইনস্টাইনের সমীকরণও) এরকম ছিলোঃ

α=2GMrc2

কিন্তু ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন প্রদত্ত সঠিক সমীকরণে α এর মান ছিলো পূর্বের সমীকরণের দ্বিগুণ অর্থাৎঃ

α=4GMbc2

যেখানে,

α হলো বিচ্যুতি কোণ,
G হলো মহাকর্ষ ধ্রুবক,
M হলো লেন্সের ভর,
c হলো আলোর গতিবেগ,
b হলো , প্রভাব পরামিতি[১৭]

১৯১৯ সালের ২৯ মে-তে সঙ্ঘটিত সূর্যগ্রহণ-এর সময় যখন তারাগুলি খ-গোলকে সূর্যের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখন তাদের অবস্থান পরিবর্তন লক্ষ্য করার মাধ্যমে প্রথম আলোক বিচ্যুতির পর্যবেক্ষণ করা হয়। আর্থার স্ট্যানলি এডিংটন, ফ্র‍্যাঙ্ক ওয়াটসন ডাইসন ও তাদের সহযোগীরা এই পর্যবেক্ষণটি করেন। সূর্যগ্রহণটি এসময় সূর্যের আশেপাশের তারাগুলিকে দেখার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পর্যবেক্ষণটি একই সময়ে ব্রাজিলের সোব্রাল, সিয়েরা ও আফ্রিকার সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি থেকে করা হয়। পর্যবেক্ষণটি দেখিয়েছিলো যে, সূর্যের কাছাকাছি অতিক্রমরত নাক্ষত্রিক আলো সামান্য বেঁকে গিয়েছিলো যার ফলে তারাগুলিকে সামান্য স্থানচ্যুত দেখা গিয়েছিলো।

তবে, ১৯৭৯ সালের আগে মহাকর্ষীয় লেন্স আবিষ্কৃত হয় নি। ১৯৭৯ সালে দুইটি আপাত-নক্ষত্র আবিষ্কৃত হয় যারা একে অপরের খুব কাছাকাছি ছিলো। তাই এদের জমজ আপাত-নক্ষত্র নাম দেওয়া হয়। ডেনিস ওয়ালশ, বব কার্সওয়েল এবং রে ওয়েম্যান KPNO ২.১ মিটার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে একে আবিষ্কার করেন। পরে দেখা যায় যে আপাত-নক্ষত্র দুটি আসলে একই বস্তুর একটি ছায়াপথের মহাকর্ষ ঘটিত বিম্ব ছিলো।[১০][১৮][১৯][২০]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:সূত্র তালিকা

গ্রন্থপঞ্জি
তদতিরিক্ত পড়ুন

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:কমন্স বিষয়শ্রেণী

  1. টেমপ্লেট:সংবাদ উদ্ধৃতি
  2. টেমপ্লেট:সংবাদ উদ্ধৃতি
  3. Cf. টেমপ্লেট:Harvnb for the classic early measurements by the Eddington expeditions; for an overview of more recent measurements, see টেমপ্লেট:Harvnb. For the most precise direct modern observations using quasars, cf. টেমপ্লেট:Harvnb
  4. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  5. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  6. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  7. ৭.০ ৭.১ ৭.২ টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  8. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  9. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি
  10. ১০.০ ১০.১ টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  11. ১১.০ ১১.১ টেমপ্লেট:সংবাদ উদ্ধৃতি
  12. টেমপ্লেট:Cite
  13. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  14. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি (Opticks was originally published in 1704).
  15. টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতি
  16. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  17. টেমপ্লেট:Cite
  18. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  19. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি
  20. টেমপ্লেট:সাময়িকী উদ্ধৃতি